রোমান্টিক নীলনকশা

76 0 0
                                    


লেখার কালঃ- ২৬/০৪/২০১৭
,
হীমাকে নিয়ে আমি কোনোদিনই কোথাও খেতে বা ঘুরতে যেতাম না। হীমা এবিষয়ে কিছু বললেই আমি বলে দিতাম- "প্রেম ভালোবাসা হচ্ছে হৃদয়ের ব্যাপার। খাওয়া দাওয়া, ঘুরে বেড়ানোর সাথে এর সম্পর্ক নাই। হৃদয় দিয়ে সবকিছু চিন্তা করো। i feel you and you feel me! এটাই আমাদের ভালোবাসা! কি বুঝলা?"
হীমা বলতো, "বিয়ের পরেও এই কথাটা মনে রাখবা। সারাদিন আমাকে ফিল করবা। তোমার তো খাওয়া দাওয়া লাগে না। so, বিয়ের পর রান্না হবে না।"
এই হলো গল্পের পটভূমি। এবার মূল গল্প শুরু করি।
,
আমি নাসিম। ও হীমা । সে জেবা। এই তিনজনকে নিয়েই আজকের গল্প।
,
জেবা হলো হীমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু, বেস্ট ফ্রেন্ড। অবশ্য  জেবার সাথে আমারও অল্পসল্প পরিচয় আছে।
একদিন জেবা আমার ফেসবুক ওয়ালে লিখলো,
>"Hi!"
তো আমিও রিপ্লাই দিলাম,
>"Hello!"
এরপর জেবা প্রশ্ন করলো,
>" হীমার বয়ফ্রেন্ড কে?"
আমি একটু মুড দেখিয়ে সোজাকথায় কমেন্ট রিপ্লাই দিলাম, "আমি"
কিছুক্ষন পর জেবা আবার কমেন্ট দিলো, "তুমি হীমার বয়ফ্রেন্ড! আচ্ছা, তুমি হীমাকে কী করো?"
এইটা আবার কেমন প্রশ্ন! অনেক দীর্ঘ উত্তর দেয়া যেতো। কিন্তু হীমা যদি দেখে আমি অন্য মেয়ের সাথে এতো গল্প করছি, তাহলে আমার খবর আছে! তাই আবারো সংক্ষেপে লিখলাম, "ভালোবাসি"
একটু পরেই জেবার কমেন্ট, "ভেরী গুড! আচ্ছা, তোমার কি মনে হয়? হীমা কাকে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড মনে করে?"
আমার একটু তাড়া ছিলো। তাই তাড়াতাড়ি কমেন্ট দিলাম, "তোমাকে"
তারপর ফেসবুক থেকে লগ আউট করে বাইরে চলে গেলাম।
বেশ কিছুক্ষন পর হীমার ফোন পেলাম।
আমি বললাম, "বলো !"
ওপাশ থেকে হীমার উত্তেজিত কন্ঠস্বর শোনা গেলো, "ঐ! তোমার এতো সাহস হয় কেমনে?
,
শোনো, এই তোমাকে লাস্ট টাইম ফোন করলাম। আর জীবনেও তোমাকে ফোন করবো না। আমার সাথে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করবা না। আর লাস্টে একটা কথা বলি, আমার সাথে এরকম না করলেও পারতা। গুড বাই। সুখী হয়ো।"
আমি হা হয়ে গেলাম। বলে কি এই মেয়ে! বললাম, "কি হয়েছে তোমার? আন্টি বকা দিছে নাকি?"
ওপাশ থেকে বজ্রপাত, "Shut up!"
এই বলে হীমা কল কেটে দিলো। আমি পড়লাম অথৈ সাগরে। কি হচ্ছে, কি ঘটছে কিছুই বুঝলাম না। ফেসবুকে ঢুকলাম। হীমার একটা ইনবক্স মেসেজ পেলাম। মেসেজে শুধু একটা লিংক দেয়া। আর কিছু না। লিংকে ক্লিক করলাম।
জেবার সেই ওয়ালপোস্টের পেজটা ওপেন হলো। সবকিছু দেখে তো আমার মাথায় হাত!! জেবা একি সর্বনাশ করলো আমার! শয়তান মেয়েটা নিজের সবগুলো কমেন্ট ডিলিট করে দিয়েছে। ওয়ালপোস্টটাতে শুধু আমার কমেন্টগুলো দেখা যাচ্ছে। তাহলে ব্যাপারটা কি দাড়ালো? হীমা দেখেছে যে জেবা আমার ওয়ালে "Hi!" লিখেছে। আর সেখানে আমি চারটা কমেন্টের মাধ্যমে লিখেছি: "Hello! আমি ভালোবাসি তোমাকে।
,
ফেসবুকে আমার অবর্তমানে ষড়যন্ত্রের নীল নকশা অঙ্কিত হয়েছে। এবং তা বাস্তবায়িতও করা হয়েছে। ফল ভোগ করছি আমি।
একরাশ হতাশা আর ক্ষোভ নিয়ে ফোন করলাম জেবাকে । ফোন ধরেই হাসতে হাসতে সে বললো, "কি খবর হীমার বয়ফ্রেন্ড! কেমন আছো?"
মেজাজ চরম খারাপ হয়ে গেলো। তবু নিজেকে শান্ত রাখলাম। কারন এই মহাবিপদে জেবা একমাত্র সহায়। ভদ্রভাবে বললাম, "দেখো, এইসব নিয়ে ফান করা উচিত না। সিরিয়াস কিছু হয়ে যেতে পারে। প্লিজ এই নাটক বন্ধ করো। হীমাকে সব বলে দাও।"
জেবা ব্যঙ্গাত্বক সুরে বললো, "তুমি আমাদের সবার জামাই বাবু! তোমাকে কি এতো সহজে ছাড়া যায়? আসো, একটা চুক্তি করি!"
আমি বললাম, "কিসের চুক্তি? আমাকে কি করতে হবে?"
জেবা বললো, "চাইনিজ খাওয়াতে হবে! আজ বিকাল পাঁচটায় কলেজের পাশের চাইনিজ রেস্টুরেন্টে আসো।"
টাকার মায়া ত্যাগ করে বলে দিলাম, "ওকে। আসবো। বাই।"
এরমাঝে হীমার কোনো খোঁজ নাই। হীমার ফোন অফ।
বিকালে আমি সেই চাইনিজে গেলাম। খাবার অর্ডার দিলাম। চোখ কান বন্ধ করে একটু একটু করে খেতে লাগলাম। জেবার খাওয়া শেষ হলেই বাঁচি।
হঠাত্‍ জেবার মোবাইল বেজে উঠলো। জেবা আমাকে বললো, "এক বান্ধবী ফোন করেছে।"
তারপর ফোনে কথা বলা শুরু করলো সে। তাকে বলতে শুনলাম, "আরে হ্যা! আমার সেই বয়ফ্রেন্ডের সাথে! কলেজের ডান পাশের চাইনিজটাতে। হ্যা হ্যা! তুই আয়! পরিচয় করিয়ে দিবো!"
আমি অবাক হয়ে বললাম, "এইটা কি বললা তুমি??!!"
জেবা হেসে বললো, "আমি আবার কি বললাম?"
উত্তরে আমি কিছু বলার আগেই ক্ষিপ্রগতিতে চাইনিজে হীমার প্রবেশ!!!
বুঝলাম ফাঁদে পড়েছি! মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজে পেলাম না। করুন চোখে একবার হীমার দিকে তাকালাম।
হীমা আমাদের পাশে এসে দাড়ালো। ও জেবাকে বললো, "তোকে বলেছিলাম না! এর মতো গাধা দুনিয়াতে আর নাই!!"
একথা শুনে জেবা হাসতে লাগলো! জেবা বললো, "তাই তো দেখতেছি!"
হীমা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "এই যে জনাব, আপনি নাকি আমাকে বিয়ে করবেন? এই আপনার সাহস! যা কিছু ঘটলো, সেগুলো আমাকে না বলে আপনি আমার বান্ধবীর সাথে চাইনিজে আসছেন চুক্তি করতে! ইডিয়ট কোথাকার!"
আরো একবার আমি বিস্ময়ে হতবাক। তোতলাতে তোতলাতে বললাম, "তু তু তুমি সবকিছু আগে থেকে জানতে?"
হীমার উত্তর, "জি জানতাম। এটাও জানতাম যে তুমি গাধা। তবে এটা জানতাম না যে তুমি মহা গাধা।"
আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। মিষ্টি করে হেসে বললাম, "পাবলিক প্লেসে এসব বলো না। মানুষ তোমাকে খারাপ ভাবতে পারে! রাতে ফোন করবো। তখন যা ইচ্ছা বলো!"
হীমা অন্যদিকে ঘুরে বললো, "নির্লজ্জ!"
জেবা তখনো হাসছে! জেবা বললো, "আমি যাই বাবা! আমার কাজ শেষ। বাকিটা তোমরা বোঝো!"
হীমার ঠোটেও তখন মায়াবী হাসি। সত্যি সত্যি জেবা চলে গেলো। আর হীমা আমার সামনে বসে পড়লো।
সূর্য ডুবছে। চাইনিজের বাইরে দিন আর রাত মুখোমুখি। চাইনিজের ভেতরে আমি আর হীমা চোখাচোখি। প্রকৃতি খুউউউউব রোমান্টিক হয়ে গেছে আর আমি অপলক নয়নে চেয়ে আছি হীমার দিকে। মনে হচ্ছে এ জনমে তাকে দেখে আমার হৃদয় জুড়াবে না হৃদয় জুড়ানোর জন্য হীমাকে আমার পরের জন্মেও লাগবে।
.........................

উৎসর্গঃ আমার সেই কাছের প্রাণপ্রিয় বন্ধু Z
,
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি মার্জনীয়

নীলকণ্ঠের গল্পকথাWhere stories live. Discover now