সকালে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে একদৃষ্টে নিজের চার বছরের মেয়ে তুলির দিকে চেয়েছিল অনিমেষ মেয়েটি কাদামাটি নিয়ে খেলা করছে। এক মনে কোন দিকেই ভ্রুক্ষেপ নেই ,কোন চিন্তা নেই ,কোন ভয়ও নেই। নিজের মেয়ের দিকে এভাবে একদৃষ্টে চেয়ে আছে দেখে অনিমেষের স্ত্রী রিতা বলল যে
“কি হয়েছে? ওরকম করে ওর দিকে চেয়ে আছ কেন? কি চিন্তা করছো? নতুন কেস? ”
সম্বিত ফিরে পেয়ে অনিমেষ রিতার দিকে চেয়ে দেখলো ওর দৃষ্টিতে এখনো হাজার প্রশ্ন উঁকি মারছে। পাছে রিতা আরো দশ বারোটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে ফেলে তার আগেই অনিমেষ বলল
“হ্যাঁ নতুন কেস। একটা দু বছরের বাচ্চার মার্ডার কেস। বাইরে থেকে কেসটা যত সহজ দেখাচ্ছে ততটাও সহজ নয় এবং কাউকে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। আমার তো ছেলের মা-বাবার ওপরেও বিশ্বাস হচ্ছে না।”
“তোমার তো অভ্যাস সবাই এর উপর সন্দেহ করার কোনো ছেলের মা বাবা নিজের দু বছরের বাচ্চাকে কি মেরে দেবে?”
“আহা তুমি বোঝনা, আজকালকার দুনিয়ায় সন্তান তার মা-বাবাকে এবং মা বাবাও তার সন্তানকে খুন করতে পিছপা হয় না। শুধুমাত্র নিজেদের লোভ ও লালসার জন্য ,নিজেদের ইচ্ছা পূরণের জন্য নিজেদের মধ্যে থাকা সম্পর্কের কথা ভুলে মানুষ নিজের সবথেকে কাছের মানুষটিকে ও হত্যা করছে। এই দুনিয়ায় মনুষ্যত্ব বলে আর কিছুই বেঁচে নেই।”
“আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে ,তোমার দার্শনিক তত্ত্ব আর আমাকে শোনাতে হবে না তোমার কাছেই রাখ তোমার চিন্তাধারা। ”
এই বলে রিতা খালি চায়ের কাপটা অনিমেষ এর হাত থেকে প্রায় কেড়ে নিয়ে চলে গেল।মিরের মৃত্যু প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল কিন্তু এখনো পর্যন্ত নাতো খুনের অস্ত্র পাওয়া গিয়েছে আর নাতো মামলার কোনো সূত্র জানা গিয়েছে। পরিবারের সদস্যদের সবাই কে ডেকে এক এক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাতেও কোন কাজ হচ্ছে না। সবাই সবার নিজ নিজ অবস্থান থেকে কেউ ই সন্দেহ করার কোনো সুযোগ রাখেনি। চৌধুরী বাড়ি এবং crime scene দুই জায়গাতেই সন্দেহজনক কিছুই পাওয়া যায়নি। বা এমন কোন জিনিসও পাওয়া যায়নি, যা দ্বারা মিরকে আঘাত করে জলে ফেলে দেয়া হয়েছিল। ময়না তদন্তের রিপোর্টে স্পষ্ট করে বলা হয়নি যে জিনিসটা দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল সেটা কোন ধরনের জিনিস হতে পারে।
সময় পেরোতে লাগলো দেখতে দেখতে তিন মাস হয়ে গেল মিরের মৃত্যুর case আস্তে আস্তে ধামাচাপা পড়ে গেল। ওর পরিবারের লোকেরাও নিজেদের দৈনন্দিন জীবনেতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগল , দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে লাগলো। শুধু মাত্র তারা ও রিজুর জীবনটাই যেন ছারখার হয়ে গেলো । ওদের ফুটফুটে বাচ্চাটা এভাবে ওদের জীবন অন্ধকার করে চলে যাবে ওরা বুঝতে পারেনি। মিরের মৃত্যুর পর থেকে রিজু নিজের পরিবারের কারোর উপরেই বিশ্বাস রাখতে পারেনি ও সবাইকেই সন্দেহ করত। ওর মতে পরিবারেরই কেউ ওর ছেলে কে হত্যা করেছে। ওর সবার ওপরে আলাদা আলাদা কারণে সন্দেহ ছিল।
রিজু ও তারার প্রেম বিবাহ ছিল এবং তারা ছিল নিচু জাতির এই জন্যই রিজু ওর বাবা-মায়ের ওপরে সন্দেহ করতো কারন ওর বাবা-মা কখনোই তারাকে মন থেকে মেনে নেয় নি। যখন ওদের বাচ্চা ছিল না তখন ওরা তারা কে সবসময় মানসিকভাবে অত্যাচার করত মির হওয়ার পর থেকে ওরা মিরকে ভালোবাসতো তবে সেই ভালোবাসার মধ্যে একটা কমতি ছিল।
রিজু আর ওর বড় ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্কটা ততদিন ভালো ছিল যতদিন মিরের জন্ম হয়নি , ওর জন্মানোর পর থেকেই ওর বড় ভাই ও রিজুর থেকে যেন দূরে সরে গেল এবং ওর বৌদিও নিজের মেয়েদের কে তারা র কাছে বেশি আসতে দিতনা অথচ মিরের জন্মের আগে ওদের মেয়ে দুটির যত ভার তারা র ওপরেই ছিল। কিন্তু বাড়ি র একমাত্র পুত্র সন্তান মির হওয়ার জন্য বংশপরম্পরায় অর্ধেক সম্পত্তির মালিক মির ই হত , এবং এটা কারোর জন্য ই স্বীকার করা সহজ ছিল না।মীরের মৃত্যু র রহস্যটা কি এভাবেই চাপা পড়ে যাবে নাকি জানা যাবে সেদিন আসলে কি হয়েছিলো?
DU LIEST GERADE
গোচরে - অগোচরে
Mystery / Thrillerগোচরে - অগোচরে ঘটে যায় সবই ভুল ভেবোনা আমায় আমি নয় কবি আমাদের গোচরে অগোচরে অনেক কিছু ঘটে যায় যা আমাদের জীবনের রহস্যের মতোই রয়ে যায় কখনো খোলসা করে দেখেছো কি আসল সত্যিটা কি হতে পারে।