স্টুডেন্টকে বললাম ইংরেজিতে অনুবাদ কর,
-মর্জিনা বঠি আনিতে আনিতে প্রিয়ার মাতা- ছাতার ডাট দিয়া- আমার মাথার কদম ছাট চুল আউলাইতে আউলাইতে গলা খাঁকারি দিয়া আউড়াইতে লাগিলেন,
"দুই এক্কে দুই, বল্টু যাবি কই?"স্টুডেন্ট হাত থেকে কলম রেখে কিছুক্ষণ চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে থেকে-
"আপনার নানির.." এই পর্যন্ত বলে চুপ হয়ে গেলো।দুজনে কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থাকলাম। পরক্ষণেই ভাবলাম হয়ত পানির কথা বলেছে। গ্লাসের দিকে তাকাতেই দেখলাম পানির উপর একটা পোকা ভাসছে। ও হয়তো এটাই বলতে চেয়েছিলো।
আমি মনের ভুলে 'আপনার পানির..' জায়গায় 'আপনার নানির..' টাইপ কিছু শুনেছিলাম। ভুল তো হতেই পারে। না হলে এখানে আমার নানির কথা আসবে কি জন্যে? ও কি আমার নানিকে চেনে?
মনের ভুলের কথা আর কি বলবো, বহু অনাবৃষ্টি, ক্ষরা আর অযত্ন অবহেলায়, হৃদয় আমার কেওড়া গাছের কাঁটার মতন অযথাই যখন তখন একে ওকে গুতা মেরে বসে। আর প্রতিদিন নিয়ম করে এর ওর ঝাটার বাড়ি খেয়ে নিজেকে পাঁঠা প্রমাণ না করতে পারলে আর চলবে কেনো?
যাই হোক, নাস্তা নিয়ে একটা মেয়ে ঢুকলো ঘরে। তাকে চেনা চেনা লাগছে। তবে চেনার চেস্টা করে মাথা অকাজে খাটালাম না। ছাত্রকে অনুবাদ করতে দিয়ে আমি নাস্তা করতে শুরু করলাম। আজকাল জিহ্বায়ও কোনো স্বাদ পাই না, কি খাই না খাই টেস পাইনা। অস্ট্রেলিয়া থেকে ওর আব্বা প্রায়ই ফ্রিজিং করে কোনো না কোনো ফল আনে। আজ আমার কাছে চিবোতে অনেকটা বাংলাদেশি সব্জির মত লাগছে।
এভাবে কতক্ষণ গেলো জানি না, ছাত্রের সাথে চোখাচোখি হতেই দেখি সে দাঁত মুখ খিঁচে আমার দিকেই তাকিয়ে.... তারপর হঠাৎ বিকট শব্দে হাসতে শুরু করলো, যেন অনেক্ষন ধরে সে হাসি আটকে বসেছিলো। আর কিছুক্ষণ হলে হয়তো পেট ফেটে মারাই পড়তো!
- "কি ব্যাপার হাসছো কেন? মর্জিনার মাতার ছাতার পাতার... ট্রান্সলেশনটা করেছো?"
- "স্যা.....র.... (হাসতে হাসতে কথা আটকে যাচ্ছে) আপনি কি বোকা......! (একটু থেমে) আপু বলেছিলো আজকে প্রমাণ করে দেখাবে স্যার যে কি বোকা!
-
- "কেন কি হয়েছে?"
- "স্যার আপনি কি খাচ্ছেন?"
- "কেন? ফল আবার কি!!"
- "কোন ফল স্যার??
একটু দেখেন তো ...?"স্টুডেন্টের চোখ থেকে হাসতে হাসতে পানি ঝড়ছে। আমি চিবোতে থাকা ফলের খানিকটা আরো দুই চাবান দিয়ে মুখ থেকে বের করে আৎকে উঠলাম, "ইয়া খালাম্মা! এ কি!"
আমার হাতে পুঁই শাকের ডাটা।
আমি কতক্ষণ ধরে এই পুঁই শাকের ডাটা চিবোচ্ছি!! কেমনে কি হইলো!
আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ছেলেটির দিকে, আর সে হাসতেই আছে। তাকে বিব্রত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলাম,-"এই পুইশাকের পাতাপুতা সব কি আমিই খেয়ে ফেলেছি?"
ছেলেটি এবার বিকট শব্দে হাসতে হাসতে চেয়ারসহ উল্টে পড়লো।
ছেলেটিকে টেনে তুলতেই নতুন প্রশ্ন মাথায় এলো,
"এই ছেলে, কে তুমি? "-"স্যার!!"
পিছন থেকে একটি মেয়ের কণ্ঠ শোনা গেলো,-"আপনি এ বাড়িতে কাকে পড়ান, তাও কি আপনার মনে থাকে না স্যার?"
আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি এ তো সেই মেয়েটা যে নাস্তা দিয়ে এতো বড় কেলেংকারীট করলো। হ্যাঁ ঐ মেয়েটাই তো। মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবলাম, আরে ধুত্তোরি, মেয়ে মেয়ে করছি কেন! ও তো সোমা! আরে কি আশ্চর্য আমি তো ওকেই পড়াতে এসেছিলাম! এ কাকে পড়াচ্ছি? এই ছেলে কি তার ভাই ছিলো তাহলে! এলা, লেও ঠ্যালা...!!!
-"স্যার! আপনি কি আমাকেও চিনেন না? আমি কিসে পড়ি জানেন?
আমি আবারো মাথা চুলকাতে থাকলাম,
"আরে ইয়ে.. তুমি কি ইয়ে... মানে মর্জিনার মার আউলা আউলির অনুবাদটা করতে পারবে?"যাই হোক! সেও অনেক কাল আগের কথা অবশ্য। মনের ভুলে অনেক কিছু এখনো করে ফেলি তবে কারো অভিমানী ঠোঁট এতো সহজে মনের খাতায় দাগ কাটতে পারে না।
দ্বিখণ্ডিত হৃদয় আমার কত দিনের সুপ্ত বাসনা বিসর্জন দিয়ে এখনো ধরে রেখেছে মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে আজীবনকাল উড়ে বেড়ানোর অবাধ স্বাধীনতা।
তবুও নৈশব্দের প্রাতঃরাশে অন্তর্দন্দে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া কত সত্বার মত একবার হলেও নিজেকে জিজ্ঞেস করি, "ভালো আছো তো তুমি?"
দেখো চারিদিকে, মানুষ বাড়ছে কত, সেই সাথে বেড়ে চলেছে একাকিত্ব....
এখনো সময় পেলে নির্জন রাস্তা দিয়ে একলা হেটে যাই, তবে রাস্তার ধারে এখন হলুদ বাতিরা জ্বলেনা.... কুয়াশায় আচ্ছাদিত হয় কেবলই চশমার ফ্রেমটা।___________
০৪/১২/২০১৯
YOU ARE READING
স্ক্রু টাইট
Humor"আমাদের তার ছিঁড়া গল্পকাব্য" এর বিপরীতে লেখা অপর হিউমর এবং এন্টি-হিউমর এর মিশ্রিত বই। আশা করছি চমৎকার কিছু উপহার দিতে পারবো।