মা কিছুতেই রাজি হতে চাইলেন না। এত লেখাপড়া শেখা ছেলের এই পছন্দ! প্রথমে লজ্জা থাকলেও অভির লজ্জা ভেঙ্গে গেল মায়ের নিষেধে। বলল, "মৃত্তিকা ছাড়া অার কাউকে বিয়ে করতে পারব না অামি। । " অনেক মান-অভিমানের পর ছেলেরই জয় হল। বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হলো মৃত্তিকাদের বাসায়। মৃত্তিকা বেঁকে বসল। ও বিয়ে করবে না।সবাই মিলে জেকে ধরল ওকে। মৃত্তিকার মনে হল,ওর যাবজ্জীবন কারাদন্ডের হুকুম জারি হচ্ছে।
তবুও বিয়ে করতে হল।
অশ্রুসিক্ত নয়নে মা বিদায় দিলেন মৃত্তিকাকে। অভিদের বাড়িতে অাসতেই, শ্বাশুড়ি কিছুটা কঠিন মুখে বলল, "এখন থেকে তুমি অার খুকি নও। এখন তুমি এ বাড়ির বউ। "রাতে ঘন মেঘ করে ঝুম বৃষ্টি হতে লাগল। অভি অতি ধীরে বিছানার পাশপ বসে বলল,"মৃত্তিকা, তুমি অামায় ভালবাসো না? "
মৃত্তিকা সতেজে বলল, "না, অামি কক্ষনোই তোমাকে ভালবাসবো না। "
"কেন? কী দোষ করেছি অামি? "
"তুমি অামায় বিয়ে করলে কেন?"
এ অপরাধের সন্তোষজনক কৈফিয়ত দেওয়া কঠিন। অভি মনে মনে এই দূর্বাধ্য মনটিকে বশ করার সংকল্প করল।সেদিন সকালে মৃত্তিকা শাশুড়ির কাছে গিয়ে বলল, "অামি বাড়ি যাব। "
তিনি কিছুতেই সম্মত হলেন না। বরং সে যে অার খুকী নয়, এ বাড়ির বউ সেকথা অারেকবার মনে করিয়ে দিল। সারাদিন ও মন খারাপ করে বসে রইল। রাতে অভি ওর পাশে গিয়ে চুপিচুপি বলল, "মৃত্তিকা বাড়িতে যাবে? "
মৃত্তিকা সবেগে অভির হাত চেপে ধরে বলল, "যাব। "
"তবে এসো দুজনে পালিয়ে যাই। অামি ঘাটে নৌকা ঠিক করে রেখেছি। "
মৃত্তিকা একবার সকৃতজ্ঞ নয়নে অভির দিকে তাকাল।
পরক্ষনেই যাবার জন্য প্রস্তুত হল। অভি মায়ের চিন্তা দূর করার জন্য একটা চিরকুট লিখে বের হল।
মৃত্তিকা সেই অন্ধকার রাতে জনশূন্য নির্জন নিস্তব্ধ গ্রামপথে প্রথমবারের মত স্বেচ্ছায় অান্তরিক নির্ভরতার সাথে অভির হাত ধরল। মৃত্তিকার অানন্দ অার উদ্বেগ মেশানো সেই সুকোমল স্পর্শ অভির শিরায়-উপশিরায় অনুভূতি জাগালো।রাতের অাকাশ, দুই ধারে গ্রাম, শষ্যক্ষেত পাড়ি দিয়ে ওরা পৌছুলো। সেখানে সবাই ওদের দেখে কিছুটা অবাক হলেও শশব্যস্ত হয়ে অাপ্যায়নের ব্যাবস্থা করল। দুদিন পর মৃত্তিকাকে নিয়ে অাবার বাসায় ফিরল। বাসায় ফেরার পর অভির মা গম্ভীর হয়ে রইল। কোন কথা বলল না। এই নীরব অভিযোগ, নিস্তব্ধ অভিমান লৌহভারের মত মৃত্তিকার উপর চেপে রইল। অবশেষে কিছুটা অভিমান করেই অভি বলল,"মা অামার ঢাকা যাবার সময় হয়ে এসেছে। অামাকে যেতে হবে। "
মা উদাসীন ভাবে বলল, "বউয়ের কী করবে?"
"ও এখানেই থাক। "
"না, তুমি ওকে সাথে করে নিয়ে যাও। "
অভি অভিমানক্ষুন্ন স্বরপ বলল, "অাচ্ছা। "
যাবার অাগের রাতে অভি দেখল, মৃত্তিকা কাঁদছে।
হঠাৎ অভি খুব কষ্ট পেল ওকে কাঁদতে দেখে।
"মৃত্তিকা তুমি অামার সাথে যাবে না? "
"না। "
"সবাইকে ছেড়ে যেতে মন কেমন করবে? "
"হুম। "
"ঠিকাছে,যেতে হবে না। "
"সত্যি ? "
"হুম। তুমি অামায় ভালবাসো না? "
কোন জবাব পাওয়া গেল না। অভি অাবার বলল, "তুমি অামায় একটা চুমু খাবে?"
সহসা এমন প্রশ্নে মৃত্তিকা হেসে উঠল। কী সুন্দর সে হাসি!
তবুও ওর খারাপ লাগল অার কিছুটা অভিমানও করল ও।পরদিনই চলে এল অভি,মৃত্তিকাকেও ওদের বাড়ি পাঠিয়ে দিল।