হেমন্তের সকাল

198 5 0
                                    

সকাল বেলা পড়ার টেবিলে বসেছি। কিন্তু কিছু একটা যেন মিলছিলো না। মনটা খচখচ করছে। ধরা যাচ্ছিলো না বেসুরোটা ঠেকছে কোথায়! অথচ আমার আনন্দ অনুভুত হওয়ার কথা। বিশেষ একট ভ্রমণ পরিকল্পনা করেছি আমি, ইকবাল আর জেমস। দশ দিনের জন্য আমরা বেড়িয়ে যাচ্ছি। বিশেষ কোন দর্শনয়ি জায়গায় নয় আমরা কেবল হাঁটব গ্রামগঞ্জে ও পথে পথে, নদীর ধারে ধারে। এই রকম সাদামাটা একটা ব্যাপার। পরিকল্পনাটা বেড়িয়েছে আমারই মাথা থেকে অবশ্য আর কারো মাথা থেকে কিছু বের হবে এমন আশা করা বোকামি। ইকবালের মাথায় এ রকম সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনা কখনো দেখা দেয় নি। তবে আমার সব ব্যাপারেই সে আছে। বাসায় সৎ মা থাকায় পরিবারের সাথে সে খাপছাড়াভাবে ঝুলে আছে। কোন ব্যাপারে তাকে বাধা দেওয়ার কেউ নেই। বাসায় ফিরে যাওয়ার বিভিষিকা সব সময় তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। শেষ পর্যন্ত রাতের বেলা তাকে সেখানেই মুখ গুঁজতে হয়।

এক দিনের ঘটনা। ভার্সিটির ট্রেনের জন্য আমি আর ইকবাল অপক্ষা করছি। ট্রেন এসে পড়েছে। ইকবাল ঠেলাঠেলি করে উঠেও পড়েছে, আমি হঠাৎ করে ওকে খামচি দিয়ে ধরে নামিয়ে ফেললাম। সে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল।

আমি বললাম, ’আজ ভার্সিটি যাব না’

’তাহলে!’

’চল অন্য কোথাও যাই’

'কোথায়?’

’আজ চল রেল লাইন ধরে হাঁটব। দেখি কতদূর যাওয়া যায়।’

ঢাকাগামী একটা লোকাল ট্রেনে চড়ে মিরসরাই নেমে পড়লাম। আমি আর ইকবাল সেদিন সারাদিন রেললাইন ধরে হেঁটেছি। কি চমৎকার দিন ছিল সেটা!

বুক সেলফ থেকে ’ইকোনমিক এথ্রোপলজি’ বই আর আমার ছোট-খাট হিসাবের ডায়রি আছে সেটা নামালাম। আগামীকালের গ্রুপ প্রেজেন্টেশনের আমার অংশটির কিছুই করা হয় নি। আজ দুপুরের মধ্যেই বোঝাটা নামিয়ে ফেলতে হবে। আর ক’মাস পরে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছি। কে কোথায় হারিয়ে যাবে-পরষ্পরের প্রতি এক অদ্ভুত আন্তরিকতা অনুভব করছি। নোট নিয়ে সেই রেষারিষিম, ইগো কনফিক্ট নেই।

হেমন্তের সুন্দর সকাল। মা রান্না ঘরে নাস্তা তৈরী করছে। বাবা এখনো ঘুম থেকে ওঠে নি বোধ হয়। আজ সরকারি ছুটি। মিলরি স্কুলও বন্ধ। মিলি আমার পেছনের খাটে বসে তার অংক খাতায় এলামেলো আঁকাআঁকি করছে। থ্রিতে পডুয়া আমার এই ছোট বোনটা এক নতুন খেলা নিয়ে মেতে উঠেছে। ওর অংক খাতার সাদা পাতায় ইচ্ছে মতো আঁচড় কাটবে। পুরো পাতা সে এভাবে ভড়ে ফেলবে। তারপর সে ঐ কিম্ভুতকিমাকার আঁচড়গুলো থেকে বিভিন্ন কিছুর সাদৃশ্য খুঁজে পাবে। আমার কাছে চুটে এসে বলবে, দেখ তো ভাইয়া এটাকে একটা পাখির মতো লাগছে না?

You've reached the end of published parts.

⏰ Last updated: Feb 27, 2014 ⏰

Add this story to your Library to get notified about new parts!

দিন চলে যায়Where stories live. Discover now