শেষ পর্ব

644 38 4
                                    

রুশা চলে যাবার পর অামি যতটা না কষ্ট পেলাম, পলাশ তাঁর থেকে ১০০গুণ বেশি কষ্ট পেলো।
দিনরাত অামাকে সান্ত্বনা দিতে থাকলো।
--- রুশা অার তোর মধ্যে যদি চয়েস বলিস, অামি তোকে চয়েস করবোরে, মাসুদ।রুশা তোর পায়ের নখেরও যোগ্যি না।বল, ইয়াক থু রুশা।

বিভিন্নভাবে রুশার সাথে যোগাযোগও করল ; অামাকে না জানিয়ে।এবং তাঁর ফলাফল সুবিধের হলো না।রুশার মত মেয়েকে ভুলিয়ে ভালিয়ে ভালোবাসানো যে সম্ভব নয়, এটা অামি জানতাম।পলাশও হাল ছেড়ে দিলো।

অামি একা মানুষ! প্রচন্ড দুঃখকষ্টের মাঝে প্রাকটিক্যাল মেন্টালিটি নিয়ে বড় হয়েছি।কেনো যে রুশার মত এক মেয়েতে অাটকে গেলাম!
নিজের বেকুবি দেখে অামি নিজেই বিস্মিত।

পলাশ একটার পর একটা করে তাঁর শ্যালিকা ধরে এনে অামাকে বিয়ে দিবার চেষ্টা করলো।তাবিজ কবচ করালো।পীরবাবা দিয়ে অামায় ফুঁ ও দেওয়ালো।সবশেষে দেখালো সাইক্রিয়া ট্রিস্ট।
দিন দিন অামার অবস্থা অারও খারাপ হলো।
একদিন পলাশকে বললাম,
---দোস্ত, চাকরি ছেড়ে দিয়ে মিডল ইস্ট চলে যাই।
পলাশ কান্নাকাটি করে হুলস্থুল।
---একটা মেয়ের জন্য অামাদের ছেড়ে চলে যাবি?ঐ বেটিই তোর সব! অামরা হলাম গিয়ে ব্যাঙের ছাতা।
---অামার নিজেরই, নিজের উপর কন্ট্রোল নেই দোস্ত।মাঝে মাঝে রাতে ওঠে মরে যেতে মন চায়। সব লজিক নস্ট হয়ে গেছেরে..
পলাশ অাতংকিত হয়ে বলল,
---তুই একা থাকিস তাই রুশাকে বেশি মনে পড়ে, অামার বাসায় এসে থাক।

পলাশের বৌ এক প্রকার জোড় করেই বাসা থেকে অামার জিনিসপাতি নিয়ে গেলো।
বাধ্য হয়ে পলাশদের সাথে থাকতে শুরু করলাম।

তাঁরপর কেটে গেছে অনেক বছর। পলাশের মেয়ের বয়স এখন সিক্সপ্লাস।নাম টিয়া।অামিই দিয়েছি।

প্রায় রাতেই পলাশ তাঁর মেয়েকে নিয়ে অামার ঘরে এসে চুপচাপ বসে থাকে।
কিছু বললেই মাথা ঝাকায়।টিয়াও তাঁর বাবার সাথে মাথা ঝাঁকায়।
পলাশ হতাশার স্বরে বলে,
---তুই যদি এইবার বিয়ে না করিস, অামি মরে যাবো।
অামি জবাব দিই না!

---অারে, রাতে দেখার জন্য ও তো একটা লোক দরকার নাকি??অামি যদি না থাকি তোকে কে দেখবে?তোর টাকাপয়সা কি করবি??

----টিয়ার বরকে দিবো।কি টিয়া? বর কি টাকা চায়??
টিয়া সম্মতির সাথে জোড়ে জোড়ে মাথা নাড়ে।যেনো তাঁর বরের ভীষণ টাকার দরকার!

---তুই কেনো এত কষ্ট পাচ্ছিসরে মাসুদ!"তোর জীবনটা এত শূণ্য কেনোরে মাসুদ!!?
পলাশ বাচ্চাদের মত কাঁদতে থাকে।সাথে টিয়াও কাঁদে।অামার জন্য না, তাঁর বাবার কান্না দেখে কাঁদে।
---মাগো, তোমার এই চাচাটি, সারাটি জীবন মানুষের ইচ্ছা পূরণ করেছে সাধ্যমত।অথচ তাঁর নিজের জীবনে একটিমাত্র ইচ্ছাই পূরণ হয় নি গো মা।
অামি যখন থাকবোনা, এই চাচাটিই তোমার বাবা! তাঁর সাথেও তুমি অামার মত করে কাঁদবে।টিয়া বাবাকে খুশি করতে মাথা নাড়ে।

পরিশিষ্ট :
অাজ টিয়ার বিয়ে।পলাশ একটু পরপর কাঁদছে এবং একই সাথে হাসছে,
একমাত্র মেয়ের বিয়ের
অানন্দে সে দিশেহারা।কিছুক্ষণ পরপর এসে বলছে,
---মাসুদ, তুই ওর কাছে গিয়ে বোস না একটু, অামার কত কাজ দেখতে পাচ্ছিস না?
অামি পলাশের ব্যস্ততার ভঙ্গি দেখে বিরক্ত হই।
চলে যাবার অাগে টিয়া কাঁদতে কাঁদতে
বলল,
---বাবা, অামি মাসুদ চাচাকে অামার সঙ্গে নিয়ে যাই?
অামি হেসে ফেললাম।
পলাশ অাশ্বাসের স্বরে
বলল,
---মাগো, তোমার চাচাকে ছাড়া অামি কিভাবে থাকবো?তবে অামি যখন থাকবো না তখন নিয়ে যেও।

টিয়া অামার হাত ধরে ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে থাকে।
--চাচা, অাপনি কিন্তু প্রতিদিন বিকেলে একবার করে অাসবেন।
অামি মাথা নাড়ি।

টিয়া কাঁদছে ভালো কথা, ওর বরটা কি কাঁদছে নাকি?
ওদের ভালোবাসা দেখে অামি মুগ্ধ হয়ে গেলাম।হে সৃষ্টিকর্তা.. এই মেয়েটার জীবন তুৃমি ভালোবাসা দিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ করে দাও।মেয়েটির পরবর্তী জীবনের সব অশ্রু যেনো সুখের অশ্রু হয়!

জীবন কত বিচিত্র! যে ভালোবাসাকে অামরা খুঁজে বেড়াই তা না পেলেই থমকে যাই।অথচ এর পরিবর্তে যে শত সহস্রকোটি ভালোবাসা নবরূপে অাসে.....

অামি চোখ মুছলাম, রুশার জন্য অামার জীবনে দ্বিতীয় কোনো নারীকে অামি ভালোবাসতে পারিনি সত্যি, কিন্তু এর বাইরে বিভিন্ন ভালোবাসা ও মমতায় অামায় হৃদয় সিক্ত হয়েছে বহুবার.....এই জন্যই বোধহয় বেঁচে অাছি, প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি...

অাচ্ছা কখনো কোনো ঘন শীতের রাতে রুশার কি একমুহূর্তের জন্য অামাকে মনে পড়েছিল??..

বিশেষ কিছুDonde viven las historias. Descúbrelo ahora