এত আক্রোশ! এতো ঘৃণা!

1 0 0
                                    

রূপঙ্কর রূপঙ্কর আর রূপঙ্কর। প্রথম কয়দিন শুধুই ছি ছি আর ছি ছি। ইদানিং কয়েকজনের তবু কিঞ্চিৎ সম্বিত ফিরছে দেখা যাচ্ছে। ভাবটা অনেকটা এই রকম। নাহ, এটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাতেও রূপঙ্কর বিদ্বেষীদের গাত্রদাহ মিটছে না। কয়দিন আগেই যাঁরা পুতিনের মুণ্ডু চাই। রাশিয়া নিপাত যাক ধুয়োর সাথে সুর মিলিয়ে আনন্দ পাচ্ছিলেন। তাঁরা আজ রূপঙ্করের মুণ্ডু চাই বাংলা সংস্কৃতি নিপাত যাক বলতে পারলে বোধকরি অধিকতর সুখী হতেন। সেকথা বলতে না পারলেও। রূপঙ্কর ও তাঁর পরিবারকে প্রায় কোণঠাসা করে দিতে পেরেছেন। নিঃসন্দেহ ভাবে। রূপঙ্করের ধোপা নাপিত বন্ধ করতে পারার সুযোগ থাকলে। বিষয়টা যেন সোনায় সোহাগা হয়ে উঠতে পারতো। কিন্তু সীমিত সুযোগেই রূপঙ্কর বিদ্বেষীরা রূপঙ্কের ডুগডুগি বাজিয়ে দিতে পেরেছেন, বেশ ভালো ভাবেই। একজন শিল্পীকে তাঁর নিজের রাজ্যেই নিজের শহরে যখন পুলিশি সুরক্ষার আশ্রয় নিতে হয়। কোন রকমের, কোন ধরণের অপরাধ না করেই। তখন সেই রাজ্যের পালসটা বুঝতে অসুবিধে হয় না। রূপঙ্করেরও হয়নি। হয়নি বলেই প্রেসমিট করে তাঁকে নিঃশর্ত দুঃখ প্রকাশ করে নিতে হয়েছে। তুলে নিতে হয়েছে আপন বক্তব্যের ভিডিওটিকেও। ফলে রাজ্যজুড়ে রূপঙ্কর বিদ্বেষীদের আজ যুদ্ধজয়ের দিন। আজ আনন্দ করার দিন। আজ সত্যিই উৎসব।

রূপঙ্করের সেই ভিডিয়োবার্তা এবং পরবর্তীতে প্রেসমিটে পাঠ করা লিখিত বার্তা। এই দুইয়ের ভিতরে কোন স্ববিরোধীতা নেই। দুটি বার্তাই যাঁরা মনযোগ দিয়ে শুনেছেন। তাঁরা অনুধাবন করতে পারবেন। রূপঙ্কর তাঁর মূল বক্তব্য থেকে একচুলও সরে আসেননি। আর এইখানেই ব্যক্তি রূপঙ্কর সত্যিই ধন্যবাদার্হ্য। আর এইখানেই জাতি হিসাবে বাঙালির আজ মুখ লুকানোর দিন। সুস্পষ্ট বাংলা ভাষায়, স্পষ্ট উচ্চারণে স্বাজতি বাঙালির কাছে রাখা রূপঙ্করের পূর্ববর্তী ভিডিয়োর মূল কথা বাঙালি অনুধাবন করতে পারেনি। আর পারেনি বলেই, শিল্পীকে তাঁর পূর্ববর্তী বক্তব্যের লিখিত ব্যাখ্যা পাঠ করে শোনাতে হলো প্রেসমিট করে। কলকাতা প্রেসক্লাবে। এর থেকে বড়ো লজ্জা কোন জাতির পক্ষেই আর হয় কি? এখন এখানে একটি মূল প্রশ্ন উঠতে পারে। জাতি হিসাবে বাঙালি কি সত্যিই রূপঙ্করের সোজাসুজি বলা কথাগুলি অনুধাবন করতে পারেনি? না'কি অনুধাবন করতেই চায়নি? আর চায়নি বলেই কি সোজা কথার বাঁকা মানে করছে? না শুধুমাত্র বাঁকা মানে করেই বাঙালি ক্ষান্ত হয়নি। তাহলেও কথা ছিল। বাঙালি রূপঙ্করের উপরে ব্যক্তি আক্রমণ শানিয়ে শিল্পীকে সোজা ভাষায় ভিলেন বানিয়ে ছেড়েছে। শিল্পীর জীবন অতিষ্ঠ করে দিয়েছে। তাঁর নিজের শহরেই তাঁর বসবাসের উপরে আতঙ্ক নামিয়ে এনেছে। শিল্পীকে প্রশাসনের কাছে সুরক্ষার প্রার্থনা করতে হয়েছে। লজ্জা লজ্জা। শুধু লজ্জা ছাড়া আর কোন ভাষাই মনে আসার উপায় নেই।

রূপঙ্কর খুব বুদ্ধিমানের মতো একটি কাজ করেছেন। যে ভিডিয়োবার্তা নিয়ে বাঙালি অযথা জলঘোলা করেছে। সেটি উনি মুছে দিয়েছেন। বরং সেই ভিডিয়োবার্তার মূল বক্তব্যটুকু পুনরায় প্রেসক্লাবের লিখিত বক্তব্য পাঠে ব্যাখ্যা করে শুনিয়ে দিয়েছেন। সাথে খুব প্রাঙ্গিক ভাবেই তাঁর প্রতি বাঙালির আক্রোশ এবং ঘৃণাকেও উল্লেখ করে গিয়েছেন। প্রেসক্লাবের এই বার্তার আর্কাইভ্যাল ভ্যালু কিন্তু অপরিসীম। অন্তত ভবিষ্যতে বাঙালির সাম্প্রতিক সময়ের পোস্টমর্টেম হওয়ার সময়ে এটি একটি মূল্যবান দলিল হিসেবেই কাজ করবে। বঙ্গসংস্কৃতির সামগ্রিক অবক্ষয় এবং বাঙালির নৈতিক অধঃপতনের ইতিহাসে রূপঙ্করের এই প্রেসমিট অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নিদর্শন হিসেবেই থেকে যাবে। বাঙালি যদি আগামী শতকে হলেও কোনদিন ঘুরে দাঁড়াতে চায়। তখন এই প্রেসমিটের ফুটেজ অত্যন্ত দরকারী একটি রিসোর্স হিসাবে কাজে দেবে। আগামী শতকের বাঙালির জন্য। নাহ, এই শতকের বাঙালি'র জন্য আর কোন আশা নেই। রূপঙ্কর পর্বেই সেই সত্য দিনের আলোর মতো পরিস্কার হয়ে গিয়েছে। আগামী শতকে বাঙালি যদি কোনদিন সত্যিই ঘুরে দাঁড়াতে চায়, সেইদিন রূপঙ্কর জাতীয় বীরের মর্য্যাদায় অভিষিক্ত হবেন। অবশ্য তিনি যদি তাঁর এই দৃঢ়চেতা অবস্থান ধরে রাখতে পারেন। দিশাহীন অশিক্ষিত মেরুদণ্ডহীন আত্মপ্রত্যয়হীন এবং আত্মসম্মানহীন সম্পূর্ণ অচেতন একটি জাতির সম্বিত ফেরানোর চেষ্টা করার জন্য। রূপঙ্কর আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উল্লেখ করে গিয়েছেন। তাঁর লিখিত বক্তব্যে। তাঁর সেই বক্তব্যটুকুর নিহিত অর্থ এই। অন্যান্য প্রদেশের মানুষ, নিজ নিজ প্রদেশের শিল্পী এবং সংস্কৃতিকে রক্ষা করার বিষয়ে অনেক বেশি যত্নবান। সত্যি করেই শিল্পী তাঁর স্বজাতিকে পূর্ণ স্বরূপে চিনে নিতে পেরেছেন অবশেষে। না পারলে এমন একটি কথা উল্লেখের কোন প্রয়োজন পড়তো না তাঁর।

৪ঠা জুন' ২০২২

কপিরাইট সংরক্ষিত

You've reached the end of published parts.

⏰ Last updated: Jan 25, 2023 ⏰

Add this story to your Library to get notified about new parts!

এত আক্রোশ! এতো ঘৃণা!Where stories live. Discover now