চতুর্থ মহাবিশ্ব

21 8 7
                                    

অঙ্কিতার সাথে দীপের বিয়েটা আচমকাই হয়ে গেল। অঙ্কিতার বিয়ে করার কথা ছিল তার প্রেমিক অভির সাথে পালিয়ে কিন্তু বিয়ে হয়ে গেল অভির বন্ধু দীপের সাথে । অভি শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে এসেছে, যে রাতে অঙ্কিতার সাথে অভির পালানোর কথা ছিল , সেই রাতে অভি ফোন বন্ধ করে বসে ছিল। দীপের কাজ ছিল অঙ্কিতাকে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে ট্রেন স্টেশন অব্ধি পৌঁছে দেওয়া, কারণ দীপের বাড়ি অঙ্কিতার বাড়ির কাছে আর অভির বাড়ি অন্য এলাকায়। সময় মতো দীপ অঙ্কিতাকে নিয়ে স্টেশনে উপস্থিত হলেও উপস্থিত হয়নি অভি। অনেক ফোন করেও যখন অঙ্কিতা দেখল অভি ফোন ধরছে না তখন অঙ্কিতা বুঝতে পেরেছে অভি তার সাথে প্রতারণা করেছে । সেই সময় অঙ্কিতার বাড়ি ফেরার পথ ছিল না, তাই অঙ্কিতা দীপ কে নিয়ে পালায় এবং বিয়ে করে। দীপ প্রথমে না যেতে চাইলেও পরে পালাতে রাজি হয়ে যায় কারণ অঙ্কিতার প্রতি দীপের দুর্বলতা প্রথম থেকে ছিল। বিয়ের সময় অঙ্কিতা ভাবছিলো - 'একদিন আগেও সে নিজেই জানতো না দীপের সাথে তার বিয়ে হবে সে তো ভেবেছে অভির সাথে থাকবে সারাজীবন কিন্তু কেমন যেন আচমকাই দীপের সাথে তার বিয়ে হয়ে গেল। এতে দীপের কোনো দোষ নেই দোষ তো তার সে ভুল মানুষকে ভালোবেসে ছিলো, দীপ তো বিয়ে করে তার জীবন বাঁচিয়েছে।' বিয়ের পর তারা একটি হোটেলে উঠেছে দুই দিনের জন্য, দুই দিন পর তারা উঠল ভাড়া বাড়িতে। এক সাথে থাকতে থাকতে দুজনের মধ্যে একটা ভালোবাসা বাড়তে লাগলো। অঙ্কিতা নিজের মনে নিজেই বলছে সে এতদিন ভুল লোককে ভালোবেসেছে, সে ভগবান কে ধন্যবাদ দিচ্ছে দীপের সাথে তার বিয়ে করিয়ে দেওয়ার জন্য । দীপ সত্যি খুব ভালো ছেলে , পেশায় ব্যাঙ্কের ম্যানেজার যাকে বলে আদর্শ পুরুষ, তাই দীপের প্রতি অঙ্কিতার ভালোবাসা দিন দিন বাড়তে লাগলো। এই ভাবে হাসি খুশিতে, আনন্দে ছয় মাস কেটে গেল; ছয় মাস পর খুশির খবর টা অঙ্কিতা প্রথম দীপকে জানায় যে সে গর্ভবতী। এই কথা শুনে দীপ আনন্দে অঙ্কিতা কে কোলে তুলে নিয়ে গোল গোল করে ঘোরাতে লাগে । তারপর দীপ অঙ্কিতা কে নীচে নামিয়ে কাপালে চুম্বন করে বলে যে আজ সে খুব খুশি, এর আগে শুধু বিয়ের দিন সে এত খুশি ছিল। দীপ অঙ্কিতা কে বলে আজ থেকে তোমার সব কাজ বন্ধ, আজ থেকে সমস্ত কাজ কাজের মাসি করবে, দরকার হলে আয়া রেখে দেবো। তুমি শুধু আরাম করবে কারণ এই সময় বেশি কাজ করা উচিত নয় তোমার। তখন অঙ্কিতা বলে আমি এখন ঠিক আছি, যখন পারবো না তখন আমি নিজে থেকেই বলবো। পারা পারির কথা নয় আমি জানি তুমি পারবে, কিন্তু বিপদ আসতে কতখন দীপ বললো ! ঠিক আছে আমি করবো না, অঙ্কিতা বললো দীপ কে জরিয়ে ধরে । এই ভাবে হাসিখুশি তে আরো নয় মাস কেটে গেল। সন্তান প্রসবের সময় কাছে চলে আসছিল । সন্তান প্রসবের এক সপ্তাহ আগে দীপের ফোনে একটা ফোন আসে, ফোন টা ছিল দীপের ব্যাঙ্কের এক ক্লার্কের যার নাম ছিল শ্যামল। দীপ তাকে শ্যামল দা বলে ডাকতো কারণ তিনি বয়সে দীপের থেকে অনেক বড়ো ছিল। তার কাজ ছিল ব্যাঙ্ক সময় মতো খোলা বন্ধ করা। ছুটির দিনে রাত ন'টার সময় শ্যামলদার ফোন দেখে দীপ বুঝতে পারছিল কিছু একটা হয়েছে ! না হলে শ্যামল দা এতো রাতে ফোন করতো না । তাই সাথে সাথে দীপ ফোনটা ধরলো , ফোন ধরতেই শ্যামল দা বলে উঠলো স্যার আপনি একটু ব্যাঙ্কে আসতে পড়বেন, পুলিশ এসেছে ব্যাঙ্কের বাইরে আমি দারিয়ে আছি পুলিশ অফিসারদের সাথে। তখন শ্যামল দার হাতের থেকে একজন পুলিশ অফিসার ফোন টা নিয়ে বললো - ম্যানেজার বাবু আমি সাব ইনসপেক্টর অভিজিৎ চন্দ্র রায় বলছি। তখন দীপের নাম টা শুনে কেমন একটা লাগলো, নিজের মনেই কিছু মনে করার চেষ্টা করছিল। তখন উল্টো দিক থেকে সাব ইন্সপেক্টর বললেন আপনি শুনছেন, এটা বলার পর দীপ ভাবনার কথা ভুলে বললো হ্যা বলুন অফিসার কী হয়েছে? এত রাতে আপনি আমাদের শ্যামল দা'কে নিয়ে ব্যাঙ্কের বাইরে দাড়িয়ে কেন আছেন, ব্যাপার টা কী? তখন পুলিশ ইন্সপেক্টর বললো আমাদের কাছে একজন রেডিও অপারেটরের ফোন এসেছিলো কিছুক্ষন আগে , তার কথা অনুযায়ী তিনি যখন রেডিও সিগনাল ইন্টার্সপ্ট করছিল তখন দুটি ওয়াকিটকির কথোপকথন শোনে। ওই কথপোকথনের কথা শুনে মনে হচ্ছে কোনো একটি দল ব্যাঙ্ক চুরি করছে আর নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের জন্য তারা ওয়াকিটকি ব্যবহার করছে। ওই কথপোকথনের রেকডিং আমদেরও শুনিয়েছে, আমরাও শুনে বুঝলাম কোনো ব্যাঙ্কে চুরি হচ্ছে এই মুহূর্তে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে কথোপকথনের রেকডিং তার মধ্যে কোথাও ব্যাঙ্কের নাম উল্লেখ নেই। তাই আমরা সব ব্যাঙ্ক এ গিয়ে দেখছি ব্যাঙ্ক গুলো ঠিক আছে কিনা। আপনাদের বাইরে দেখে ঠিক আছে মনে হচ্ছে কিন্তু আমদের ভিতর টা দেখতে হবে এবং লকার রুম টাও দেখতে হবে। তাই আপনার অনুমতি ছাড়া শ্যামল বাবু খুলবে না বললো , আর আপনাকে ছাড়া লকার রুমও খোলা যাবে না বললো তাই আপনাকে একটু কষ্ট করে আসতে হবে। দীপ শুনে বললো আচ্ছা আমি আসছি বলে ফোনটা কেটে দিল।

সমান্তরাল মহাবিশ্বের মায়াজাল Where stories live. Discover now