সমাজের নগ্ন রূপ

463 3 5
                                    

সমাজের নগ্ন রূপ
                 পর্ব (০১ )

আজ তিনদিন হলো শতাব্দী কিছুই বলছে না। চোখে মুখে কেমন একটা দুঃখের রঙ লেগে রয়েছে। অনেক করে ওর মন ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করলাম, ফিকে হাসির প্রলেপ ফুটে ওঠে ওর ঠোঁটে  আর নির্লিপ্ত চোখে চেয়ে থাকে জানালার বাইরে বৃষ্টি ঝরা আকাশ পানে।

আমার বিয়ে হয়ে এ বাড়িতে আসার পর মাত্র দিন কয়েকের জন্য দেখেছিলাম ওকে আর এটুকু সময়ে বুঝেছিলাম মেয়েটা 'বাঁধন হারা প্রাণ'। ফুটন্ত যৌবনে দুধে আলতায় মেশানো গায়ের রঙের সাথে  উজ্জ্বল দু'খানা চোখ যেন কত কথা বলতে চায়। সেই মেয়েটি বিয়ের দু'মাস পরেই পূজার বাসি ফুলের মতো কেমন হয়ে উঠেছে।
অনেক করে জিজ্ঞেস করলাম, " কি হয়েছে বলো, আমি তো তোমার বন্ধুর মতোই। কাউকে বলবো না, নির্ভয়ে থাকো। আমি তোমার মুখে আগের মতোই হাসি দেখতে চাই।''

বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলায় দুলতে থাকা শতাব্দীর চোখ দুটো ক্ষণিকেই জলে ভরে ওঠে। কিছু বলার জন্য ঠোঁট দুটো কেঁপে উঠলেও আবার অজানা কারণে চুপ থেকে যায় সে।
মুখ ফিরিয়ে দ্রুত পায়ে বাথরুমের দিকে এগিয়ে যায় সে। বুঝতে পারলাম চোখের জল লুকোনোর জন্য নিজেকে আড়াল করতে চেয়েছে। আমি জেদ করলাম না, ওকে ওর মতো সময় কাটানোর জন্য একলা ছেড়ে দিয়ে বাড়ির কাজে লেগে পড়লাম। তবু মন পড়ে রইলো শতাব্দীর দিকেই।

না, দুপুরের সব কাজ শেষ করে বিকেলে জানতেই হবে শতাব্দী কেন মনমরা।

দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে বিছানায় একটু গা মেলেছি, অমনি মনে পড়ে গেল শতাব্দীর কথা।
নানান প্রশ্ন মনে ভীড় জমাতে শুরু করে। শতাব্দীর অন্য কারো সাথে প্রেম ঘটিত সমস্যা নয় তো? না না, তা হয়ে থাকলে একগাল লজ্জা রাঙানো মুখ নিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতো না।
তাহলে কি দেনা পাওনা ? তা বাপু ওরা যা চেয়েছিল, তার ঢের বেশি আমরা দিয়েছি ননদের বিয়েতে। কৈ আবার কোনো দাবি দাওয়া নিয়ে তো কিছু কথা ওঠেনি।
অঙ্ক মেলে না।

তাহলে কি ননদায় সুবিধের মানুষ নয়? অত্যাচার করে? ইসস ! এরকম ফুলকুমারী বউ পেয়েও কে অত্যাচার করবে ! আমার মন সায় দিচ্ছে না। যাই দেখি শতাব্দীর মুখে যদি কিছু কথা ফোটাতে পারি।

কৈ গো শুয়ে পড়লে নাকি? এলুম একটু তোমার সাথে গপ্পো সপ্পো করতে। শশুর বাড়িতে দুমাস কেমন করে কাটালে... শুনতে চাই তোমার সব গল্প... ফুলশয্যা থেকে মধুচন্দ্রিমা অবধি...

আমার আবার ফুলশয্যা ! কি হবে সেই গল্প শুনে?

-"ও মা ! শোনাবে না ? পুরুষের প্রথম স্পর্শ, চুম্বন, আদর পেতে পেতে কখন মাখনে ছুরি চালিয়ে দেয়, ভালোবাসার সেই মধুর কাহিনি প্লিজ বলো না গো আমায়। বন্ধু ভেবেই শেয়ার করো, আমিও বলবো সব... সব। অতীত বর্তমান সব বলবো, কথা দিলাম।

-না গো বৌদি, সেরকম কিছু না। বলার মতো তেমন কিছু নেই।

- ও মা ! বলো কি !? তোমাদের ফাস্ট নাইটে কিছু হয়নি? তাহলে ক'দিন পর কুতুবমিনারে চেপেছিলে? তুমি শেয়ার করলে আমিও সব বলবো, কথা দিলাম।

শুকনো হাসি ঠোঁটে লেপে শতাব্দী ওর বৌদির চোখের ভাষা পড়ে নেবার চেষ্টা করলো। ওই টুকু সময়ে সে মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করে নেয়, বলাটা ঠিক হবে, নাকি ...

- কি যে বলো না তুমি, বুঝি না। আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে, পরে মন চাইলে বলবো।
- আচ্ছা, এখন আমার বদলে ননদায় থাকলে খুব কুস্তি লড়তে, তাই না?

শতাব্দী কোনো উত্তর না দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো- 'আমার ঘুম পাচ্ছে বৌদি'।

হটাৎ বৌদি কিছু না বলেই শতাব্দী কে জাপ্টে ধরে আদর ভরিয়ে তুললো মুখে একটাই  কথা জানো ননদী আমি আমার বর বা বয় ফ্রেন্ড হলে... এই বিকেলেই দু'তিন বার...

উষ্ণতার পরশ পেয়ে শতাব্দীর সারা শিউরে উঠলো। বৌদির বাহুডোর পিষ্ট হতে হতে  নারী স্বত্বার ব্যাকুলতা  যেন নিজের শরীরের রন্ধে রন্ধে উপলব্ধি করল অদ্ভুত এক আবেগে ভেসে গেল সে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার কোন চেষ্টাই করলো না সে।

সমাজের নগ্ন রূপKde žijí příběhy. Začni objevovat