বাগানে বসে তার অতি প্রিয় গল্পের বইটা পরছে জারা,,, কিন্তু অবাধ্য চুলগুলো বার বার মুখের সামনে চলে আসছে যেনো চুলগুলোও প্রতিজ্ঞা করে রেখেছে ওকে শান্তি দিবেনা।
একসময় বিরক্ত হয়ে ডাক দিল তার সবচেয়ে কাছের সেবিকা হেমিয়াকেহেমিয়া- জি, আমাকে ডেকেছিলেন ছোট মেম?
জারাহ- হেমি তুমি আমার চুলগুলো বেধে দাও তো,,, বড্ড বিরক্ত করছে আমায়।
হেমিয়া জারার চুলগুলো বেধে দিয়ে ওর পাশে বসে। হেমিয়া বয়সে জারার থেকে ৫বছরের বড় তবে সে জারার কাছে তার বন্ধুর মতো। মহলের এতো সেবিকার মধ্যে হেমিয়া ওর সবচেয়ে কাছের, ওর সখি। হেমিয়া ওদের মহলের প্রধান রাধুনির মেয়ে। ওর বাবা মারা গেছে অনেক বছর আগে। হেমিয়া এই মহলেই থাকে,,, সবসময় জারার সাথেই থাকে হেমিয়া। জারাহ ছোট করে ওকে হেমি বলে ডাকে। হেমিয়ার ত্বক দুধের মতো ফরসা, দেখতে কোন রূপবতীর থেকে কম নয়। ওর ব্যবহার, আচার-আচরণ সব মনোমুগ্ধকর। আর সে প্রচুর loyal। চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করার মত।
জারাহ বাগান থেকে উঠে হেমিয়ার সাথে মহলের দিকে যেতে থাকে,,, জারাহ আজ হালকা নীল রং এর মধ্যে হালকা সাদা কাজ করা একটা জামা পরেছে, চুলগুলো এক বেনী করে ডানপাশের কাধ এনে রাখা,, ওর চুলগুলো প্রায় কোমর ছাড়িয়ে তার থেকে একটু বড়,,,মহলে প্রবেশ করতেই
মহলে অচেনা কিছু লোক দেখে সে এবং জোরে জোরে কথা বলার শব্দ শোনে। তাই কিছুটা কৌতুহল হয়েই নিচে যাতে যাবে তখনি হেমিয়া ওকে বাধা দেয় এবং সেখানে যেতে নিষেধ করে কারণ জমিদার সাহেব হেমিয়াকে নিষেধ করে গেছেন যেন জারাহ সেখানে না যায়। তবে কার কথা কে শোনে জারাহ নিচে যায় , যেখানে তার বাবা জমিদার সাহেব এর সাথে কিছু লোক কথা বলছিল। একটু আড়াল থেকে কিছুক্ষণ তাদের পর্যবেক্ষণ করতে থাকে সে। তখন একজন লোকের দিকে চোখ যায় তার পোশাক- আশাক দেখে অনেকটা রাজকুমার এর মতো মনে হচ্ছে, তার চারপাশে অনেক প্রহরীও আছে তবে লোকটার মুখ দেখা যাচ্ছে না। হেমিয়াও পিছু পিছু জারার পাশে এসে দাড়িয়ে অনেক অনুনয় করতে থাকে,,,
হেমিয়া- ছোট মেম দয়া করে চলুন,,, জমিদার সাহেব দেখলে পরে সমস্যা হয়ে যাবে,, দয়া করে চলুন।
জারাহ- হেমি আরেকটু,,,,
তারপরও হেমিয়া অনেক অনুরোধ করতে থাকে,,, হেমিয়ার অনুনয় শুনতে শুনতে যখন জারাহ অবশেষে তার কক্ষে যাওয়ার জন্য সরে আসতে যাবে তখনি কারও রাগারাগীর শব্দ শুনে পিছন ফিরতেই আতকে যায় জারাহ,,,, সেই রাজকুমার এর মত লোকটা তার বাবার গলায় তলোয়ার ধরে আছে,, এই দেখে জারাহ দৌড়ে তার বাবার কাছে গিয়ে বাবার সামনে গিয়ে দাড়ায়। এরকম হঠাৎ দৌড়ে আসা অগুন্তুককে নিজের তলোয়ার এর সামনে দেখে কিছুটা হচকিয়ে যায় রাজকুমার তানভীর.. ….....
তার তলোয়ার এর সামনে দাড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। মেয়েটির শ্যামলা বর্ণের গায়ের গরন,, ছোট ছোট চোখ, কালো কুচকুচে চোখের মণি, গাড় কালো লম্বা বেনী করা কোমড় পর্যন্ত চুল, হালকা গোলাপি আর একদম হালকা বেগুনি এর মিশ্রিত ঠোট, নাকটা হালকা সুচালো, উচ্চতা প্রায় ৫ফুট ৬এর মত এবং হালকা নীল কাপড় পরিহিত। তেমন বিশেষ কিছু নেই মেয়েটার মধ্যে যে কেও এক দেখায় তার প্রতি আকর্ষিত হবে।
জমিদার সাহেব- জারাহ সামনে থেকে সরো
জারাহ- নাহ বাবা, আপনি আমাকে সরতে বলবেন না।
জমিদার সাহেব- জারাহহহ সরো তুমি সামনে থেকে,,, হেমিয়াা হেমিয়াাাাাা নিয়ে যাও জারাহকে
রাজকুমার তানভীর- এই তাহলে আপনার কন্যা?
(বলেই কিছুটা বাকা হাসি দেই)
জারাহ তার বাবাকে ঘিরে বলে
জারাহ- হ্যা আমিই জমিদার কন্যা, জারাহ। আমার উপস্থিতিতে আমারই সামনে আমার বাবা গায়ে তলোয়ার ধরার সাহস কি করে হয় আপনার,,,(অনেকটা রেগে উচ্চস্বরে বলে জারাহ,,,
বলতে বলতেই রাজকুমার এর তলোয়ারটা তার একহাত দিয়ে ধরে ছুড়ে ফেলে দেয় সে এবং অত্যন্ত পারদর্শিতার সাথে পাশে থাকা এক সৈন্য এর তলোয়ার নিয়ে রাজকুমার এর গলায় তলোয়ার ধরে,,, যদিও জারার হাত ও কেটে যায় তবে সে তা তোয়াক্কা করে না)
রাজকুমার এর তলোয়ার ছুড়ে দেওয়া সাথে সাথে সব সেনারা তাদের তলোয়ার নিয়ে জারার দিকে এগিয়ে আসলে রাজকুমার এক ইশারায় তাদের থামিয়ে দেয় এবং এক হাতে আস্তে করে তার গলা থেকে জারার তলোয়ার টা সরিয়ে দেন তিনি,,, আর তার এক সৈন্যকে সে কিছু একটা বলে, বলে আস্তে আস্তে কয়েকপা রাজকুমার তানভীর জারার মুখের দিকে এগিয়ে আসে তবে জারাহ এক পা ও নড়ে না। একদম মুখোমুখি হয়ে ওর চোখে চোখ রেখে একটু বাকা হাসি দেয় রাজকুমার ,,,
জারাহ- কি ভেবেছেন,, সামনে এগিয়ে আসলেই আমি ভয় পেয়ে যাবো?হাহ? আমিও উমিরান রাজ্যের জমিদার এর মেয়ে, যে কাওকে দেখেই ভয় পায় না। এদিকে জমিদার সাহেব নানাভাবে জারাহকে থামানোর চেষ্টা করছিলো তবে রাজকুমার এর ইশারায় তিনিও চুপ হয়ে যান,,, জারাহ বলতেই থাকে বলতেই থাকে রাজকুমার এর চোখের দিকে তাকিয়ে, এরই মধ্যে রাজকুমার জারাহ এর হাত নিজের হাতে নিয়ে একটা ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে দেয় জারার হাতে,,,
রাজকুমার তানভীর- তাহলে পৃথিবীতে এমন কাওকে পাওয়ায় গেলো যে কিনা হবু সম্রাট তানভীর এর চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস রাখে ,,, (বলে একটা বাকা হাসি দেয়)
জারাহ- ভুল বললেন রাজকুমার শুধু আপনার চোখে চোখ রেখেই কথা বলার সাহস নয়,,, গলায় তলোয়ার ধরার সাহসটাও এই জারাহ রাখে।
(ওর কথায় তানভীর তাচ্ছিল্যের সুরে হাসে)
তানভীর-আসি তাহলে জমিদার সাহেব,,,যাওয়ার সময় একবার জারার কানে ফিসফিস করে তানভীর বলে যায়,,,,
তানভীর:তো জমিদার কন্যা,,, এখন আসি। আবার দেখা হবে।।(বলে রাজকুমার চলে যায়)
রাজকুমার চলে যেতেই জমিদার সাহেব বলতে থাকেন,,,
জমিদার সাহেব: হেমিয়া আমি তোমাকে নিষেধ করেছিলাম জারাহ যেনো এই প্রাঙ্গনের দিকে না আসে,,
হেমিয়া: জমিদার সাহেব আ---মি ছো---ট মেম কে বলেছিলা--ম,,
জারাহ:বাবা আপনি হেমি কে কেনো বলছেন,, আপনি আমাকে বলুন,, এখানে তো হেমির কোন দোষ নেই। আমি এখানে এসেছি নিজের ইচ্ছায়। আর ওই রাজকুমার এর সাহস কীভাবে হয় আমার মহলে এসে আমারই বাবার গলায় তলোয়ার ধরার।
জমিদার সাহেব:জারাাাহ,,, তোমাকে আমি কতবার না করেছি এসব করতে হে? আর রাজকুমার এর সাথে এ কি ধরনের ব্যবার তুমি করলে? এই আমার শিক্ষা? (জমিদার সাহেব জারাহকে অনেক বকা দিতে থাকেন,,, যা জারাহ মাথা নিচু করে শুনতে থাকে। ওর চোখেও হালকা পানি চলে আসে)
কিছুক্ষণ পর জমিদার সাহেব চলে গেলে জারাহ দৌড়ে তার কক্ষে চলে আসে এবং তার কক্ষের দরজা লাগিয়ে দিয়ে তার শয্যায় গিয়ে ধপ করে শুয়ে পরে বালিশে মুখ গুজে কান্না করতে থাকে,,,,
জারাহ :কে এই আজাইরা রাজকুমার,,, এই রাজকুমার এর জন্য বাবা আমাকে এভাবে বকলেন,, হাহহহহ,,, আর ওই রাজকুমার এর সাহস কীভাবে হয় আমার বাবার গলায় তলোয়ার তোলার,,,, (নিজ মনেই এসব বলতে বলতে জারাহ ঘুমিয়ে পড়ে?)to be continue
VOCÊ ESTÁ LENDO
জমিদারের ছোট মেয়েটি
Ficção Históricaএকটু different type রাগ,দুঃখ, ঘৃণা এবং সবশেষে ভালোবাসায় মিশ্রিত এক গল্প ,,,,,,,