দেয়ালে আঁটা পোস্টারগুলো দেখে আমার মুখে থুতু জমে। এলাকায় এলাকায় ছেয়ে গেছে লিফলেট আর পোস্টার। পোস্টারে নাম নাবিল হোসেন এর। নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে এবার।
তার ক্ষমতার দৌড় বেশ ছড়ানো তা স্বীকার করি। কিছুক্ষণ পর পর রাস্তায় নির্বাচনী প্রচারণার ভারী লোক সমাবেশ দেখে তা যে কেউ বলে দিতে পারবে।
আমার নাম জানানোর প্রয়োজন বোধ করছি না। আপাতত আমার আসল পরিচয় আমি এক ধর্ষিতার প্রেমিক।
আর এই ধর্ষিতার ধর্ষক খানিকক্ষন বাদে বাদে আমার সামনে দিয়ে তার নির্বাচনী প্রচারণা করে যাচ্ছে। তার গলায় ফুলের মালা।
মজার বিষয় সাধু হোক বা ধর্ষক। গলায় পড়া ফুলের মালার গন্ধ দুইজন এর নাকে একইরকম লাগে।
তবে ভিন্নও হতে পারে৷ কে জানে?
আমার প্রেমিকার নাম তিথি। নামটা তাকে ভারী মানায়। মাঝেমধ্যেই মনে হয় নামটা অন্য কারো হলে এতোটা মানাত না।
আমাদের সম্পর্ক দুই বছরের। তবে এখনো সেই সম্পর্ক টিকে আছে কিনা আমার জানা নেই। তিথির জানা থাকলেও থাকতে পারে।
তিথির মধ্যবিত্ত পরিবার। নিজের খরচ নিজেকেই চালাতে হতো। তাই বিদ্যা বেঁচে খাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় সে দেখেনি।
আমি সবসময়ই বলতাম, "আমার তো টাকার অভাব নেই তিথি। নাহয় আমিই তোমার খরচ গুলো দিলাম? এইটুকুও কি করতে পারি না তোমার জন্য?
সে প্রত্যেকবারই হেসে বলতো, "বিয়ের পর তোমার এতো টাকা খরচ করবো যে কেঁদে কুল পাবে না। আপাতত তোমাকে একটু ব্রেক দিলাম।"
আমি জানতাম তিথির আত্নসম্মান খুব। তবে অভিমান হতো মাঝেমধ্যে। আমি কি এতোটাই পর?
প্রায় দিনই তিনটা চারটা টিউশনি করে তিথি এলাকার রাস্তা দিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরত। জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত সাধারণ মেয়েটাকে যে চায়ের দোকানের ছেলেরা প্রায় রোজ রোজ উত্তক্ত করতো তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তিথি খুব শক্ত মেয়ে। এই নিয়ে তাকে তেমন দুর্বল হতে দেখিনি। তবে মাঝেমধ্যে আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদতো। আবার খানিকক্ষণ চোখমুখ মুছে সহজ হয়ে যেতো। আমি খুব অবাক হতাম তখন। মনে মনে ধন্যবাদ জানাতাম সৃষ্টিকর্তা কে মেয়ে হয়ে জন্মাইনি বলে।