প্রথম পর্ব

12 0 0
                                    

কিউরিও শপে জিনিসটা দেখেই মনে ধরে গেছিল আমার। পুরনো আমলের একটা আয়না। উচ্চতায় প্রায় সাড়ে ছয় ফুট মতো। পালিশ করা গাঢ় কালচে-বাদামি মাহোগনি কাঠের ভারী ফ্রেমে বেষ্টিত। তার ভিতর থেকে ঝকঝকে কাঁচটা থেকে-থেকে ঝলমল করে উঠছে।
- "খুব ভাল জিনিস স্যার," কিউরিও শপের মালিক এক গাল হেসে বললেন, "খাঁটি নবাবী আমলের আইটেম। প্রথমে এই আয়নাটা লক্ষ্ণৌ'র নবাবদের সম্পত্তি ছিল। নবাবী রাজ উঠে যাওয়ার পর বহুদিন ধরে এর মালিকানা ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে। তারপর অনেক হাত ঘুরে....আজ স্বাধীনতার এত বছর পর শেষমেশ এর জায়গা হয়েছে আমার এই দোকানে।"

কাঁড়িখানেক টাকা খরচ করে জিনিসটা কিনেই ফেললাম। কিউরিও শপ থেকেই লোক এসেছিল, তাদের কে বলে ভারী আয়নাটা আমার শয়নকক্ষে সেট করিয়ে দিলাম। বাহ্....চমৎকার! এইবার আমার এই ঘরের আন্তরিক সজ্জাটা যেন পূর্ণতা পেল। এমনিতেই আমি অ্যান্টিকের পোকা; আদ্যিকালের সব জিনিসপত্র দিয়ে ঘরটা পুরো ঠাসাঠাসি। তাও এতদিন ধরে কোথাও যেন মনে হতো, কিছু একটার অভাব রয়ে গেছে আমার সংগ্রহের তালিকায়। আজ সেই অভাবটা ঘুচে গেল। এতগুলো টাকা এক ধাক্কায় ভস্মীভূত করার দুঃখটাও মুহূর্তের মধ্যেই উবে গেল....তার জায়গায় জন্ম নিল এক অনাবিল তৃপ্তি।

দুই দিন সবকিছু একদম ঠিকঠাক চলল। তৃতীয় দিন রাতে আমাদের বাড়ির কাজের লোক বিনয় দা আমার শয়নকক্ষে এসে হাজির।
- "কী হল বিনয় দা?"
- "দাদাবাবু, আমি আর ওই ঘরে শুতে পারব না।"
- "সেকি! কিন্তু কেন?"
- "রাতের বেলা মনে হয় কেউ যেন আমার ঘরের উপরে ছুটে বেড়াচ্ছে। সারারাত ধরে ধুপধাপ শব্দ পাই। আবার মাঝেমধ্যে মনে হয় কেউ যেন ভারী কিছু একটা জিনিস ঘরের মেঝের উপর দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।"

বলে কী বিনয় দা! তার ঘরের ঠিক উপরেই তো আমার এই শোওয়ার ঘর। অর্থাৎ সে যদি উপর থেকে কোনও শব্দ পায়, তার উৎস নির্ঘাত আমার এই শোওয়ার ঘর থেকেই। কিন্তু আমি তো রাতে ঘরের মধ্যে পায়চারি করি না। তা ছাড়া মাঝরাতে কোনও ভারী জিনিস নিয়েও বা টানাটানি করতে যাব কেন? সারাদিন অফিসে খেটেখুটে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরি। এসে দুটো নাকে-মুখে গুঁজেই শুয়ে পড়ি। এক ঘুমে কখন যে রাত কাবার হয়ে যায় বুঝতেই পারিনা। তাহলে বিনয় দা এইসব কী বলছে?

বন্দিনীحيث تعيش القصص. اكتشف الآن