"অই, কোথায় তুই? এতক্ষণ সময় লাগে আসতে?" কানে মোবাইল ধরে রেখে কিছুটা রাগ ও বিরক্তি মিশ্রিত কন্ঠে বলল মুখর।
"আরে চলে এসেছি তো। এইতো আর পাঁচ মিনিট," দ্রুত হাঁটার জন্য বর্ষার কথা স্পষ্টভাবে শুনা যাচ্ছে না।
"পাঁচ মিনিট কি শেষ হয় না? বিগত ত্রিশ মিনিট যাবত পাঁচ মিনিট, পাঁচ মিনিট করে যাচ্ছিস।"
"আরে তোর পেছনে আমি। ফোন রাখ," বর্ষা নিজে আরেকটা ধমক দিয়ে ফোন কেটে দেয়।
মুখর নিশ্চিত যে এবারও বর্ষা মিথ্যা বলেছে। তাই সে পেছনে ঘুরে তাকায় না।
সময়টা বর্ষাকাল। তিমিরাচ্ছন্ন আকাশে ঝুমঝুম বৃষ্টি অনবরত ভূমিতে পতিত হয়ে যাচ্ছে'ই। এমন ভেজা দিনে কোথাও যেতে স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি সময় লাগে। কথা হচ্ছিল দু'জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু মুখর ও বর্ষার মাঝে। তাদের বন্ধুত্ব আট-দশটা স্বাভাবিক বন্ধুত্বের মতো হয়নি। বেশ মজা আবার ভয়ংকর ঘটনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাদের এই বন্ধুত্ব।দশ বছর আগের ঘটনা,
মুখর তখন পনেরো বছর বয়সী। মা এবং ছোট ভাইয়কে সাথে নিয়ে এমন'ই এক বৃষ্টির দিনে নানার বাড়িতে বেড়াতে যায়৷ গাড়ি থেকে নামার পর কিছুটা দূরের পথ হেঁটে অতিক্রম করলে তার নানার বাড়ি। এমন কর্দমাক্ত পথ অতিক্রম করতে মুখরের বেশ বিরক্ত লাগছে। কিন্তু নানা বাড়ি যাওয়ার আনন্দ তো আছে; সেজন্য এই সামান্য বিরক্ত লাগাটা সে দূরে ঠেলে দিয়ে হাঁটছে। একই পথের উল্টো দিক থেকে বিরক্তিকর চেহারা নিয়ে মুখরের থেকে বছর খানেক ছোট একটি মেয়ে এগিয়ে আসছে। মুখরের মা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললেন,
"বর্ষা, কেমন আছ, খালামণি?"
"আর কেমন থাকি, আন্টি? এই কাদা আমার জীবন—, ও মাগো! গেলো, আমার কোমড় গেলো," জীবন পর্যন্ত বলে বর্ষা মুখরের মায়ের দিকে তাকায়। সেসময় অসাবধানতার জন্য পা পিছলে যায় এবং বর্ষা ধপাস করে পরে যায়।
মুখরের মা হাসি থামিয়ে বর্ষার দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু মুখর এবং তার ছোট ভাই বর্ষাকে হঠাৎ করে এভাবে পরে যেতে দেখে খিলখিল করে হেসেই চলেছে। তা দেখে বর্ষা প্রচন্ড রাগান্বিত হয়। সে কোনরকমে উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না। কারণ, সে যেই স্থানে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল, সেই স্থানটা এমনিতেও পিচ্ছিল হয়ে আছে। ফলাফল স্বরূপ, সে আবার ধপাস করে পরে যায়। মুখর এবার শব্দ করে হেসে উঠে। বর্ষা নিজের রাগ নিয়ন্ত্রিত করতে না পেরে হাত দিয়ে কিছু কাদা উঠিয়ে মুখরের দিকে ছুঁড়ে মারে। কাদা মাটি টুকু মুখরের মুখমন্ডলে কিছুটা লাগে এবং বাকিটুকু তার কালো বর্ণের টি-শার্টে। মুখরের হাসি মুহুর্তে থেমে যায়। সে নিজের টি-শার্টটি দেখছে। মুখরের মা নিজেও কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে যায়। বর্ষা মুখরের মায়ের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
"আন্টি, উঠতে সাহায্য করো। নয়তো এই খবিশটার মতো তোমারও হাল হবে।"
মুখরের মা বর্ষার কর্দমাক্ত হাতটি ধরে তাকে টেনে তুলে। মুখরের দিকে তাকিয়ে বর্ষা বলে,
"অন্যকে পরে যেতে দেখে দাঁত কেলাতে বা পিশাচের মতো হাসতে নেই। তাকে সাহায্য করতে হয়। বেয়াদব।"
"অই, তুই বেয়াদব কাকে বললি? তুই কাকে বকা দিলি? তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী আজ উদ্ধার করবো আমি।"
মুখর বর্ষার দিকে তেড়ে আসে। বর্ষাও কি কম না-কি! এমনিতেও তার শরীরে কাদা লেগেছে। সেও মুখরের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। মুখর খাবলে কিছুটা কাদা মাটি হাতে তুলে নেয় এবং বর্ষার দিকে ছুঁড়ে মারে। বর্ষা নিজের মুখমণ্ডল বাঁচাতে একপাশে ঘুরে যায়। এতে তার পাতলা কিন্তু লম্বা চুলগুলোতে কাদা মাটি লেগে যায়। বর্ষা হাত দিয়ে নিজের চুল স্পর্শ করে রাগান্বিত হয়ে বলে,
"তুই আমার চুলে কাদা মাখিয়েছিস? তোর নানা-নানিকে ডেকে আনবি সেই ব্যবস্থা করছি আমি," বলতে বলতে নিজের জুতাগুলো একপাশে রেখে বর্ষা মুখরের দিকে এগিয়ে যায়। মুখরের ছোট ভাই অস্ফুটস্বরে বলছে,
"ভাই, দে মাইর। দে মাইর।"
"বর্ষা, মুখর এমন করিস না। থাম তোরা," মুখরের মা দুজনকে থামানোর বৃথা চেষ্টা করছে।
মুখর ও বর্ষার মাঝে চুলাচুলি শুরু হয়েছে। দু'জনের হাত কর্দমাক্ত। এক পর্যায়ে বর্ষা ল্যাঙ দিয়ে মুখরকে ফেলে দেয়। মুখরের মা কাদার ছুড়াছুঁড়িতে আর এগোনোর সাহস পায়নি। কিন্তু সে হাক ছেড়ে তার ছোট ভাইকে ঠিক ডেকেছে। মুখরের ছোট মামা ও নানা এসেছে। মুখরের ছোট মামা বর্ষাকে এবং নানা মুখরকে ধরে ছাড়িয়ে নেয়। তবুও সাপের ন্যায় দু'জন ছ্যাঙ ছ্যাঙ করছে ছুটার জন্য। বর্ষা বলে,
"বলেছি না, তুই না বরং আমি তোর নানাবাড়ির সকলকে এখানে এনে ছাড়ব। আমার সাথে লাগতে আসিস না। সুস্থ হয়ে ফিরতে পারবি না।"
YOU ARE READING
বর্ষণমুখর ভালোবাসা
Romanceঘনিষ্ঠ বন্ধুর প্রতি কখনো প্রেমানুভূতি জেগেছে? ঘনিষ্ঠ বন্ধু থেকে প্রেমিক-প্রেমিকা হওয়াটা কি ভালো কোন বিষয়? না-কি সম্পর্ক নষ্ট করা? বন্ধু থেকে প্রেমিক-প্রেমিকা হওয়ার বিষয়টি আপনার নিকট কেমন? এ বিষয়ে আপনার কি মতামত? এতে সম্পর্কের উন্নতি ঘটে? না-কি মধুর...