প্রোমোশন

10 1 0
                                    

চাকরিটা করছি প্রায় ১ বছর হলো। বেসরকারি একটা প্রাইভেট ব্যাংকের প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা।
বাবাও এই ব্যাংকেই চাকরি করতো। অনার্স শেষ করে দেড়টা বছর ঘুরে চাকরির ব্যাবস্থা করতে পারছিলাম না শেষে বাবাই পরিচিত কিছু উপরের মহল ধরে চাকরিটার ব্যাবস্থা করে দেয়।
চাকরি পেতে সময় লাগলেও চাকরির লাইফটা গুছিয়ে উঠতে বেশী সময় লাগে নাই। মাত্র ৬ মাসের মাথায় আমার প্রোমোশন হয়।
যে দিন বাবাকে প্রোমোশন এর খবরটা জানাই, বাবাকে কখনো এত খুশি হতে দেখি নাই। বড় ভাইয়ের সাথে কথা হয় নাই প্রায় ২ বছর কিন্তু ফেসবুকে আমার প্রোমোশনের কথা জানতে পেরে ফোন দিয়েছিলেন কংগ্রাচুলেশনস জানাতে। ভাবী এবং তার ৭ বছর এর ছেলেকে নিয়ে কানাডা থাকেন ভাইয়া। ভাবীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় আমাদের পরিবার এর সব মায়া ভাইয়া ছেড়ে দেন।
প্রোমোশন পাবার ২ দিনের মাথায় আমার ট্রান্সফারের নোটিস আসে। আমাদের ব্যাংকের একটা শাখা খুলতে চায় কুষ্টিয়া জেলায় বিলগাতুয়া নামে এক গ্রামে। আমাকে গিয়েই সমস্ত কাজ গুছিয়ে প্রাথমিক ভাবে শাখাটা খুলবার ব্যাবস্থা করতে হবে। ঢাকা থেকে এক গ্রামে ট্রান্সফার বিষয়টা খারাপ হলেও মনে মনে একটু ভালোই লাগছিলো এত গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজের দ্বায়িত্ব পাবার জন্য।
২৭-১১-২০১৮ আমার সে গ্রামে গিয়ে অফিসে রিপোর্ট জানাবার তারিখ। যে জন্য ২৫ তারিখেই আমি চলে যাবার কথা ভাবি। নিজের সব কিছু গুছিয়ে যে দিন রওয়া নিবো সে দিন মায়ের দিকে তাকাতে পারছিলাম নাহ। আসলে, ছোট বেলা থেকেই মা বাবার সাথে থেকেই বড় হয়েছি। ভার্সিটি বা অন্য কোন কারণে কখনো ২ দিনের বেশী বাসার বাহিরে থাকা হয় নাই। তারউপর, বাবা মাকে একা রেখে যেতেও খারাপ লাগছিলো।
ট্রেন ছিলো বিকাল ৪ টায়। বাবা মাকে বিদায় দিয়ে ৩ টার দিকেই আমি কমলাপুর স্টেশনে চলে এলাম। এসে দেখি ট্রেন ৩ ঘন্টা লেট। কখনো চা খেয়ে, কখনো সিগারেট টেনে আবার কখনো স্টেশনের বোতল কুড়ানো ছেলেপেলেদের মারামারি দেখে সময় কাটাতে থাকলাম।
ঠিক সাড়ে ৭ টার দিকে ট্রেন স্টেশনে ঢুকলো। অফিস থেকে বলে দেয়া হইছে, খোকন নামে এক ছেলে আমার জন্য স্টেশনে অপেক্ষা করবে। খোকনই আমার সে গ্রামে এসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করবে।
একবার সুন্দরবন এক্সপ্রেসকে ক্রসিং করতে দেয়, একবার কলকাতার ট্রেনকে ক্রসিং করতে দেয়, কখনো লোকাল স্টেশনে ট্রেন দাড় করায় এভাবে লোকাল ট্রেনের মত দেরি করে ভেড়ামারা স্টেশনে পৌছালাম। যেখানে ৪ টার ট্রেন ৯ টায় ভেড়ামারা থাকবার কথা ছিলো সেখানে আমি ট্রেন থেকে নামি রাত দেড়টার দিকে।
ট্রেন থেকে নেমে দেখি শুধু একটা চায়ের দোকান বাদে সব দোকানপাট বন্ধ। খোকনকে ফোন দিলাম। ২ বার ফোন বাজার পর আর কোন ফোনই ঢুকলো নাহ।
দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করলাম, বিলগাতুয়া যাবো। কিভাবে যাবো। সে বার বার আমাকে নিষেধ করলো এত রাতে এভাবে না যেতে। রাস্তা নাকি ভালো না, গত মাসেও নাকি রাতে রাস্তায় ডাকাতি হইছে।
কিন্তু স্টেশনে বসে বসে মশার কামড় খেতেও ভালো লাগছিলো নাহ। ডিসিশন নিলাম, আগাতে থাকি সামনে একটা সি এন জি পেলে ভাড়া করে নিয়ে যাবো। খোকন এর বাড়ির ঠিকানা ছিলো আমার কাছে। একবার যেতে পারলেই আর সমস্যা হবে নাহ রাতে থাকতে।
সি এন জি স্ট্যান্ডে এসে দেখি ২ টা দাঁড়ায় আছে। দুই ড্রাইভারই চাদর মুড়ে পিছের সিটে আরামে নাক ডাকছে। ডাক দিলাম কয়েকবার, কেউই এত রাতে যেতে রাজী না। তাদের কথা, ডাকাতে ধরলে ওদের সি এন জি রেখে দিবে।
স্টেশন থেকে যেহেতু নেমেই এলাম আর উপরে উঠতে ইচ্ছা করলো না। রাস্তার মোড়ের একটু দূরে গিয়ে এক দোকানের বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছিলো। ঢাকা থেকে রওনা দেবার সময় ভাবি নাই এখানে এত শীত পরবে। পদ্মার বাতাস এসে মাঝে মাঝে শরীরে একটু কাপুনি দিয়ে যাচ্ছিলো। সিগারেট ধরালাম একটা। সিগারেটটা শেষ করে বেঞ্চের পাশে দেয়ালে মাথা রাখতেই একটু ঝিমুনি চলে এসেছিলো। হঠাৎ একটা ভ্যান এসে যে পাশে দাড়িয়েছে খেয়ালই করা হয় নাই।

You've reached the end of published parts.

⏰ Last updated: Sep 21, 2019 ⏰

Add this story to your Library to get notified about new parts!

জবানWhere stories live. Discover now