--এই মেয়ে শোন! এইবার দিয়ে অনেক হলো, আমি আর পারছিনা!!
--ঠিকাছে না পারলে ছেড়ে দাও, আমি তো তোমায় প্রপোজ করতে বাধ্য করেনি!
--বাধ্য করোনি নয়তো কি? এ নিয়ে তোমায় এই চার মাসের মধ্যে ৬৭ বার ৬৭ স্টাইলে প্রপোজ করেছি।
একটাও কি তোমার পছন্দ হয়নি?
--আমিতো আগেই বলেছি, তোমার প্রপোজ করার স্টাইল আমার যেদিন ভালো লাগবে। আমি সেদিনই তোমায় ভালবাসি বলবো।
--অদ্ভুত মেয়ে! দাদী নিশ্চয় কুঁজো বুড়ি ছিলো।
--এক্সকিউজ মি, আমাকে কিছু বললে?
--না! নাতো! বলেছিতো আমার গুণধরী দাদী-শাশুড়ি কে!
--মানে?
--তুমি ওসব বুঝবেনা, পারিবারিক ব্যাপারস্যাপার!
--এই শুন! তুই এসব আজে বাজে বকতে আর কখনো আমার সামনে এসে দাঁড়াবিনা। ইডিয়ট একটা!!
.
কথাটা বলেই নওশিন রেগেমেগে ভার্সিটির বারান্দা দিয়ে সোজাসুজি হেটে চলে গেল। ইমু সেখানেই থমকে দাঁড়িয়ে রইলো। ইমু ভাবছে,'ইশ! এখন যদি গলা ফাটিয়ে আব্দুল হাদীর গানটা ধরতে পারতাম---
"যেওনা সাথী, চলেছো একেলা কোথায়, পথ খুঁজে পাবে না তো....শুধু একা_______
.
আবার পরক্ষণেই ইমু ভাবছে, "এই পাগলীটার এখানকার সব ওলিগলি চেনা, ওকে এই গান শুনিয়ে কোন লাভ নেই" পাশ থেকে খাড়া খাড়া চুল নিয়ে এসে ইমুর কাঁধে হাত রাখলো উদয়। ইমু উদয়-কে দেখে বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলো---
--কিরে উদয়, তোর সাইডের চুল গুলো কি সব পিঁপড়ায় কেটে ফেলেছে নাকিরে!! উপরের গুলাতো দেখছি ঠিকি আছে, কিন্তু তোর চুলগুলো ধরে এরকম টানাটানি করেছে কে..!!
--হা হা হা, দোস্ত নতুন স্টাইল, স্পাইক, লেয়ার-স্পাইক কাটিং দিছি। কেমন হয়েছে বলতো?
.
ইমু কিছু না বলে ভাবছে,"সবাই এতো স্টাইলের পিছে ছুটছে কেন। নওশিন প্রপোজের স্টাইল চাচ্ছে, উদয় চুলের স্টাইল করে এসেছে। সবাইকি তাহলে এখন
স্টাইল নিয়ে ব্যস্ত!
.
উদয় বলে উঠলো---
--কিরে কি ভাবছিস? চুপ করে আছিস যে?
. ইমু উদয়ের কথাতে,থমকে উঠলো, ভাবনার ঘোর থেকে বেড়িয়ে ইমু উদয়-কে জিজ্ঞাস করলো---
--আচ্ছা উদয়, সবাই কি এখন স্টাইল নিয়ে ব্যস্ত?
--এ কথা বলছিস কেন? আমার চুলের কাটিংটা তোর পছন্দ হয়নি?
--না! আসলে ঠিক তা না! সবাই মনে হচ্ছে শুধু স্টাইল নিয়ে ব্যস্ত।
--কেন কে আবার তোকে স্টাইল দেখালো?
--খেয়াল কর নওশিন-কে আমি ওর কথা মতো ভিন্ন ভিন্নভাবে ৬৭ টা স্টাইলে প্রপোজ করলাম। ওর একটা স্টাইল ও পছন্দহলোনা!
--আরে বোকা ও তো তোকে ভালোই বাসে।
--তোকে বলেছে! যদি ভালবেসে থাকে তাহলে বলেনা কেন?
--সব কথা কি বলতে হয় পাগলা! কিছু কথা বুঝে নিতে হয়।
--যা হারামি, এতো বুঝতে গিয়েই তো মনির ভাইয়ের
গার্লফ্রেন্ডের (তুলির) পিছনে সাত হাজার টাকা খরচ
করেছিস!
.
উদয় কথাটা শুনে চুপ হয়ে গেল। উদয় বলল---
--বুকের ব্যথাটা আবার বাড়িয়ে দিলি, এতো সময় একসাথে চলেফিরে শেষে যখন প্রপোজ করলাম, বলল
'আমিতো তোকে ভায়ের মতো দেখি' ভাগ্যিস প্রপোজটা ১৫ দিনের মাথায় করেছিলাম বলে বেঁচে গেছি। আর একটু দেরি করে করলে তো আমার সব চালান গায়েব হয়ে যেত।
--হা হা হা, এইবার বুঝ!
--হুম, তোর ৬৭ টি প্রপোজের স্টাইলই তো আধুনিক স্টাইলের ছিলো তাইনা?
--হুম,
--আমার কাছে অনেক আগের একটা স্টাইল আছে, চেষ্টা করবি?
--Old!
--"Old is Gold" Dotty...
--ঠিকাছে বল?
--শুন তাহলে, তুই প্রথমে ভার্সিটির ছাদে যাবি। গিয়ে
একদম রেলিং এর উপর দাঁড়াবি। আমরা কেউ নওশিন গিয়ে বলবো ইমু সুইসাইড করছে। নওশিন তখন তোকে
দেখার জন্য আসবে। আর তুই বাংলা ছবির হিরোইনদের মতো বলবি, "নওশিন আমি এক থেকে দশ পর্যন্ত গুণবো, এরমধ্যে যদি তুমি আমাকে
ভালবাসি না বলো, তাহলে আমি এখান থেকে লাফ দিয়ে সুইসাইড করবো"
--ঐ হারামি ও যদি ভালবাসি না বলে, তখন কি তুই আমার বদলে গিয়ে লাফ দিবি!
--আরে তুই কি সত্যি সত্যি লাফ দিবি নাকি, শুধু অভিনয় করবি। আর তাছাড়া তিন তলা থেকে লাফ
দিলে কিছু...
--চুপ, চুপ সালা! আমায় পঙ্গু করে ঘরে বসিয়ে রাখার জন্য উঠে পরে লেগেছিস না! আরে আমারতো তখন ঘরেও জায়গা দেবেনা। যখন শুনবে এইসব ঘটনা।
আমাকে পথের ফকির বানাতে খুব ইচ্ছে হইছে তোর? কার কাছে থেকে কত টাকা খেয়েছিস! সালা এজন্যেই মানুষ বলে, "পরের বুদ্ধিতে ধনী হতে নেই"
--আরে না, এভাবে বলছিস কেন? শুন তাহলে আরেকটা বুদ্ধি আছে। আমরা ৮/৯ জন মিলে একটা মোটা নেট নিয়ে আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকবো। যখন তুই আট নয় বলবি তখনই দৌড়ে গিয়ে নিচে ধরবো। ব্যাস হয়ে গেল!
--ঠিক বলেছিস! আমার ভালবাসা মিথ্যে প্রমান করার জন্য তোর আইডিয়াটা একদমই পারফেক্ট। হারামি যা ভাগ...
--ঠিকাছে, থাক বাবা তুই তোর মজনুত্ব নিয়ে, আমি চললাম। আর শোন, নওশিন-কে ৬৭ টা স্টাইলে প্রপোজ করেছিস। আরও ১০০ স্টাইলে করবি,
তাতেই তোকে ভালবাসি বলবেনা বলে দিলাম, মিলিয়ে নিশ!
--আরে ভাগ ভাগ, ওকে আমি এমন স্টাইলে প্রপোজ করবো যা পৃথিবীর কেউ কোনদিনও করেনি। আর তখন ও ঠিকি ভালবাসি বলবে। তুইও মিলিয়ে নিস।
--ঠিকাছে দেখা যাবে, চল এখন ক্লাসে চল।
.
উদয় ইমুর গলা ধরে হাটতে শুরু করলো। দুজনে গিয়ে একই বেঞ্চে বসলো। পাশের দিকটাতে নওশিন তাদের সোজাসুজিই। আসলে ইমুই নওশিন-কে দেখার জন্য
প্রতিদিন নওশিনের সোজাসুজি অপর পাশে বসে। ইমু সারা ক্লাস নওশিনের দিকেই তাকিয়ে থাকে। নওশিন ইমুর দিকে কিছুক্ষণ পর পর তাকিয়ে মুখ ভেঙচি কাটে। আর ইমু দেখে দাঁত কেলিয়ে হাঁসতে থাকে। উদয় নওশিনের বার বার তাকানোটা খেয়াল করেছে। উদয় আস্তে আস্তে বলল---
--দেখ দেখ নওশিন তোর দিকে কেমন করে বার বার তাকাচ্ছে।
--ও আমার দিকে তাকাবে নাতো, তোর দিকে তাকাবে নাকি! আর তুই ওকে দেখছিস কেন?
--আরে আমিতো তাকাতেই খেয়াল করলাম, আর তাই তোকে বললাম।
--হুম, ও আমাকে দেখে আমি সেটা জানি। আর
কোনদিনও তোকে বলতে হবেনা। পার্সোনালিটি বলতে
কিছুতো অন্তত রাখতে দে...
--হা হা হা,
.