ঝরা পাতা হারায় না

78 0 0
                                    

সদ্য বৃষ্টি বন্ধ হল। সারাদুপুর বৃষ্টি হয়েছে। এদিক ওদিক ভালোই জল জমে রয়েছে।কাদা হয়ে রয়েছে। পড়ন্ত বৃষ্টিস্নাত বিকেলবেলার আলোতে চারদিক চকচক করছে।একটা মায়াময় লাল আভা আর বিষণ্ণতা । হালকা কিন্তু দৃঢ়,স্পষ্ট।দুপুরে বৃষ্টি হলে সেই বিকালটা বড় মায়াভরা হয়। একটা অব্যক্ত যন্ত্রণা। কষ্ট হয়। কাঁদতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কারণটা বোঝা যায় না।এই সময়টাতে ঠিক এই সময়টাতে চোখে অকারণে জল আসে। গলার কাছে কী যেন একটা আটকে যায়। বুকের ভেতর একটা দুঃখের আভাস খুব স্পষ্ট বোঝা যায় শুধু প্রকাশের ভাষাটা অজানা।ঘাসগুলো ভিজে রয়েছে। ছোটো ছোটো গাছের ফুল চুপসে গেছে। কিন্তু বড় সুন্দর,মনোরম বিকালখানি। বড় গাছগুলোর ডাল ধরে বাচ্চারা আনন্দে জল ঝরাচ্ছে , ভিজছে। হেসে কুটোকুটি হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজে চারপাশের গাছগুলোও ওদের সাথে আনন্দে মাথা দোলাচ্ছে।বড় বড় নারকেল গাছের পাতা থেকে টপটপ করে ঠান্ডা জল গায়ে পড়ছে পথচারীদের। বৃষ্টি ভেজা ঠান্ডা আমেজ চারিদিকে । ভিজে মাটির গন্ধ। এখানে ওখানে কাগজের নৌকো ভাসছে । কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। দুপুরের প্রবল ঝড়ে ঝরে যাওয়া পাতাতে রাস্তাটা ভরে গেছে।
এমনই মন কেমন কেমন করা সময়ে শ্যামলী চলেছে। বেশ দ্রুততার সাথে । দীর্ঘাঙ্গী, কৃশাঙ্গী। মাজা শ্যাম বরণ । বড় মিষ্টি মুখখানি।এলোমেলো চুলে করা কলা বিনুনি কোমর পেরিয়ে ঝুলছে।
টিং টং...... টিং
শ্যামলী বেলটা টিপল। বীথি দরজা খুলল।
বীথি গৃহবধূ । পরিপুষ্ট শরীর। ঘাড়ের বেশ কিছুটা নীচে খোলা চুল ঝুলছে।
-সুভদ্রা দি বলল দেখা করতে বলেছ ।
-আয়।
বোস।
- হুঁম্।
বীথিদেবী সুসজ্জিত সোফায় বসলেন। শ্যামলী সামনে নীচে খালি মেঝেতে বসল। মুখোমুখি পশ্চিমের বারান্দা থেকে পড়ন্ত সূর্যের আভা সরাসরি শ্যামলীর মুখে পড়েছে। কপালের ঘাম চকচক করছে। ডাগর ডাগর চোখের কালো তারাতে পড়ন্ত সূর্যের ছায়া পড়েছে। বড় সুন্দর।
- ছেলে কই দিদি?
-এই একটু ওই গলিটার দিকে গেল। ওর জন্যই তো ডাকলাম।
- কত বয়স হল?
- এই তো অন্নপ্রাশন হল।
- ও। তা কী করতে হবে বল ।
- দেখ বাসন মাজা , ঘর মোছা ছাড়া বাবুর কাপড় গুলো কেচে দিবি। কত নিবি ?
- অনেক কাজ। হাজার ।আর মানসী দিকে বলে দিও। নইলে ঝগড়া করবে। তুমি মুখ জান না।
-না না। আমি বলে দেব। খুব কামাই করে অসুবিধে হচ্ছে।কিন্তু হাজার? নশো কর।পুজোয় দুটো কাপড়, শীতে শাল আর দুবেলা কাজের আগে জলখাবার।
- আচ্ছা নশো। তবে সাড়ে আটটার আগে আসতে পারব না।
- সাড়ে আট? এত দেরি হবে? কোথায় কোথায় কাজ করিস?
- কোথায় কোথায় আবার । আর একটা বাড়িতেই করি । সামনের ওই পপেসারের বাড়িটাতে।
- ওই নীল বাড়িটা?
- হ্যাঁ।
- দুজনেই প্রফেসার। মেয়ে দুজনেই তো বিদেশে পড়ে।
- অত জানি না। বাড়িতে থাকে না জানি।
- কটায় যাস ওখানে?
- সেই সক্কাল বেলাতেই। ওদের জামাকাপড় কাচা আর রান্নাবান্নাটাও করতে হয় । অনেক কাজ। সকালেই যাই। ঘন্টা দুই লাগে।
- তারপর এখানে?
- হুঁ। একঘন্টার মধ্যে করে চলে যাব। ছেলেকে স্কুলে দিতে যাব। তারপর সারাদিন সাজার জিনিসপত্র বানাই। সাড়ে তিনটাতে ছেলেকে এনে আবার কাজে বেরোই।এখানে আবার বিকেল পাঁচটা হবে।
- ঠিক আছে। কী কী বানাস?
- ওই কিলিপ, হার , চুড়ি। বৌদির এক আত্মীয়কে বলে আর কী। কিছু লাভ হয়।ছেলেটার চোখ দেখাতে তো অনেক লাগে। দাদার কাছে আর কত চাইব?
- চোখে কী হয়েছে?
- অনেক পাওয়ার। খুব মোটা চশমা পরে। বেশিক্ষণ পড়তে পারে না। মাথা ছিঁড়ে যায়।
- ডাক্তার?
- অনেক দেখিয়েছি। এবার ভাল কাউকে দেখাবো।
- দাদা কী করে?
- গাড়ি চালায়। ভাড়ার গাড়ি। নিজের নয়। নিজের কেনার ইচ্ছে। হবে কি?এতগুলো পেট। বৌদি তো কাজ করে অনেক পায়না । চারটা ঘর কাজ করে। আর আমাকে ওই জিনিস বানাতে সাহায্য করে। ভাগ্যিস বাড়িটা ছিল। দুটো ঘরে কষ্টে থাকি।
- বাবার শরীর ভাল হয়নি?
- না না। আরও অথর্ব হয়ে গেছে। আমি বা বৌদি। সব ই বিছানায়। উঠতে পারে না। ওষুধে খরচ হয়। তুমি একটু আর কয়েকটা ঘর যোগাড় করে দিও। আমি আর বৌদি করব।
- নিশ্চয়ই।ওই সামনের বাড়ি কেমন দেয়?

ঝরা পাতা হারায় নাDove le storie prendono vita. Scoprilo ora