বেল বাজতেই ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিল সামারা। “আপুনি! নাইমুল ভাইয়া এসেছে” বলে চিৎকার করে ঘর মাথায় তুলল। “তো আমি কি করবো” ধমক দিল সাজিরা।
সাজিরা ও সামারা দুই বোন। ওদের বড় ভাই সাজিদ থাকে আমেরিকাতে। সাজিরা কলেজে আর সামারা পড়ে স্কুলে। তাদের বাসা নিকেতনে। নাইমুল তাদের ফুপাত ভাই। পড়ে ভার্সিটিতে। মাঝে মাঝেই সাজিরাদের বাসায় এসে আড্ডা দিয়ে যায়।
ঘরে ঢুকেই সাজিরার রুমে কড়া নাড়ল নাইমুল। অনুমতি না নিয়ে ঢুকে পড়ল ভিতরে।
“ঘরের ভিতর এরকম প্যাঁচার মতো মূখ করে বসে আছিস কেন? বৃষ্টি হবে। ছাদে চলে আয়।” বলল নাইমুল।
“আমার বৃষ্টিতে ভেজার কোনো শখ নাই। আর তুমি এখানে কি করছ? আইসক্রিম খাওয়া এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল?” ঝাঁজের সঙ্গে বলল সাজিরা।
“সে কি! তোকে নেই নাই বলে এখনো রাগ করে আছিস। আমরা ফ্রেন্ডরা মিলে গিয়েছিলাম। তুই পিচ্চি মানুষ আইসক্রিম ফেস্টে আমাদের সাথে গিয়ে কি করবি।
“ও, তোমাদের সাথে আইসক্রিম ফেস্টে যেতে চাইলে আমি পিচ্চি হয়ে যাই।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। আজকের মতো মাফ করে দে। কান ধরছি। নেক্সট টাইম যতো ফেস্ট হবে সবখানে তোকে নিয়ে যাব। এখন মামির কাছে আমাকে বকা খাওয়াস না।”
“মাফ করতে পারি এক শর্তে। আমাকে এখন জিলাপী খাওয়াতে হবে।”
“জিলাপী! তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে! এই সময় আমি জিলাপী কোথায় পাবো? তুই আইসক্রিম খেতে পারিস নাই তাই তোর মন খারাপ। ঠিক আছে আমি তোকে আইসক্রিম খাওয়াই। একটা না এক ডজন খাওয়াবো। কিন্তু কোথায় আইসক্রিম আর কোথায় জিলাপী।”
“জিলাপী শুনেই আঁতকে উঠলে। আমি তো এখনো বলি নাই কোথাকার জিলাপী খাবো।”
“কোথাকার মানে?”
“আমি পুরান ঢাকার জিলাপী খাবো। অন্য কোনো জায়গা থেকে আনলে হবে না। যে দোকানের জিলাপী তার নাম ও ঠিকানা প্যাকেটে লেখা থাকবে।”
“তুই কি মনে করেছিস আমি এখন পুরান ঢাকা যাব তোর জন্য জিলাপী আনতে?”
“আমি তো তোমাকে যেতে বলছি না। বললাম তোমার অপরাধ মাফ করব এই শর্তে। এখন তুমি যদি অপরাধী হয়ে থাকতে চাও তাহলে আমি কি করতে পারি।”
“সোজাসুজি বললেই পারিস আমার চেহারা তোর দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে না তাই যেন বাসা থেকে বের হয়ে যাই। এতো প্যাঁচানোর কোন দরকার ছিল না।”
“তুমি আমাকে ছাড়া আইসক্রিম ফেস্টে গিয়েছ। সেজন্য এখন তুমি বাসায় জিলাপী ফেস্ট করবে। করতে না পারলে করবা না। আমার কোন ইচ্ছার দাম যে তোমার কাছে নাই তা আমি জানি।”
“ঠিক আছে, আমি চলে যাচ্ছি। পরে আবার ফোন করে মামি যেন আমাকে বকা না দেয়।”
এই বলে নাইমুল চলে গেল। এদিকে সে চলে যাওয়ার পর সাজিরার মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল। এভাবে খারাপ ব্যবহার না করলেও হতো। কিন্তু এতো করে বলার পরও কেন সাজিরাকে নিয়ে গেল না।
এদিকে নাইমুল চলে যাওয়ার পরই শুরু হলো ঝূম বৃষ্টি। তখন সাজিরার আফসোস হতে লাগল। ইশ! এখন বেচারা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাসায় যাবে। এমন ছেলে যে সাথে একটা ছাতাও রাখে না। সাজিরার সাথে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য এসেছিল। সে থাকলে একসাথে ভেজা যেত।
রাত এগারটা। বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি। সামারা ঘুমিয়ে পরেছে। সাজিরা জানালার পাশে বসে বাইরে আনমনে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ বেল বাজলো।
“এতো রাতে কে এলো দেখত, সাজিরা” মা বলল।
সাজিরা দরজা খূলে দেখল নাইমুল দাঁড়িয়ে। বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। হাতে জিলাপীর প্যাকেট। পুরান ঢাকার চকবাজারের জিলাপী।