আদনান আহমেদ মারা যাওয়াতে আকবর আলিকে অভিযানের দলপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা কয়েকজনই হলাম সবচেয়ে বেশী পরিক্ষিত, পর্যবেক্ষিত আর প্রশিক্ষিত মানুষের একটি দল। মঙ্গলে প্রথম অভিযান মোটেই ছেলেখেলা নয়, এই দীর্ঘ যাত্রায় দলের সদস্যদের কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরুক কিম্বা মানসিক স্থিরতা হারিয়ে ফেলুক এটাও কাম্য নয় অবশ্যই – আর সবগুলো পরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণে আদনান আহমেদ আমাদের সবার মধ্যে সেরা হয়েছিল। তারপর, অভিযান শুরুর মাত্র সাত দিন আগে, সে মারা যায়। হাসপাতালের প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা ছিল হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু, কিন্তু চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে তারা আদনান আহমেদের মৃত্যুর যথার্থ কোন কারণ আসলে পায়নি। এমনকি, মৃত্যুর পরেও তার শারীরিক এবং মানসিক দৃঢ়তা ছিল বেচে থাকার সময় যেমন নিখুঁত ঠিক তেমন। আমার মতে, তার মৃত্যুর আসল কারণ, যে বিশাল দায়িত্বের বোঝা তার কাধে চেপে বসেছিল সেটা, মানবজাতির আশা, অভিযানের দলপতি, নতুন এক বিশ্ব, নতুন এক সূচনা, এই সব কিছু মিলিয়ে নিজেকে সে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। সুতরাং, অনুমান করে নিয়েছিলাম যে আকবর আলি নিশ্চয়ই আরো বেশী অভিজ্ঞ আর দক্ষ। কিন্তু, তিনমাসের যাত্রায়, আমরা সবাই আকবর আলির চক্ষুশূলে পরিনত হয়েছি। সে মনে হয় ধরেই নিয়েছে যে এই অভিযানে যতো সমস্যা তার সামনে উপস্থিত হয়েছে বা হবে সগুলোর জন্য আমরাই দায়ী। মহাকাশ এমনি - এখানে যে কোন কিছুই ঘটতে পারে। আর তাই আমি যখন দলপতির সাথে দেখা করতে গেলাম তখন তার হতাশ দীর্ঘশ্বাস আর চোখ-মুখের ভাব দেখে মোটেও অবাক হলাম না।
"আবার কি হলো?" জিজ্ঞেস করল সে।
"আমার মনে হয় এই মহাকাশযানে একটা ভুত আছে," আমি জবাব দিলাম।
তথ্যটা দিয়ে আমি তাকে কৃতার্থ করলাম। কিন্তু তাকে মোটেও চমকিত মনে হলো না। বরং, আমার কাধের উপর দিয়ে পিছনে তাকালো, আমার দিকে আবার ফিরে তাকানোর আগে, নিশ্চিত হয়ে নিল যে আমরা এই মুহূর্তে একা আছি।
"সুইচ বন্ধ করেছ তুমি?" সে জিজ্ঞেস করল।
"অবশ্যই," বিরক্ত হয়ে জবাব দিলাম আমি। "তোমার কি মনে হয় যা বলছি সেটা পৃথিবীর নিয়ন্ত্রন কেন্দ্রের ওদেরকেও শোনাতে চাই?"