বেলাশেষে

2 0 0
                                    

ব্যস্ত হাসপাতালের বিকেল বেলা, ভিজিটিং আওয়ার চলছে। বাইরেটা দর্শণার্থীর ভিড়ে উপছে পড়ছে আর তার সাথে কথোপকথোনের আওয়াজে সরগম। অথচ কেবিনের ভিতর থেকে বোঝার উপায় নেই, ভিতরটায় এক হিম শীতল নীরবতায় পূর্ণ। জীবন এখানে এক শান্ত নদীর মত যার কাছে কর্মময় জীবনের ঢেউ এসে পৌঁছয় না। সারাটা দিন তো এইটুকু সময়ের জন্য অপেক্ষা করে কাটে। নিজের প্রিয়জনদের উপস্থিতি জীবনের উত্তাপ ছড়িয়ে এই কেবিনের ভিতরকার নিঃসঙ্গতার বরফ গলিয়ে ফেলে।

হসপিটালের কেবিনের দরজায় একটা আওয়াজ হতেই হাতে ধরা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের "ঠিকানা নেই" বইটা থেকে চোখটা সরিয়ে দরজার দিকে তাকালেন রীনা দেবী।দরজায় সেই চেনা মুখটা দেখতে পেয়ে বলে উঠলেন, তুমি আবার এসেছো পরেশ ? আচ্ছা তোমারও তো বয়স বাড়ছে নাকি? আর আমি কি ছোট বাচ্চা যে রোজ দুবেলা নিয়ম করে আমায় দেখতে আসতে হবে, আর আমিতো এখন ভালই আছি। এসব বলে নিজেও যে এতক্ষন ওই মুখটা দেখার জন্যই বইয়ের পাতা থেকে মুখটা তুলে বার কতক ঘড়িতে দেখেছেন চারটে বাজলো কিনা, সেটা আড়াল করার একটা চেষ্টা করে গেলেন লীনা দেবী।

পরেশ বাবু - তুমি যে বাচ্চা নও রীনা সে কি আর আমি জানিনা। তবে কি জানো মানুষ অসুস্থ হলে, হসপিটালে পড়ে থাকলে সে আশা করে যে কেউ অন্তত তার কাছে একটু সময়ের জন্য হলেও আসুক। সেই বছর দুয়েক আগে শীতে আমার যখন শ্বাসকষ্ট হলো, তখন কিন্তু হসপিটালে শুয়ে আমার খুব মনে হতো, কেউ অন্তত আসুক। দুদিন তিনদিন ছাড়া ছাড়া ওই বৃদ্ধাশ্রমের ছেলেগুলো দেখতে আসতো বটে, কিন্তু সেটা যেন ওদের একটা কর্তব্য, তাতে ঠিক অনুভূতির টান ছিলনা।

তবে তোমার এসব মনে হয় কিনা জানিনা। তুমি তো আবার বড্ড বেশি বাস্তববাদী।
রীনা দেবী - ব্যস, সুযোগ তৈরী করে ঠুকে দিলে তো? কথায় কথায় আমায় না ঠুকলে কি শান্তি হয়না তোমার?
পরেশ বাবু - কোথায় ঠুকলাম। এখানে তো না আছে পেরেক না আছে হাতুড়ি।
লীনা দেবী - সেসব ছাড়াও যে কথা দিয়ে দিব্যি ঠোকা যায় সে আর তোমার থেকে কে ভালো পারে বলো।

পরেশ বাবু - আচ্ছা এসব ছাড়ো, এখন বলো তুমি কেমন আছো? পায়ের ব্যথাটা কেমন এখন?
রীনা দেবী - আগের থেকে অনেক ভালো। এই জানো, আজকে তুমি সকালে গেলে, ব্রেকফাস্টের পর ওরা আমায় ধরে ধরে হাঁটালো। কতদিন পর মাটিতে পা রাখলাম।
পরেশ বাবু - পারলে হাঁটতে? কষ্ট হয়নি তো?
রীনা দেবী - কষ্ট তো একটু হবেই, কিন্তু বসে থাকলে তো চলবেনা। আবার কবে যে আগের মত...
পরেশ বাবু - আগের মত ঠিক পারবে রীনা। তুমি অত ভেবোনা, মনের জোর রাখো । আচ্ছা ওরা কবে ছুটি দেবে কিছু বললো?
রীনা দেবী  - আমিও না রোজ এই কথাটাই জিজ্ঞেস করি ডক্টর এলে জানো। উনি তো বলছেন একটু ঠিকমত হাঁটতে না পারা অবধি ছাড়তে পারবেনা। তারজন্য আরো প্রায় এক দু সপ্তাহ।
পরেশ বাবু - সেই তো।এই বয়সে এসে একটা এত বড় অ্যাকসিডেন্ট, যেভাবে পড়ে গেছিলে তাতে আমিতো ভেবেছিলাম....
রীনা দেবী - কি ভেবেছিলে মরে গেছি তাই তো? ওরে বাবা,মেয়েমানুষের কইমাছের জান বুঝেছো, এত সহজে নিস্তার নেই।

Du hast das Ende der veröffentlichten Teile erreicht.

⏰ Letzte Aktualisierung: Apr 14, 2022 ⏰

Füge diese Geschichte zu deiner Bibliothek hinzu, um über neue Kapitel informiert zu werden!

বেলাশেষে Wo Geschichten leben. Entdecke jetzt