তৃণা চৌধুরী সার্ভাইবড

95 0 0
                                    

[ ছোটগল্প ]

সারাদেশ সরগরম। টঙ দোকান থেকে শুরু করে টকশো...সব জায়গায় একটা বিষয় নিয়েই কথা হচ্ছে। বুদ্ধিজীবীদের কাছে আজ একটাই টপিক। ডাক্তারদের কাছে একটাই গবেষণার বিষয়। তা হলো: কিভাবে সার্ভাইব করলো তৃণা চৌধুরী?
ঘটনার প্রেক্ষাপট জানতে আমাদের বেশ কয়েকদিন পেছাতে হবে। ঘটনার সূত্রপাত এক জাহাজ ও দ্বীপকে ঘিরে।
চট্রগ্রাম থেকে ৫২ জন যাত্রী নিয়ে ব্লু ক্রুজ নামক একটি জাহাজ রওনা দেয় কোনো এক পর্যটন কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে ঝড়ের কবলে পড়ে জাহাজটি। ৫২ জন যাত্রী নিয়েই জাহাজটি এক নাম-না-জানা দ্বীপে আছড়ে পড়ে। সেই অজানা এক দ্বীপে, শীতল আবহাওয়ায়, মৃত্যুভয় নিয়ে, হিংস্র জীবজন্তুর আতঙ্ক নিয়ে সেখানে কতদিন তারা অবস্থান করেছিল জানেন? ১৪৫ দিন!
ঠিকই পড়েছেন। ১৪৫ দিন সেখানে যাত্রীরা অবস্থান করে। একপর্যায়ে একে একে মানুষগুলো মরতে শুরু করে। আসলে সঠিকভাবে বললে, মরতে নয়, মারতে শুরু করে। খাদ্যের অভাবে মনুষ্যত্ব হারিয়ে যায় সবার। সবাই হয়ে উঠে হিংস্র, বাঘের চাইতেও হিংস্র। খাদ্যের অভাবপূরণের জন্য তারা মাংসের তালাশ করতে থাকে। হাজারো চেষ্টা করেও ব্যর্থ যাত্রীরা একসময় আবিষ্কার করে শুধু শুধু মাংসের তালাশ করে লাভ কি, যদি মাংস তাদের সামনেই থাকে!
একে অপরকে খুন করে তারা অপরজনের মাংস খাওয়া শুরু করে। ক্যানিবালিজম চর্চা শুরু হয়। মানুষের মাংস খেয়ে তারা সার্ভাইব করতে থাকে। একসময় মানুষের সংখ্যা কমতে থাকে। এমন একসময় আসে যখন সেই দ্বীপ মানুষ শূন্য হয়ে পড়ে। তবে...ততক্ষণে উদ্ধারকর্মীরা পেয়ে গেছে সেই দ্বীপের লোকেশন। বিশাল সংখ্যার কর্মীরা সেই দ্বীপে যায় এই আশা নিয়ে যে সেখানে থাকা মানুষের হাড়গোড় কালেক্ট করা যেতে পারে। কিন্তু দ্বীপে কিছুক্ষণ তালায় চালাতেই তাদের সবার চক্ষুচড়ক গাছ! একজন মানুষ তখনও জীবিত ছিল। তার নাম তৃণা চৌধুরী। তারা তাকে উদ্ধার করে ভর্তি করে এক হসপিটালে।
এই নিয়েই সারাদেশের মানুষের মাথা গরম। সবার একটাই প্রশ্ন: তবে কি মানুষের মাংস খেয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছিল তৃণা?
তৃণা অবশ্য এর জবাবে বলেছে যে সে মাছ খেয়ে বেঁচে ছিল। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
বেচারি মেয়েটাকে অনেক টিনএজ ছেলেপেলেরা এই প্রশ্নও করতে চেয়েছিল যে মানুষের মাংসের স্বাদ কেমন। কি বিদঘুটে অবস্থা!
•••
এমুহূর্তে দেশসেরা সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. হাসানুল শফি বসে আছেন হাসপাতালের সুরক্ষিত এক কেবিনে। তার আশেপাশে গুটিকতক পুলিশ অফিসার ও কন্সটেবলরাও দাঁড়ানো। যে বেডের সামনে তারা দাঁড়িয়ে আছে সেই বেডেই বসে আছে তৃণা চৌধুরী। বয়স খুব বেশি নয় তার। ২২-২৩ হবে হয়তো। কয়েকদিন ভয়াবহ রকমের মানসিক ধকল গেছে বেচারির। এখন কিছুটা স্বাভাবিক।
কিঞ্চিৎ কেশে হাসানুল বললেন,
"তুমি কি খেয়ে বেঁচে ছিলে ওই দ্বীপে?"
অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো সে। বললো, "আমি আগেও এর জবাব দিয়েছি, ডাক্তার।"
"আর একবার দেন প্লিজ।"
"মাছ খেয়ে বেঁচে ছিলাম।" ক্লান্ত শোনালো তার কণ্ঠ।
হঠাৎ করেই, একদম অদ্ভুত ভাবে ও অপ্রত্যাশিতভাবে একটা সহজ-সরল প্রশ্ন এসে যায় ডা. হাসানুলের মনে। তিনি কিছুটা কাছে যান তৃণার। বলেন, "আমি কি?"
তৎক্ষনাৎ তার এমন বেহুদা, হাস্যকর, ফালতু ও আউট অব দ্য বক্স প্রশ্নে যথেষ্ট বিরক্ত তার আশেপাশে দাঁড়ানো পুলিশ সদস্যরা। কিন্তু তৃণা কেমন যেন বাঁকাচোখে তাকালো ডাক্তারের দিকে। কিছু বলার জন্য মুখ খুলেও বন্ধ করে ফেললো। ডাক্তার আবার জিজ্ঞেস করলো, "আমি কি?" তৃণা নিচুস্বরে বললো, "মাছ।"
আশেপাশে পুলিশ সদস্যদের দিকে ইশারা করে তিনি আবার বললেন, "উনারা কি?"
মেয়েটা ঘাড় কাত করে বললো, "মাছ।"
তিনি বললেন, "তুমি কি খেয়ে বেঁচে ছিলে?"
"মাছ।"

সমাপ্ত

You've reached the end of published parts.

⏰ Last updated: Nov 08, 2023 ⏰

Add this story to your Library to get notified about new parts!

তৃণা চৌধুরী সার্ভাইবডWhere stories live. Discover now