আজ আবার তোকে দেখলাম। ফের আমার বুকের মধ্যে দিয়ে একটা বেদনার ঢেউ বয়ে গেল। মাঝেমধ্যে আমি নিজের কাছেও স্বীকার করি না ঠিকই, তবে এটা সত্যি যে আজও আমার দুচোখ কেবল একটিবার তোকে দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলো। পরীক্ষার শেষে বৃষ্টির সন্ধ্যেবেলায়, আমি আশা করিনি যে তোকে দেখতে পাব। দিব্যি ছাতা মাথায় দিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম যে আমার ডান দিক দিয়ে তুই হেঁটে গেলি। তোর ওই বাদামী চোখ, কোঁকড়া চুল, প্রফুল্ল হাসি আর কারো চোখ এড়াক না কেনো, আমার চোখ এড়ায় না। তোকে তোর বন্ধুদের সাথে হাসি ঠাট্টা করতে দেখে আমার খুব ভালো লাগলো। কয়েক সেকেন্ড এর জন্যে মনে হলো সময়টা যেনো থেমে গেছে। তবে বাস্তবে ফিরে আসতেই হল। আমি তাড়াতাড়ি করে গিয়ে কলেজের গেটের বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম তোকে আরেকবার দেখব বলে। ছাতা মাথায় দিদি কে ফোন করার ভান করতে থাকলাম। তোকে এদিকে হেঁটে আসতে দেখে আমি মাথা নিচু করে নিলাম। কেন জানি না তোর চোখে চোখ রাখতে কেমন একটা লাগে আমার। মনে হয় আমার সব লুকিয়ে রাখা কথা বুঝি তুই পড়ে ফেলবি, আর সেটা আমি কখনোই হতে দিতে পারিনা। তুই আমার সামনে দিয়ে হেঁটে গেলি, ঠিক যেমনটা আমি চেয়েছিলাম। তবে তুই আমার দিকে একবারও দেখলি না, আর কেন দেখবি? কে হই আমি তোর? তোর কাছে আমি কেবল একজন সহপাঠী ছাড়া আর কিছুই নই, এটা আমি খুব ভালো করেই জানি। আর কোনোদিন কিছু হয়ে ওঠার আশা ও আমি রাখি না। তাই শুধু তোর দিকে তাকিয়ে রইলাম, যতক্ষণ না তুই রাস্তার ওপারে গিয়ে স্টেশনের দিকে চলে গেলি। আমিও স্টেশন যাচ্ছিলাম, কিন্তু সেই রাস্তা দিয়ে তোর পেছন পেছন যাবার সাহস আমার হলো না। এছাড়া বৃষ্টি ও বেশ জোরে পড়ছে তখন। তাই আমি রিকশায় উঠে গেলাম আর তোর আগেই স্টেশন পৌঁছে গেলাম। তাড়াতাড়ি ট্রেন এসে গেলো, আর আমি তাতে উঠে পড়লাম। ট্রেন ছাড়তে দেখলাম তুই আর তোর বন্ধুরা প্ল্যাটফর্মে উঠছিস। আমি আবার তোকে দেখলাম কিন্তু তুই আমায় দেখলি না। যাক গিয়ে, আমি তোকে দেখতে পেয়েছি তো, এটাই আমার কাছে অনেক। জানিস, সত্যি বলতে কি, এখন আমার কলেজ যাওয়াটা অনেকটাই শুধু একবার তোকে চোখের দেখা দেখতে পাওয়ার জন্য। তোর হাসিটা দেখলে আমার মনে একটা অদ্ভুত শান্তি আসে। আমি রোজ আমাদের সেই দিন স্টেশন যাওয়ার সময়কার কথোপকথনের কথা ভাবতে থাকি, ওই যেদিন তুই আমায় জিজ্ঞেস করলি যে আমার বাড়ি কোথায়। তুই আমার ব্যাপারে না জানলেও, আমি কিন্তু তোর ব্যাপারে সব জানি। এই যেমন তোর বাড়ি কোথায়, কোন স্কুলে পড়েছিস। তুই যে ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করতে ভালোবাসিস, সেটা জানতেও আমার বাকি নেই। আসলে তোর ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম সব কিছুই আমি ঘেঁটে দেখেছি, এবং প্রায়ই দেখি। তোর ছবি দেখতে দেখতেই আমার অনেকটা সময় কেটে যায়। তোর শর্ট ফিল্ম গুলো আমি বারবার করে দেখি। ভালোবাসার মানুষের কন্ঠের স্বর বারবার শুনতে পাওয়ার সৌভাগ্য কয়জনের আর হয়? ওগুলো শুনেই আমি খুশি। ভালোবাসার মানুষগুলো বোধহয় এমনই হয়, আকাশে ফুটে থাকা তারার মতো। এদের কেবল দূর থেকেই দেখা যায়, এদের নিজের করে কাছে পাওয়ার সাধ্য আমাদের কারোর নেই। সেরকমই আমিও নাহয় তোকে দূর থেকেই ভালোবাসব। মাঝেমাঝে ভাবি, কি ভাগ্যবান সেই মেয়েটা যে রোজ তোর ভালোবাসা পায়, তোকে মন ভোরে দেখতে পারে, তোর সাথে কথা বলতে পারে, তোকে ছুঁতে পারে, তোর প্রেমিকা হওয়াটা রোজ অনুভব করতে পারে। রাগ ও হয় আবার ভালো ও লাগে। রাগ হয় এটা ভেবে যে আমি কেনো সেই মেয়েটা হতে পারলাম না। এটা ভেবে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি যে আমি তোর মতো সুন্দর বা স্মার্ট কোনোটাই নই। সুতরাং সে তোর জীবনে না থাকলেও তার জায়গাটা আমি কোনদিনই পেতে পারতাম না। আর ভালো লাগে এটা ভেবে যে তুই একজন ভালো মানুষকে পেয়েছিস এবং তোদের সম্পর্কটা খুবই মজবুত। তুই সত্যিকারের কাউকে ভালোবাসতে পারিস, এটা আমায় সন্তুষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। যাক গিয়ে, অনেক গুলো কথা বলে ফেললাম তোর ব্যাপারে। তোর ব্যাপারে একবার লিখতে শুরু করলে আর শেষ হবেনা। তাই আজ এটুকুই লিখলাম। আবার ক্লাসে বসে তোর দিকে তাকিয়ে থাকার অপেক্ষায় রইলাম। হয়তো এক তরফা ভালোবাসাটা এমনই হয়।
Image: AI generated
YOU ARE READING
কিছু না বলা কথা
Randomযখন আমার মনের কথা শোনার মতো কেউ থাকেনা, তখন আমি এই কাগজ কলমকে আমার বন্ধু হিসেবে পাই। দেখুন আপনাদের পড়ে ভালো লাগে কি না।