সাজিদ ভাত খাচ্ছে। প্রতিবার ভাত মুখে দিচ্ছে আর ভাবছে আসলে সে কি খাচ্ছে। আবার অবাকও হচ্ছে। এ কি করে সম্ভব! গত ২ মাস হলো একই মানুষের রান্না করা ভাত, তরকারি খাচ্ছে অথচ আজকের মতো বাজে রান্না কখনো খায়নি। ভাত এর কোন স্বাদ নেই, তরকারিতে লবণ নেই! সাজিদ ছাত্র জীবনে মেসে থেকেছে। সেখানে এক খালা রান্না করে দিয়ে যেতো। সে খালা মাঝে মাঝে খুব বাজে রান্না করতো কিন্তু আজকের রান্না সে খালার রান্না থেকেও বাজে! তবুও সাজিদ চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। কারণ রান্না নিয়ে কিছু বললে মিষ্টির হয়তো খারাপ লাগতে পারে। রান্না সবসময় ভাল হবে এমন কোন কথা নাই। তাই সে এমন ভাব করে খাচ্ছে যেন রান্নাতে কোন সমস্যাই নাই।
এদিকে মিষ্টিও সাজিদের খাবার ভাব দেখে অবাক হচ্ছে। মিষ্টি সাজিদের বউ। সাজিদ এবং মিষ্টির দুই মাস হলো বিয়ে হয়েছে। বিয়ের আগে কেউ কাউকে চিনতো না। পরিবারের পছন্দে বিয়ে হয়েছে। মিষ্টি আজ ইচ্ছে করেই তরকারিতে লবণ দেয় নি। এর কারণও আছে। মিষ্টি চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে না হলেও গল্প করতে, কথা বলতে ভালোবাসে। বিয়ের আগে ভাবতো যার সাথে তার বিয়ে হবে তার সাথে সারাদিন গল্প করবে, মাঝরাতে একসাথে জ্যোৎস্না দেখবে আর গল্প করবে, একসাথে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিবে আর গল্প করবে। কিন্তু বিয়ের পর সে বুঝতে পারলো ভাবনাগুলো ভুল! সাজিদের সবই ঠিক আছে কিন্তু সমস্যা একটাই সে কম কথা বলে। সাজিদ তার সাথে প্রয়োজনের বেশি একটা শব্দও উচ্চারণ করেনা। যা প্রয়োজনে বা না বলা ছাড়া কোন উপায় নেই শুধু সে কথাগুলোই বলে। অফিসে যাওয়ার সময়, " আমি বের হচ্ছি, দরজা লাগিয়ে দাও" অফিস থেকে এসে ফ্রেস হয়ে টিভি দেখবে। তারপর জিজ্ঞেস করবে, "রান্না হয়েছে?" মিষ্টি খাবার দিবে। সে চুপচাপ খেয়ে রুমে চলে যাবে! এরপর ঘুমাবে, সকালে উঠে অফিসে যাবে। এরকম কথা ছাড়া সাজিদ কোন কথাই বলেনা। মিষ্টি অনেকবার নানা বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সাজিদের তেমন কোন রেসপন্স না পেয়ে নিজেই চুপ হয়ে গেছে। সেদিন অফিস থেকে বিকালের দিকে বাসায় এসেছিলো সাজিদ। সন্ধ্যার দিকে বাইরে যেতে নিলে মিষ্টি জিজ্ঞেস করে, "কোথায় যাচ্ছেন?" সাজিদ উত্তর দেয়, " এই সামনে যাচ্ছি চা খেতে" তখন মিষ্টি বলে, "আমাক বললে কি আমি চা বানিয়ে দিবো না? বাইরে যেয়ে চা খেতে হবে কেন? ভিতরে বসেন। আমি চা বানিয়ে দিচ্ছি।" সাজিদ ছোট করে "আচ্ছা" বলে ভিতরে যেয়ে বসে। মিষ্টি ভেবে পায় না এই লোক এমন কেন! মুখে কি কথা বলতে পারেনা! নাকি কোন সমস্যা আছে! এই বিষয় মিষ্টি কয়েকবার তার মা কে বলতে চেয়েছে কিন্তু বলেনি। কেমন যেন দেখায় তাই আর বলেনি। কিন্তু ইদানিং তার এরূপ অচারণে মিষ্টি অতিষ্ট হয়ে গেছে। তাই আজকে ইচ্ছে করেই এমন বাজে রান্না করেছে মিষ্টি। দেখতে যে সাজিদ রান্না খেয়ে কি বলে! কিন্তু কিসের কি! সে এমন ভাবে খাবারগুলো খাচ্ছে যেন রান্না অনেক সুস্বাদু হয়েছে! মিষ্টি এখন পুরোপুরি হতাশ। এভাবে আর চলবে না। এর কিছু একটা শেষ করতেই হবে। এভাবে সংসার হয়না। মিষ্টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাবার বাসায় চলে যাবে। যতদিন পর্যন্ত সাজিদ নিজ থেকে কথা বলবে না সে আসবেনা।
YOU ARE READING
সাজিদ এবং মিষ্টি
Short Storyঅনেকদিন পর গল্পটা লিখলাম। ছোট গল্প। পড়ে দেখতে পারেন। আশা করি ভাল লাগবে।