তৃতীয় পর্ব

12 0 0
                                    

এই ঘটনার পর আরও মাস তিনেক কেটে গেছে। এখন আমি অনেকটাই সুস্থ, তাই বাবা-মা আবার ফিরে গেছেন বাড়িতে। এমনিতেই এখানে পড়ে থেকে আমার সেবা করতে গিয়ে বাবার ব্যবসার বিস্তর লোকসান হচ্ছিল। আমিও ডিউটি'তে জয়েন করেছি। এইসব গোলমালের চক্করে ব্যাঙ্কে অনেকদিন কামাই হয়ে গেছে। ঘড়ি বিদায় হওয়ার পর থেকে পরিবারে কোনও গণ্ডগোল ঘটেনি। জীবনের চাকা দিব্যি স্বাভাবিক গতিতে গড়গড় করে গড়িয়ে চলেছে। তবু আমার মন থেকে সেই নিরানন্দ ভাবটা যেন কাটছে না। নাহ্....ঘড়ি হাতছাড়া হওয়ার দুঃখ মনের মধ্যে আর নেই। ফাঁকা কোণাটায় শম্পা একটা সুন্দর বুকশেল্ফ বসিয়েছে। তা সত্ত্বেও এত বিষাদ কেন যে আমার মনের মধ্যে বাসা বেঁধেছে আমার জানা নেই। শম্পার সাথেও খুব দরকার ছাড়া বিশেষ কথাবার্তা বলি না। সবকিছুই আজকাল বড্ড সাদাকালো মনে হয়। হৃদয়-বসন্তবনের উজ্জ্বল বর্ণচ্ছটা কোথাও হারিয়ে গেছে। সেই স্থান দখল করেছে শীতকালের সুদীর্ঘ হিমেল নৈরাশ্য।

থাকতে না পেরে নিজে একদিন ফোন করে বসলাম সরকার বাবু কে। ওপার থেকে উনিই ফোনটা রিসিভ করলেন।
- "হ্যালো, কে বলছেন?"
- "গুড মর্নিং মিঃ সরকার! আমি প্রতীক বলছি।"
- "আরে ম্যানেজার সাহেব যে, হোয়াট এ প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ! কেমন আছেন?"
- "ওই চলছে আর কি। আপনি এখন কোথায়?"
- "কোথায় আর থাকব! সমস্ত প্রপার্টি আপনার হাতে তুলে দিয়ে ইন্ডিয়া থেকে পাততাড়ি গুটিয়েছি। এখন মেয়ে-জামাইয়ের কাছেই জীবনের শেষ ক'টা দিন শান্তিতে কাটিয়ে দিতে চাই।"
- "তা বেশ বেশ, ভালই করেছেন। আচ্ছা মিঃ সরকার, আপনাকে একটি জরুরি কথা জিজ্ঞেস করার জন্য ফোন করেছিলাম।"
- "ও....কী নিয়ে কথা?"
- "শোওয়ার ঘরের গ্র্যান্ডফাদার ক্লকটা নিয়ে।"

ফোনের ওপারে দীর্ঘক্ষণের নীরবতা। বুঝলাম সরকার বুড়ো মনে-মনে অজুহাত দেখানোর ফন্দি আঁটছে। সেই সুযোগ ওকে দেওয়া চলবে না। কড়া ভাষায় একটু ভাল করে জেরা করতেই ভিতর থেকে আসল কথাটা বেরিয়ে এল। বহু বছর আগে ওই বাড়িতে ফক্স সাহেব নামক একজন ব্রিটিশ অফিসার থাকতেন। তার মেজো কন্যা ছিল সেই মেয়েটি....লরা ফক্স। ওরই ছায়া আমি আর শম্পা প্রত্যক্ষ করেছিলাম। খুব কম বয়সে কোনও অজানা রোগে ভুগে বাচ্চাটার জীবনাবসান ঘটে। বেডরুমের ওই ঘড়িটা লরার অত্যন্ত প্রিয় ছিল। তাই মৃত্যুর পরেও ওর আত্মা সেই গ্র্যান্ডফাদার ক্লকের মায়া ছাড়তে পারেনি। লরার আত্মা চায় না যে ওই ঘড়িটা অন্য কারও মালিকানায় থাকুক। তাই ফক্স সাহেব বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পরেও যখনই কোনও পরিবার এই বাড়ির দখল নিয়েছে, তাদের সকলের সঙ্গে ঘটেছে কিছু না কিছু মারাত্মক বিপর্যয়।

ডাকHikayelerin yaşadığı yer. Şimdi keşfedin