জাত গোখরো

15 1 0
                                    

"আমি একজন চেইন স্মোকার!" সিগারেটের প্যাকেটটা বন্ধ করতে করতে মন্তব্য করলাম।

তিক্ত একটা অনুভূতিতে ভরে উঠেছে মন। গত সাড়ে তিন ঘন্টা কাটাতে হয়েছে বাসে। বাস থেকে নেমেই দৌড়াতে হয়েছে। সাত মিনিটের রাস্তা তিন মিনিটে পাড়ি দিতে হয়েছে এখানে পৌঁছতে। সময়ের হিসেবে কিছুটা গড়বড় হয়ে গেছে বলা যায়। পাক্কা চৌত্রিশ মিনিট লেট!

বাসে উঠার সিদ্ধান্ত নেবার জন্য নিজেকে ধরে লাত্থাতে ইচ্ছে করছিলো। আধ ঘন্টার রাস্তা সাড়ে তিন ঘন্টা জ্যামে বসে কাটাতে হলে যে কারোরই সম্ভবত নিজেকে না হয় অন্যকে ধরে লাত্থাতে ইচ্ছে করবে। যেহেতু অন্যকে এখানে লাত্থানো সম্ভব না, তাই নিজেকেই লাত্থানোর ইচ্ছেটা উগ্র হয়ে উঠে। কিংবা কে জানে, আমিই হয়তো ভুল ভাবছি।

এই মুহূর্তে আমার সামনে যে বসে আছে, তাকে একটা বাচ্চা ম্যামথের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। লোকটার যে সাইজ, ঐ সাইজের একটা তিমির শরীরে যে পরিমাণ চর্বি পাওয়া যায়, সম্ভবত এর শরীর থেকে তার চেয়ে একটু হলেও বেশী চর্বি পাওয়া যাবে। ফর্সা চেহারাটা লাল হয়ে আছে। কিছুটা ঘাম দেখা যাচ্ছে নাকের উপর। অথচ রুমের তাপমাত্রা এগারো ডিগ্রীও হবে কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে।

যদিও সাড়ে তিন ঘন্টা ঠাটা পড়া রোদে জ্যামে বসে থেকে সাত মিনিটের রাস্তা তিন মিনিটে দৌড়ানোর পর এই ঠান্ডায় খুব একটা খারাপ লাগছে না। তবে এটাও ঠিক, খুব বেশীক্ষণ এই ঠান্ডা পরিবেশ সহ্য হবে না শরীরের। ঘামগুলো শুকিয়ে যাবার কিছুক্ষণের ভেতরেই অসহ্য লাগা শুরু হবে এই তাপমাত্রা।

"আপনি যে চেইনস্মোকার, সেটা আমিও জানি। আমি নিজে আপনার চেয়ে বড় চেইনস্মোকার। দিনে কমপক্ষে পাঁচ প্যাকেট লাগে। কিন্তু... এখানে আমরা কেউই সিগারেট টানি না।" নাক ঝাড়তে ঝাড়তে বলে উঠলো বাচ্চা ম্যামথ। "অফিসটা নতুন, জানেনই তো। আর... ইট'স আ নো স্মোকিং জোন। তবে..." ডান হাতটা আগে বাড়াতে কিছুটা কসরস করতে হলো তাকে, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। টেবিলের উপর রাখা একটা বাজারের বাটন টিপতে টিপতেই হাঁপিয়ে উঠেছে। "আপনার কোন অসুবিধে হবে না আশা করি। আমার নিজের এবং আপনাদের কথা চিন্তা করে সিগারেটের বিকল্প হিসেবে অন্য জিনিস রেখেছি।"

কথাগুলো শেষ করতে না করতেই যে দরজা দিয়ে এই রুমে ঢুকেছি, সেটা খুলে গেলো কোন শব্দ না করে। চোখের কোণা দিয়ে দেখতে পেলাম, এক হাতে একটা কাগজের এনভেলপ, আরেক হাতে ছোট কাগজের তৈরী প্যাকেট নিয়ে এক চব্বিশ পঁচিশ বছর বয়েসী তরুণী ঢুকলো রুমটাতে। জিনিস দুটো টেবিলের উপর রেখে পাশের একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো।

"হ্যালো!" রিন রিনে কন্ঠে বলে উঠলো মেয়েটা। আমি হালকা মাথা নাড়তেই চোখ ফেরালো। বাচ্চা ম্যামথের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট ইংরেজীতে বলে উঠলো। "প্যাচ এগুলোই তো, মিষ্টার অরবিন্দ? ব্র্যান্ড ঠিক আছে?"

"হ্যাঁ! আইয়ুব মেহমুদ দেখি মনে রেখেছে আমার চয়েজ।" মাথা নাড়লো বাচ্চা হাতি, ওরফে এক্স র' এজেন্ট অরবিন্দ স্যান্ন্যাল। "পরিচিত হোন," বাম হাতটাকে কসরত করে উঁচু করতে করতে আমার দিকে চোখ নাচালো। "কায়নাত আবেদীন আয়াত, ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স। এর নামই আপনি শুনেছেন আমার কাছে।" কেউ যে সরাসরি কাউকে এভাবে ইন্টেলিজেন্স সদস্য বলে পরিচয় করিয়ে দেয়, তা এই ম্যামথের সাথে পরিচয় না থাকলে জানা থাকতো না আমার। অনেকদিন ধরে চিনি একে, তাই আর অবাক হলাম না। হাতটাকে একটু ঘুরিয়ে আবার বলে উঠলো। "সাইফুল খন্দকার, ফ্রিল্যান্সার।"

এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকালাম। মেয়েটা সুন্দরী, এ ব্যাপারে যে কেউ একমত হবে আমার সাথে। তবে আমি যা দেখলাম, তা হয়তো অনেকের চোখে পড়বে না। হালকা সবুজ চোখ দুটো এই মুহূর্তে কোনকিছুই প্রকাশ করছে না। ঠান্ডা চোখ, বুকে হালকা কাঁপন তুলে দিতে যথেষ্ট।

জাত খুনী এই মেয়েটা, মনে মনে স্বীকার করলাম। কিংবা বলা যায়, জাত গোখরো!

*******

আমি একজন দেশদ্রোহী!

হুম, ঠিকই বলেছি। অন্তত আমার যে ধরণের কাজ, তাতে যে কেউ দ্বিতীয়বার চিন্তা না করেই এই তকমা দিয়ে দেবে। এবং এই বিষয়ে পুরোপুরি একমত। বাস্তবেই আমি একজন দেশদ্রোহী। তা না হলে কি আর দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাইরের দেশের ইন্টেলিজেন্সগুলোর কাছে মোটা দামের বিনিময়ে বিক্রি করি?

আট বছর ধরে ফ্রিল্যান্স করছি বিভিন্ন ইন্টেলিজেন্সের হয়ে। তার আগে সাড়ে ছয় বছর কি কাজ করেছি, সেই ব্যাপারে কাউকেই কখনো কিছু বলতে বাধ্য নই। তবে আন্দাজ করাটা কঠিন কিছু নয় বোধহয়। যাইহোক!

সাড়ে ছয় বছর সময়টাতে যে আমি আমার সেক্টরে খুব ব্রিলিয়ান্ট কেউ ছিলাম, সেই দাবী করবো না। বরং আমার তখনকার কলিগদের মতে, সবচেয়ে লো ক্লাসদের ভেতরে পড়ি বোধহয়। এমন নয় যে এসাইনমেন্টগুলোতে গড়বড় করে ফেলতাম। ফিল্ডের কাজগুলো আমাকে তেমন টানতো, তা বলাটা অন্যায় হয়ে যাবে। আমি প্রচন্ড আরামপ্রিয় এবং ভোজনরসিক একজন মানুষ। সেই সাথে চেইন স্মোকার। স্বাভাবিকভাবেই ফিটনেস ব্যাপারটায় আমার কোন চিন্তা ছিলো না, তবে আমার বসদের চিন্তা ছিলো এই ব্যাপারে। এ কারণেই সাড়ে ছয় বছরেই ক্যারিয়ারটা শেষ হয়ে গেছিলো।

নিজের ক্যারিয়ারের লুজার মানুষটা কিভাবে যেন পরবর্তীতে ভেলকি দেখাতে শুরু করেছিলাম, আমি নিজেও জানি না। এটা দাবী করবো না যে বর্তমান পেশায় আমি শ্রেষ্ঠ বা অন্যতম! অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, বিভিন্ন দেশের এজেন্ট এবং মার্সেনারীদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়েছে, সম্পূর্ণ নতুন করে এই নতুন ক্যারিয়ারটা সাজাতে হয়েছে। এবং বিশ্বাস করুন, এই কাজে বেশ দক্ষ এখন আমি। তা না হলে এত ঘন ঘন ডাক পড়তো না বিভিন্ন ইন্টেলিজেন্সের কাছ থেকে।

আজ থেকে একশো বছর আগে বলুন কিংবা কয়েক হাজার বছর আগে, সব সময়েই একটা জিনিসের প্রচুর দাম ছিলো। সেটা হচ্ছে তথ্য। সব জিনিসের চাহিদা উঠানামা করলেও "তথ্য" নামক পণ্যের চাহিদা কখনোই কমে না, বরং সময়ের সাথে সাথে তা বাড়ে।

বিভিন্ন বিষয়ের উপর নিখুঁত কোন তথ্য থাকতে হবে আপনার কাছে, সেই সাথে আপনাকে জানতে হবে কোথায় ঠিক কি পরিমাণে তা বিক্রি করতে হবে। এবং অবশ্যই, কি দামে বিক্রি করতে হবে। এই কয়টা দিক সামাল দিতে পারলে এই পেশায় যে কেউই উন্নতি করতে পারে বোধহয়। অন্তত আমার মতো লুজার যখন পেরেছে, মনে হয় প্রায় সবার পক্ষেই উন্নতি করা সম্ভব।

আগেই উল্লেখ করেছি, আমি একজন দেশদ্রোহী। আশা করি এবার পরিষ্কার হয়েছে বিষয়টা। জানি, খারাপ মানুষ আমি সাধারণ মানুষের কাছে। তবে সত্য বলতে বিষয়টাকে কখনোই এভাবে দেখি না। নিজেকে বরং একজন ভালো ব্যবসায়ী বলে ভাবতে পছন্দ করি, যে কি না ভালো খদ্দেরের কাছে ভালো দামে তার পছন্দের পণ্য বিক্রি করতে ভালোবাসে! আর্টিস্ট বলবো না, এখনো সেই পর্যায়ে হয়তো যেতে পারিনি। এরচেয়ে ব্যবসায়ী শব্দটা নিজের কাছে ভালো লাগে।

ইয়েস, আই এম আ বিজনেসম্যান।

*******

কালো রঙের সিল্ক ফুল স্লিভ শার্ট, একই রঙের প্যান্ট, সাদা চিকন টাই। শার্টের স্লিভ অর্ধেকটা গোটানো। বুকের দু'পাশ স্বাভাবিকের চেয়েও একটু বেশী উঁচু হয়ে আছে। হালকা একটু বাঁকা হয়ে বসে আছে চেয়ারে। রোমান্টিক ধাঁচের যে কোন পুরুষের কাছে মেয়েটাকে একটু বেশীই আবেদনময়ী বলে মনে হবে।

সুন্দরী মেয়েটা, আগেই বলেছি। তবে হাত দুটো দেখলে যে কেউই বুঝবে, এই মেয়ে অন্য দশটা মেয়ের মতো অবলা নয়। বরং অনেকটাই শক্ত। ক্যালিফোর্নিয়ার সেই ফাইটার ডায়েট ওয়র্কআউটের ফাউন্টার পলিন নোডিনের মতো যদি এই মেয়ের সিক্স প্যাক থাকে, তাহলেও অবাক হওয়া যাবে না বোধহয়। এর সাথে যদি চোখের দিকে তাকানো হয়, আমি যে ক্যারিয়ারে ছিলাম একই ক্যারিয়ারের যে কারও মাথায় এলার্ট এলার্ম বাজা শুরু হয়ে যাবে। জাত খুনী এই মেয়ে, শুধু শুধু বলিনি।

তবে এই মুহূর্তে একেবারেই শান্ত দেখাচ্ছে তাকে। ঠোঁটে মিষ্টি একটা হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। অন্য কোন মেয়ে হলে হাসিটা অবশ্যই মোহনীয় লাগতো, এ ব্যাপারে গ্যারান্টি দেওয়া যায়। কে জানে, হয়তো ডিনারও অফার করে ফেলতাম অন্য কোন মেয়ে হলে!

ইচ্ছে না থাকলেও হাসি ফুটিয়ে রাখতে হচ্ছে বলে কিছুটা বিরক্ত হয়ে আছি। দ্রুত এখানকার কাজটা শেষ করে আবার ফিরতে হবে। ঠিক তিন চার ঘন্টা সময় পাবো ব্রাসেলসে ফিরে যাবার জন্য। তা না হলে রোমের ফ্লাইটটা মিস করতে হবে। গত দশ পনেরো বছরের ইতিহাসে সম্ভবত এরকম জ্যাম আর দেখা যায়নি এখানে। ফেরার সময়ও যদি এরকম জ্যাম থাকে, তাহলে সব প্ল্যান পন্ড হয়ে যাবে। এবং এই মুহূর্তে কিছুতেই সেটা চাইনা।

"নিকোটিন প্যাচ!" এমন সময় গড় গড় করে উঠলো অরবিন্দ সান্ন্যাল। তার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম, মেয়েটার নিয়ে আসা কাগজের প্যাকেটটা খুলে ভেতরে দুটো আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়েছে। "সিগারেটের বদলে এগুলো লাগাতে পারেন কিন্তু। বিভিন্ন ধরণের নিকোটিন প্যাচ আছে কিন্তু বাজারে। আমার এখানেও স্টকে আছে। তবে মেহমুদকে বলেছিলাম আয়াতের কাছে এক প্যাকেট পাঠাতে। আপনার এবং আমার জন্য- অবশ্যই!"

"ফিফটিন এমজি!" বড় করে শ্বাস নিলাম। "এর নিচে হলে সিগারেট ভালো লাগে না। মনে হয় পুরিয়ে ঘাস টানছি।"

"হুম," মাথা নাড়লো এক্স র' এজেন্ট। "আই ডিড মাই রিসার্চ, সাইফুল। ফিফটিন এমজির ব্যবস্থাই করা হয়েছে। যদিও আমি হাইয়েষ্ট এইট এমজিতেই সন্তুষ্ঠ!" প্যাকেটের ভেতর থেকে দুটো প্যাচ বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো। "তবে বেশীরভাগ সময় সিক্স এমজিতে সয়ে নিই আর কি!" হাসি ফুটে উঠলো তার চেহারায়। চোখ টিপলো। "সিক্স এমজির চারটা এক সাথে মেরে দিই।"

প্যাচ দুটো হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "ফিফটিন?"

"ফিফটিন!" মাথা নাড়লো অরবিন্দ। সেই সাথে নিজের শার্টের ডান স্লিভ গোটাতে শুরু করলো।

অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, সত্যি চারটা নিকোটিন প্যাচ লাগানো আছে সেখানে। একে একে সবগুলো প্যাচ খুলে ফেললো সে। প্যাকেট থেকে নতুন চারটা প্যাচ করে লাগিয়ে নিলো আবার। খেয়াল করলাম, প্রতিটি প্যাচ আট এমজির।

"এ শালা দেখি আমার চেয়েও বড় খোর!" মনে মনে হেসে উঠলাম। বাঁ হাতের স্লিভ কিছুটা উঠিয়ে একটা প্যাচ লাগিয়ে নিলাম তাতে। মনে মনে ত্রিশ থেকে উল্টো গুনতে শুরু করলাম।

এর আগেও নিকোটিন প্যাচের দ্বারস্ত হতে হয়েছে আমাকে। এই ব্যাপারটা খুব একটা ভালো না লাগলেও সইয়ে নিতে হয়। এমন না যে আসল সিগারেটের অভাব পূরণ করতে ব্যর্থ এই জিনিসটা। তবে, দুধের স্বাদ কি আর ঘোলে পাওয়া যায়?

গোণা শেষ হতেই বড় করে শ্বাস টানলাম। ধীরে ধীরে ভালো লাগতে শুরু করেছে। স্পষ্ট বুঝতে পারছি, ঠিকঠাক ফিফটিন এমজিই এই প্যাচটা। একটুও কম নয়।

"এবার বোধহয় আমরা আমাদের কাজ শুরু করতে পারি।" এবারের হাসিটা অন্তর থেকেই বের হলো আমার।

"অবশ্যই!" এতক্ষণে মুখ খুললো আয়াত নামের আইএসআই এজেন্ট। "ইনফোগুলো এনেছেন?"

তার দিকে নজর না দিয়ে অরবিন্দের দিকে ফিরলাম। "আমার টাকাটা?"

এবার মেয়েটার আনা দ্বিতীয় জিনিসটার দিকে হাত বাড়ালো অরবিন্দ। মাঝারি আকারের এনভেলপটা ঠেলে দিলো আমার দিকে। "এবার ইনফো?"

জ্যাকেটের পকেট থেকে একটা পেনড্রাইভ বের করে আয়াতের দিকে বাড়িয়ে দিলাম। পেনড্রাইভটা নিয়ে অরবিন্দের দিকে চাইলো সে। মুচকি হেসে নিজের ল্যাপটপটা এগিয়ে দিলো লোকটা আয়াতের দিকে।

"প্রত্যেকটা ইনফো চেক করে নিন, মিস আয়াত!" এরপর আমার দিকে তাকালো। "একই কথা আপনার জন্যেও। প্রতিটা নোট গুনে নিন। পরে সমস্যা হলে আমি অরবিন্দ কোন দায় নিয়ে পারবো না কিন্তু!"

কোন কথা না বলে এনভেলপটা তুলে নিলাম। ভেতর থেকে নোটগুলো বের করে একটা একটা করে গুনতে শুরু করলাম। প্রত্যেকটা একশো ডলারের নোট, মোট বাইশ হাজার। গোনা শেষ করে করে টাকাটা এনভেলপে ভরে জ্যাকেটের পকেটে চালান করে দিলাম। প্রচুর খরচ আছে সামনে।

এদিকে পেনড্রাইভটায় থাকা ইনফোগুলো চেক করায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে পাকিস্তানী মেয়েটা। একে একে নজর বুলিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি ফাইলে।

"এখানে আছে এক চতুর্থাংশ।" খুশী খুশী গলায় জানালাম মেয়েটাকে।

"জানি!" ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে চোখ না সরিয়েই জবাব দিলো মেয়েটা। "প্রত্যেকটা আপলোড করছি এখন। এটুকু কনফার্ম হবার পর বাকি ইনফোর কথা আসবে।"

"সাথে আমার পেমেন্টের ব্যাপারটাও আসবে, তাই না?" হাসতে হাসতে মন্তব্য করলাম। তবে মেয়েটার কাছ থেকে কোন সাড়া পেলাম না।

পাক্কা পাঁচ মিনিট পর ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে চোখ সরালো। পেনড্রাইভটা খুলে ল্যাপটপটা বাড়িয়ে দিলো অরবিন্দের দিকে। "ধন্যবাদ!"

"কাজ শেষ আপনার?" ল্যাপটপটা আগের জায়গায় রেখে প্রশ্ন করলো অরবিন্দ। জবাবে শুধু মাথা নাড়লো মেয়েটা। এবার আমার দিকে চাইলো এক্স র' এজেন্ট। "মিনিট দশেকের মতো লাগবে কনফার্ম হতে। ততক্ষণে কফি চলবে?"

"দৌড়াবে!" সংক্ষেপে জবাব দিলাম। আয়াতের দিকে চাইতে সেও মাথা নাড়লো।

"বসুন তাহলে আপনারা দুজন।" কয়েকবার কোত কোত শব্দ করে উঠে দাঁড়ালো। "বাইরের কফিশপ থেকে কফি নিয়ে আসছি আমি সবার জন্য। মিনিট দুয়েকের বেশী লাগবে না।"

*******

মাসখানেক আগে একটা গুজব ছড়িয়ে পড়েছিলো। গুজবটা অনেকটা এরকম, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টেলিজেন্সের কয়েকজন এজেন্টকে দুটো দলে ভাগ করে রাশিয়া এবং ফ্রান্স পাঠানো হয়েছে বিশেষ একটা মিশনে। মিশনটা কি, এ ব্যাপারে ডিটেইলস জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছিলো সম্ভবত কোন একটা টেরোরিষ্ট গ্রুপের পেছনে লেগেছে আর্মি ইন্টেলিজেন্স। ধারণা করা হচ্ছিলো টেরোরিষ্ট গ্রুপটার কাছে এমন কিছুর খোঁজ আছে, যা না কি পাল্টে দিতে পারে টেরোরিজমের সঙ্গাকে। বিশেষ করে রিলিজিয়াস টেরোরিজমের যে রূপটা আজ আমরা দেখতে পারি সাড়া বিশ্বে, সেটা পাল্টে দেবার মতো কিছু একটা আছে সেই গ্রুপটার হাতে, এরকম একটা খবর উড়ে বেড়াচ্ছিলো। এবং, আর্মি ইন্টেলিজেন্সের টীম দুটোর উদ্দেশ্য ছিলো সেই টেরোরিষ্ট গ্রুপটাকে শেষ করে দেওয়া।

স্বাভাবিকভাবে এইসব ক্ষেত্রে যা হয়, একই সাথে ব্যাপারটা আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে বিভিন্ন ইন্টেলিজেন্সের কাছে। এখানেও এরকমটাই ঘটেছে। কয়েকটা দেশের ইন্টেলিজেন্স খোঁজ করছে এইসব এজেন্টদের এবং তাদের উদ্দেশ্যটা কি তা জানার জন্য।

সতেরোদিন আগে আমার সাথে যোগাযোগ করেছিলো অরবিন্দ। আইএসআইয়ের এক পুরনো বন্ধু না কি যোগাযোগ করেছিলো তার সাথে। পুরো ব্যাপারটা জানার জন্য আগ্রহী তারা।

পুরো কাজটাকে কয়েকটা ভাগে ভাগ করে নিয়েছিলো এক্স র' এজেন্ট। তার এক ভাগের দায়িত্ব দিয়েছিলো আমার উপর। ফ্রান্সে যে এজেন্টদেরকে পাঠানো হয়েছে, তাদের পরিচয়টা শুধু খুঁজে দিতে হবে আমাকে।

কাজটা শুনতে যতটা সহজ মনে হয়, ততটা সহজ নয় মোটেও। এ ধরণের কাজে হাজার হাজার তথ্য পাওয়া যায় বিভিন্ন সোর্স থেকে। সেসবের ভীর থেকে বিভিন্নভাবে ছেঁকে বের করতে হয় আপাত সঠিক তথ্যগুলোকে। তারপর সেগুলো কয়েক ধাপে চেক রিচেক করার পর পাওয়া যায় আসল তথ্যটা।

পুরো কাজটা করতে ইতোমধ্যেই আমার দেনা পড়ে গেছে আঠেরো হাজার ডলারের মতো। তবে লাভের তুলনায় সেটা কিছুই নয়। যে তথ্যটুকু পাকিস্তানী মেয়েটার হাতে তুলে দিয়েছি কিছুক্ষণ আগে, এটা আসলে এক চতুর্থাংশ। এর জন্যে ইতোমধ্যেই বাইশ হাজার পকেটে ঢুকলো। যদিও আজকেই ফ্লাইট ধরার আগেই আঠেরো হাজার দেনা চোকাতে হবে। বাকি থাকবে মাত্র চার হাজার ডলার। তবে সপ্তাহখানেকের ভেতর আরও তিনবার এরকম বাইশ হাজার করে ঢুকবে আমার পকেটে, এবং খুশীর খবর হলো, পরবর্তী তিনবারের একবারও অন্য কাউকে এই টাকার ভাগ দিতে হবে না আমাকে।

স্বীকার করতেই হচ্ছে, দিনকাল ভালো যাচ্ছে আজকাল।

*******

সেলফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছি। বিরক্ত এবং কিছুটা শঙ্কিত হয়ে পড়েছি, অস্বীকার করবো না।

দুই মিনিটের কথা বলে আট মিনিট ধরে গায়েব হয়ে আছে এক্স র' এজেন্ট অরবিন্দ। এতক্ষণ তো লাগার কথা নয়, অন্তত ওর কথা ঠিক হলে।

আমি যে পেশায় আছি, সেখানে অন্তত এরকম সময়ে দেরী হওয়া মানে অনেক কিছু হতে পারে। এ কারণেই ব্যাপারটায় মনে মনে কিছুটা শঙ্কিত হয়ে উঠেছি। দুই মিনিটের কথা বলে আট মিনিট ঘুরে আসার মতো মানুষ অন্তত অরবিন্দ নয়।

আমার দেরী হয়ে গেছিলো জ্যামের কারণে, বাসে থাকতে কয়েকবার ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলাম তাকে আমি। এটা স্বাভাবিক, কারণ দূরত্বটা কম নয় মোটেও! আর আজকের জ্যামের কথা ইতোমধ্যেই এই দেশের সবাই জেনে গেছে। কিন্তু কফিশপ তো রোডের অপজিট পাশেই।

পাকিস্তানী এজেন্টের চেহারাও কিছুটা ফ্যাঁকাসে দেখাচ্ছে। স্পষ্ট বুঝতে পারছি, ঘাবড়ে গেছে সে-ও। আমার মতোই বার বার সেলফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাচ্ছে।

"এতক্ষণ বাইরে কি করছে হাতিটা?" খেঁকিয়ে উঠলো এ সময় আয়াত।

"হাতি নয়, ম্যামথের বাচ্চা!" টেনশন কমানোর জন্য বলে উঠলাম। "হাতির চেয়ে ম্যামথের বাচ্চার সাথেই ওর সাদৃশ্য বেশী।"

"এটা খারাপ বলেননি।" হেসে উঠলো মেয়েটা। তবে যে কেউই আন্দাজ করতে পারবে, হাসিটা একেবারে মাপা। ভেতরে ভেতরে শঙ্কিত হয়ে উঠেছে সে-ও।

এমন সময়ে খুলে গেলো রুমের দরজাটা। হেলেদুলে হাসিমুখে তিনটা ওয়ানটাইম কফিমগ হাতে রুমে পা রাখলো অরবিন্দ। কফিমগগুলো টেবিলে নামিয়ে রেখে বড় করে শ্বাস নিলো কয়েকবার। ধীরে ধীরে গিয়ে বসলো নিজের চেয়ারটাতে।

"আজকাল ইয়ং পোলাপানের কাছে মনে হয় কফির চাহিদা অতিরিক্ত!" বিরক্তির সুর তার গলায়। "আরে বাবা, দুই মিনিট লাগে না ঐ কফিশপ থেকে কফি নিয়ে ফিরে আসতে! অথচ দেখো, এই সন্ধ্যেবেলাতেও ভীড় জমিয়ে রেখেছে ছোকড়াগুলো। দেরী হয়ে গেলো!"

কথাগুলো কোনমতে বলেই আবার হা করে শ্বাস নিতে শুরু করলো বাচ্চা ম্যামথ। ধাতস্ত হতে কিছুটা সময় লাগলো তার। এরপর আবার মুখ খুললো, "কি হলো? হা করে কি দেখছো? তিন মগ কফি কি আমি নিজের জন্য নিয়ে এসেছি না কি?"

চুপচাপ একটা কফি তুলে নিলাম আমি। এমন সময় হালকা একটা রিংটোনের আওয়াজ কানে এলো আমার।

"সম্ভবত কনফার্মেশন কল!" উঠে দাঁড়ালো আয়াত। সেলফোনটা দেখিয়ে দরজার দিকে এগুলো। বের হয়ে গেলো রুম থেকে।

কফিতে চুমুক দিয়েই ভ্রু কুচকাতে বাধ্য হলাম। যেটুকু গরম থাকার কথা, তা নেই মোটেও। কোঁচকানো ভ্রু নিয়েই চাইলাম অরবিন্দের দিকে। ব্যাটা কি মজা নিচ্ছে না কি?

প্রায় শোনা যায় না, এমনভাবে বলে উঠলো অরবিন্দ। "মেয়েটা আইএসআই নয়।"

মৃদু চমকে উঠলাম। দ্রুত কফিটা টেবিলে নামিয়ে রেখে একটু ঝুঁকে এলাম অরবিন্দের দিকে।

এক সেকেন্ডের জন্য নিজের ডান হাতটা টেবিলের উপরে উঠিয়েই আবার নামিয়ে ফেললো সে। ঐ এক সেকেন্ডের ভেতরেই অরবিন্দের ডান হাতে শক্ত করে ধরে রাখা সাইলেন্সার লাগানো পিস্তলটা নজর এড়ালো না আমার।

"ওর নাম আয়াত নয়।" পাংশুমুখে উচ্চারণ করলো। "কায়নাত আবেদীন আয়াতকে কিছুক্ষণ আগে তার ব্রাসেলসের ফ্ল্যাটে মৃত অবস্থায় খুঁজে পেয়েছে পুলিশ।"

ভ্রু জোড়া সোজা করলাম এবার। মাথায় চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে আমার।

"পুরো খবরটা শোনার জন্যই কফিশপে দেরী করেছি।" একইভাবে বলে যাচ্ছে অরবিন্দ। "এখনো সব চ্যানেলে লিক হয়নি। মাত্র দুটো নিউজ চ্যানেলে দেখানো হচ্ছে খবরটা। তবে ছড়িয়ে পড়বে খুব দ্রুত। এর মানে বুঝতে পারছো?"

"এ আয়াত নয়!" মাথা নাড়লাম। "তাহলে এ..."

এমন সময় রুমে প্রবেশ করলো মেয়েটা। দ্রুত এগিয়ে এসে বসে পড়লো নিজের চেয়ারে।

নিজের চেয়ারে সোজা হয়ে বসলাম এবার। তাকালাম মেয়েটার চোখের দিকে।

"কনফার্মেশন পাওয়া গেছে," হেসে উঠলো মেয়েটা। "সব ঠিক আছে। উই আর ডান নাও।"

কথাটা শেষ করে তৃতীয় কফিটা তুলে নিলো। অবশ্য একটা চুমুক দিয়েই নামিয়ে রাখলো। বলে উঠলো, "একেবারে ঠান্ডা হয়ে আছে দেখি! এই কফি খাচ্ছেন কিভাবে আপনারা?"

"ঠান্ডা হয়ে গেছে!" নিজের কাঁধ ঝাঁকালাম। মাথায় ঝড় চলছে, কিভাবে মেয়েটাকে আটকানো যায়, সেটাই ভাবছি। সরাসরি মারামারি শুরু করলে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে আমার ফিটনেসহীনতার জন্য। আর তাছাড়া, এখানে যথেষ্ট জায়গাও নেই ডব্লিউ.ডব্লিউ.ই প্র্যাকটিসের জন্য। অন্য কোনভাবে এগুতে হবে। "সম্পূর্ণ দোষ অরবিন্দের। রুমের টেম্পারেচার এমন করে রেখেছে যে ফুটন্ত পানি এনে রাখলেও মিনিটখানেকের ভেতর বরফ হবার আগের পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছবে।"

"তা যা বলেছেন!" সরাসরি আমার চোখের দিকে চাইলো মেয়েটা। এক সেকেন্ডের জন্য প্রশংসা ফুটে উঠলো তার চোখে। এক সেকেন্ড...

এক সেকেন্ডই যথেষ্ট ছিলো অরবিন্দের জন্য। ব্যাটা এমনিতে বাচ্চা ম্যামথ হলেও, সামান্য নাড়াচাড়া করতে গিয়ে কোত কোত করলেও এই এক সেকেন্ডে কোন শব্দ করেনি, যেমন শব্দ করেনি তার হাতের সাইলেন্সার লাগানো পিস্তলটাও।

পরের সেকেন্ডে চেয়ার নিয়ে উলটে পড়ে গেলো মেয়েটা। তৃতীয় সেকেন্ডে আমার চোখে পড়লো, কপালে তৃতীয় নয়ন তৈরী হয়েছে তার।

"একেবারে মেরেই দিলেন?" ঝট করে অরবিন্দের দিকে চাইলাম।

"হ্যাঁ," বড় করে দুটো শ্বাস নিয়ে পিস্তলটা নামিয়ে রাখলো সে। "তা না হলে ও আমাদেরকেই মেরে দিতো। ... চোখ দুটো দেখেই বোঝা যায়,

এ একেবারে গোখরো!"

কথাটা বলেই আবার বড় করে শ্বাস নিতে লাগলো অরবিন্দ। চার পাঁচবার শ্বাস নেবার পর থামলো। মুচকি একটা হাসি দিয়ে আবারও বড় বড় শ্বাস নিতে লাগলো।

"কি হলো আপনার?" হাসতে চেষ্টা করলাম। "একবার শ্যুট করেই হাঁপাচ্ছেন দেখি। হাপানী আছে না কি আপনার?"

যদিও খুব ভালোভাবেই জানি, অরবিন্দের হাপানী নেই।

আরও কয়েকবার বড় বড় করে শ্বাস নিয়ে মুখ খুললো অরবিন্দ। "হারামজাদী... হারামজাদী... বোধহয়... কিছু... একটা... করেছে।" শ্বাস নেবার পরিমাণ বেড়েই চলেছে তার।

"হা?" দ্রুত উঠে দাঁড়ালাম। এক্স র' এজেন্টের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধে হাত রাখলাম। "কাহিনী কি, অরবিন্দ? স্ট্রোক হচ্ছে না কি আপনার? ডাক্তার খবর দেবো?"

অরবিন্দকে আমি চিনি প্রায় পৌনে তিন বছর হতে চললো। এর আগেও কয়েকবার কাজ করেছি। তার মতো ভালো লোক এই লাইনে খুব বেশী একটা নেই। তাই স্বাভাবিকভাবেই এত বিশ্বস্ত একজন লোককে হারাবার রিস্ক নিতে পারি না।

গো গো শব্দ বের হওয়া শুরু করেছে ইতোমধ্যেই অরবিন্দের গলা দিয়ে। নিজের বিশাল চেয়ারটার সাথে যেন নিজেকে মিশিয়ে ফেলার পণ করেছে।

"অরবিন্দ!" এবার সত্যি ঘাবড়ে যেতে বাধ্য হলাম।"কি হলো?... কি হচ্ছে?"

দ্রুত নিজের ফোনটা বের করে হেল্প লাইনের নাম্বারটা উঠাতে উঠাতেই আমার কাঁধ খামছে ধরলো অরবিন্দ। নিজের মুখের কাছে আমার কান নামিয়ে নিলো সে দ্রুত।

"নি... নিক... নিকোটিন প্যাচ!" অনেক কষ্টে উচ্চারণ করলো সে।

"নিকোটিন প্যাচ?"

দশ সেকেন্ড বড় বড় করে শ্বাস নিলো অরবিন্দ। তারপরে আবারও কষ্ট করে মুখ খুললো। "হারামজাদী... জিনিসটা নিকোটিন প্যাচের... নিকোটিন প্যাচের সাথে মিশিয়ে... পালাও!"

হাঁপড়ের মতো উঠানামা করছে অরবিন্দের বুক। প্রতিটি শ্বাস নেবার সাথে সাথে গো গো শব্দের পরিমাণ মনে হচ্ছে বেশ বেড়ে গেছে। তবুও সে চেষ্টা করছে কিছু একটা বলার। যদিও শব্দগুলো পরিষ্কার হচ্ছে না। তবে যে কয়টা শব্দ বুঝতে পারলাম, সেগুলো নিয়ে দ্রুত ভাবতে শুরু করলাম।

"নিকোটিন..." বলেই যাচ্ছে অরবিন্দ। "নিকোটিন... প্যা... প্যাচ... জিনিসটা... তাড়াতাড়ি... ডাক্তারের... কাছে... যাও... জিনিসটা... প্যাচ... নিকোটিন... প্যাচ... ট্রান্স...ট্রান্সডা...ট্রা...ট্রান্সডার্মাল..."

শেষ শব্দটা কোনমতে উচ্চারণ করেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো অরবিন্দ। সেই সাথে চমকে দিয়ে গেলো আমাকে।

"ট্রান্সডার্মাল!" নিজের মনে মনে উচ্চারণ করলাম আমি। "শীট!"

বিষয়টা মাথাতেই আসেনি আমার। দ্রুত হাতের স্লিভ গুঁটিয়ে ফিফটিন এমজির নিকোটিন প্যাঁচটা খুলে ছুঁড়ে ফেললাম।

মেয়েটা আমাদেরকে খুন করার উদ্দেশ্যেই এসেছিলো, এটা পরিষ্কার হয়ে গেছিলো আমার কাছে তখনই, তখন অরবিন্দ বলেছিলো যে মেয়েটা আইএসআই নয়। তবে কি দিয়ে খুন করবে, তা বুঝতে পারছিলাম না। কারণ মেয়েটার হাতে কোন অস্ত্র দেখিনি। কাপড়ের ভেতর শরীরের কোথাও লুকিয়ে রাখা কোন অস্ত্রও ছিলো না। থাকলে অন্তত আমার চোখে পড়তো।

অরবিন্দ যখন মেয়েটাকে শ্যুট করে দিলো, তখন সত্য বলতে কিছুটা স্বস্তিবোধ করছিলাম। কিন্তু আমার সমস্ত স্বস্তি চলে গিয়ে নিজের ভেতর প্রচন্ড আতঙ্ক শুরু হয়েছে তখনই, যখন অরবিন্দ তার শেষ শব্দটা উচ্চারণ করেছে।

চারটা নিকোটিন প্যাচ, প্রতিটি আট এমজি করে। আর আমারটা ছিলো পনেরো এমজির। যদিও এই হিসেবে কোন লাভ নেই। কারণ, আমি তখনই মরে গেছি, যেই মুহূর্তে নিকোটিন প্যাচটা হাতে লাগিয়ে নিয়েছি।

হ্যাঁ, মেয়েটা তার নিজের সাথে অস্ত্র এনেছিলো। নিকোটিন প্যাচগুলোই ছিলো তার অস্ত্র। যা করেছিলো তা খুবই সহজ। নিরীহ নিকোটিন প্যাচগুলোকে ট্রান্সডার্মাল টক্সিন প্যাচে পরিণত করেছিলো সে।

শালী! খেঁকিয়ে উঠলাম আক্ষেপে।

আগেই আন্দাজ করেছিলাম, এ একজন জাত গোখরো!

জাত গোখরোDonde viven las historias. Descúbrelo ahora