চৌধুরী বাড়ির মধ্যে এখন থমথমে ভাব। বাড়ির একমাত্র বংশপ্রদিপ আজ নিভে গেল। তারা র অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে।ও বারবার জ্ঞান হারাচ্ছে । বাড়ির সবাই শোকে নিস্তব্ধ।
কোথা থেকে যে কি ঘটে গেল কেউ ই বুঝতে পারছেনা। তারা ও রিজুর বিয়ের আট বছর পর ওদের এই প্রথম সন্তান মির যার জন্য ওদের কত কষ্ট ই না করতে হয়েছে রাজ্যের সব ডাক্তার এবং মন্দির ওদের চেনা। এতো আত্মত্যাগ ও কষ্টের পর ওদের এই দুই বছরের ফুটফুটে বাচ্চা এভাবে মারা যাবে, এই সত্যটা ওদের জন্য শুধু মাত্র একটা দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়।পুরো চৌধুরী পরিবার এখন ভেঙ্গে পড়েছে কেউ কাউকে সামলানোর অবস্থায় নেই।এমন সময় হঠাৎ চৌধুরী বাড়িতে পুলিশ এলো। পুলিশের এমন আগমনে সবাই একটু অবাক হয়ে গেল।"মাফ করবেন চৌধুরী মশাই আমরা এখানে এসেছি মীরের হত্যাকান্ডের ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে দয়া করে আমাদের সাথে এই তদন্তে একটু সহযোগিতা করবেন।"
চৌধুরী মশাই গম্ভীর ভাবে জিজ্ঞাসা করলেন "আপনাদেরকে এখানে কে ডেকেছে? আর কে বলেছে আমার নাতি কে হত্যা করা হয়েছে?"
রিজু এগিয়ে এসে বলল,
"আমি ডেকেছি পুলিশকে কারণ, এটা কখনোই সম্ভব নয় যে একটা দুবছরের বাচ্চা বাড়ির সবার অগোচরে বাড়ি র পেছনের দিকে চলে যায় আর তারপর তার মৃতদেহঃঃ হুঃহঃ"
এরপরের কথাগুলো রিজু আর বলতে পারল না এবং কান্নায় ভেঙে পড়ল, পুলিশের লোক তখন ওকে সান্ত্বনা দিতে লাগল।
"আমরা আপনার কষ্ট বুঝতে পারি কিন্তু যখন কেস ফাইল হয়ে গেছে তখন কেসটা আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতেই হবে এবং এর জন্য আমাদের মিরের দেহটা ময়না তদন্ত করতে হবে তবে আমরা সব সঠিকভাবে তদন্ত করতে পারব। আপনি কি মিরের দেহটা ময়না তদন্ত করার অনুমতি দেবেন?"
বাড়ির সবার মুখে একটা অসংগতির ছাপ পড়ে গেল তারা জোরে জোরে কাঁদতে লাগল এবং বলল যে
" আমার ছেলের শরীরকে আমি কাটা- ছেড়া করতে দিতে পারবো না। এটা আমি মেনে নিতে পারি না । ওগো তুমি ওদের কে বারন করো।"
রিজু কারও কোনো কথায় সাড়া না দিয়ে মিরের দেহটা ময়না তদন্তের জন্য পুলিশকে সঁপে দিল।পরেরদিন সকালে মিরের দেহটা পুলিশ চৌধুরী বাড়িতে দিয়ে গেল। মিরের সব সৎকর্ম সম্পাদন করে যখন রিজু,অতিক ও চৌধুরী বাবু বাড়ি ফিরে এলো তখন পুলিশ আগে থেকেই ওদের অপেক্ষা করছে। রিজু জিজ্ঞাসু দৃষ্টির জবাবের উত্তরে পুলিশের মেজ বাবু অনিমেষ আইচ বললেন
"ময়না তদন্তের রিপোর্ট চলে এসেছে , আমি আপনাদের এটা ই অবগত করাতে এসেছিলাম।"
সঙ্গে সঙ্গে রিজু বলে উঠলো
“তা ময়না তদন্তে কি বলছে?”
অনিমেষ বাবু বললেন
“যত সম্ভব রিপোর্ট থেকে এটাই জানা গেল যে মীরের মৃত্যু জলে ডুবে হয়েছে কিন্তু মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেই হয়তো ওর মাথায় কোন ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত করা হয়েছে তারপর ও জলে ডুবে মারা গেছে অথবা ওকে কেউ জলে ফেলে দিয়েছে অজ্ঞান অবস্থায় ।আঘাতের চিহ্নটা কি থেকে হয়েছে এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না তবে কোন ভারী জিনিসই হতে পারে এটা আমাদের ময়না তদন্তের ডাক্তার বললেন ,মাথায় আঘাতের ফলে কিছুটা রক্ত বেরিয়েছে, যে জিনিস দিয়ে আঘাত করা হয়েছে তাতেও হয়তো রক্ত লেগে আছে এবং যে আঘাত করেছে তার হাতের ছাপ ও পাওয়া যাবে। তাই যদি অনুমতি দেন আমরা এই ঘরটা এবং যেখানে মৃতদেহ পাওয়া গেছে ওইখানে একটু সার্চ করব, আমরা সার্চ ওয়ারেন্ট সাথে করেই এনেছি কারণ এখন এটা শুধু দুর্ঘটনা বলে স্বীকার করা যাবে না এটা খুন ও হতে পারে।
এবং তদন্তের জন্য আমরা আপনাদেরকে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও করতে পারি তাই আমাদের সাথে সহযোগিতা করুন এবং আমাদের সন্দেহ থেকে কেউ ই বাদ যাবে না সেটা মীরের মা-বাবাও নয়।”
চৌধুরীবাবু প্রথম থেকে কিছুই বলেননি কিন্তু শেষে বলে উঠলেন যে
“মির আমাদের একমাত্র বংশের প্রদীপ ছিল। তাকে আমরা কিভাবে কেউ মারতে পারি আমরা সবাই ওকে প্রচুর ভালোবাসতাম। ও আমাদের নাতি ছিল আর রিজু তো নিজেই পুলিশকে খবর দিয়েছে। নইলে তো আমরা এটাকে দুর্ঘটনায় মনে করেছিলাম। তাহলে আপনি আমাদের কি করে সন্দেহ করতে পারেন?”
রিজু বলে উঠলো
“আমার ছোট ফুটফুটে বাচ্চাটা কার কি ক্ষতি করল ,কার এত রাগ ছিল যে ওকে প্রাণেই মেরে ফেলল ,আপনি যাকে সন্দেহ করার করুন ,এবং জিজ্ঞাসাবাদ করার করুন , আপনার যা ইচ্ছা আপনি ,তাই করুন শুধু আমার ছেলেকে যে হত্যা করেছে তাকে শাস্তি দিন।”
অনিমেষ বাবু নিজের পেছনে থাকা কনস্টেবল গুলোকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়লেন এবং তল্লাশি শুরু করলেন ও কিছু কনস্টেবল কে বাড়ির পিছনের দিকে পাঠালেন , ঘন্টাখানেক পর তল্লাশি চালিয়ে ও কিছু সন্দেহজনক না পেয়ে হতাশ হয়ে চৌধুরী পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন ।পুলিশের সন্দেহ কি সত্যি বাড়ির কেউই মীর কে খুন করেছে নাকি বাইরের কেউ।
أنت تقرأ
গোচরে - অগোচরে
غموض / إثارةগোচরে - অগোচরে ঘটে যায় সবই ভুল ভেবোনা আমায় আমি নয় কবি আমাদের গোচরে অগোচরে অনেক কিছু ঘটে যায় যা আমাদের জীবনের রহস্যের মতোই রয়ে যায় কখনো খোলসা করে দেখেছো কি আসল সত্যিটা কি হতে পারে।