অন্যরকম বৈশাখ
-------ওই যে মেরুন কালারটা দেখি...
একই কথা অামার সাথে অারেকজন বললো। নারীকণ্ঠ.! অামি তাঁকালাম,
সে হেসে বললো,
---------ওকে। ঠিক অাছে, অাপনিই নিন।
অামি মাথা নাড়লাম,
-------- না, না অাপনিই নিন।অামি এসেছি নোভা'র জন্য শাড়ি কিনতে। নোভা বারবার করে বলেছে,
--------শোনো, টিপিকাল সাদা, লালপেড়ে শাড়ি অানবে না। খবরদার! মেরুন বডি; সোনালী পাড়, অাঁচলে স্পাইরাল সোনালী সুতোর কাজ যাতে থাকে। এর বাইরে অন্যরকম শাড়ি অানলে, সেই শাড়ি কেটে অামি তোমায় শার্ট বানিয়ে দেবো।নোভার বিশ্বাস নেই, দেখা যাবে সে সত্যি সত্যিই অামাকে শার্ট বানিয়ে দিয়েছে। একবার ওকে একটা তাঁতের জামা দিয়েছিলাম, পছন্দ হয় নি বলে সে ওটা দিয়ে অামার রিডিং টেবিলের কভার বানিয়ে দিলো। এখনো সেটা দেখলে অাৎকে উঠি অামি।
---------অাপনি নিয়ে নিন এটা, অামি অন্য কালার দেখছি তো।
অামি মেয়েটির দিকে ভালো করে তাঁকালাম,
বেগুনি সাদার মিশেলে অনেক দিনের মলিন কিন্তু পরিপাটি সুতির শাড়ি পড়নে। হাতে মিলিয়ে দু-গাছি চুড়ি। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। লম্বা বিণুনির বেবী হেয়ারগুলো কানের কাছে অবাধ্য খেলছে, এক গালে ডিম্পল। না না, পারমানেন্ট গর্ত, ডিম্পলের মতই অার নাকের মাঝ বরাবর একটা কথাবলা তিল।
পায়ে কমদামি স্লিপার। অামার তাঁকানোতে সে অাড়স্ট বোধ করলো বোধহয়। পিঠে গড়িয়ে থাকা অাঁচলটা টেনে তুললো।
অামার ধ্যাঁন ভাঙলো, দোকানদারের ডাকে,
--------স্যার, অাপনাকে অন্য কি দেখাবো??
মেয়েটি কথা বললো অাবার,
---------অামি বলছি তো এটা নেবো না। অামি অারেকটু কম দামের মধ্যে দেখবো।
ওই যে, সবুজ রংটা...
--------নিয়ে নিতে পারেন কিন্তু। অামার অত জরুরি নয়।
--------নাহ্। অামার বাজেট কম, হাজার বারশো তে কিনবো অামি। এটা দু-হাজার পেরিয়ে তো।অামার এত সাহস কোথা থেকে এলো জানিনা, অামি ফট করে বলে ফেললাম,
----------দাম দিচ্ছি অামি। এই শাড়িটাতে খুব ভালো দেখাবে অাপনাকে।মেয়েটি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।
উঠে দাঁড়াতে গিয়ে বসলো ।
--------অামি অাসলে অামার বৌদির জন্য শাড়ি কিনতে এসেছি।অামার জন্য নয়।
---------বৌদির জন্য কিনতে তো মানা করছি না, শুধু এটা অাপনার জন্য নিতে বলছি।মেয়েটি অাবারও উঠে দাঁড়াতে গিয়ে বসে পাড়লো।
অামি অাবার কথা বললাম,
--------অাপনার নিজের জন্য কিনছেন না কেনো??কাল বৈশাখ, অাপনার তো শাড়ি কেনা মাস্ট। ধরুন, এটা অাপনার জন্য ;অামার তরফ থেকে উপহার।মেয়েটি হাঁ করে তাঁকিয়ে অাছে। অামি দোকানীকে শাড়ি প্যাকেট করে দিতে বললাম। বিল মিটিয়ে সিগারেট ধরাতে ধরাতে বের হয়ে এলাম।
শাড়ির প্যাকেট হাতে মেয়েটি অামার পেছনে প্রায় ছুটে এলো,
----------এই যে, ভাই শুনুন, শুনুননা, অামার কাছে এই তেরোশো টাকা অাছে, এটা রাখুন প্লিজ। বাকিটা আমি,...
মেয়েটি একটু ভাবলো, -----অাপনি অামাকে অাপনার ঠিকানাটা যদি দিতেন।অামি অাগামী মাসে সাত-অাট তারিখের মাঝেই...অামি সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে একটু ধমকের স্বরে বললাম,
--------শোনো মেয়ে, এই শাড়িটা আমি তোমাকে পছন্দ করে দিয়েছি। বুঝলে? কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে এই শাড়িটা পড়ে সাঁজবে। যদি অামার কথা না শোনো, অামাকে তো চেনো না,
অামি মুখটা একটু এগিয়ে নিয়ে চোখ বড়বড় করে বললাম,
আমি ঠিক সাইজ করে ফেলবো তোমাকে। কমপ্লিট সাইজ।মেয়েটি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
---------অাপনি কে?? এরকম কেনো করছেন??অামি জবাব না দিয়ে চলে এলাম। পছন্দের শাড়ি কিনে না দেওয়ায় নোভা পহেলা বৈশাখের সারাদিন অামায় ফোন করলো না। অার অামি??
সারাদিন, একটু ভয়ার্ত, একটু জড়োসড়ো, একটু অপ্রস্তুত সেই মুখটার কথা ভেবে ভেবে দিন পার করলাম।।সন্ধ্যার পর নোভা একগুচ্ছ রজণীগন্ধা নিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে অামার মেসে এলো,
---------মামুন, তুমি এত পাষাণ হতে পারলে বলো,,সারাদিন অামি নাহয় রাগে ফোন করিনি, তুমি কেনো করলে না?? তোমার কি হয়েছে বলোতো?? অামাকে রাগিয়ে দিলে তোমার শান্তি তাই না??
অামি কৌতূহলী গলায় জিজ্ঞেস করলাম,
--------অাচ্ছা নোভা, অামি যদি ভিন্নধর্মী হতাম, ধরো হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান?? তখন কি তুমি অামায় এমন করে ভালোবাসতে?? বলো না প্লিজ....নোভা অামার দিকে কিছুক্ষণ চুপচাপ রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে বললো,
----------তুমি যে কি বোকা না, মামুন?? ভালোবাসা কি ধর্ম দেখে হয় নাকি?? ভালোবাসা হয় মানুষে মানুষে। শুধু অন্য ধর্ম কেনো, অন্য পৃথিবীর কেউ হলেও ভালোবাসা অাটকে থাকে না। ভালোবাসা নিজেই তো একটা ধর্ম।নোভার কথা শেষ হবার অাগেই অামি ছুটলাম.... সেই দোকানে যেতে হবে অামাকে।এক্ষুনি যেতে হবে।
অামি কি তাঁকে খুঁজে পাবো???
YOU ARE READING
অন্যরকম বৈশাখ
Short Storyঅন্যরকম অাচ্ছা নোভা, অামি যদি ভিন্নধর্মী হতাম, ধরো হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান?? তখন কি তুমি অামায় এমন করে ভালোবাসতে?? বলো না প্লিজ....