#বদলে_যাওয়া_বন্ধুত্ব
বান্ধবী আসছে। চট্টগ্রাম থাকে। পতেঙ্গায়। জামাই নেভিতে চাকরি করে। ডেকোরেটেড অফিসার।
আইসাই আমার দিকে তাকায়া একটা বিশাল চিৎকার দিলো।
---কালো হইয়া গেছিসরে তৃধা। কিরে পার্লার যাস না? ইস্। তোর তো ভ্রু প্লাকও নাই।
আমি তো সপ্তাহে তিনবার যাই। নাহলে রাবা'র পাপা রাগ করে। ছয় হাজার টাকা আলাদা, অনলি আমার পার্লার খরচ।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। বললাম,
----তুই মোটা হয়া গেছস!
---হবো না। কি বলিস? সে তো খালি বার্গার, কাবাব, হেন তেন এইসব খাওয়ায়। খালি বলে খাও, খাও... মুখে তুলে ভাত খাওয়ায়। সকালে তো ভাতটা রেঁধে তরকারি গরম দিয়া, আমারে ডাক দেয়। আমারে বলে মাসে বিশ হাজার টাকা বাজেট; তুমি শুধু বাইরে খাবা।
----বাপরে.. এত?
----শপিং এ তো আরো বিশহাজার। এই যে থ্রিপিসটা পরছি ৪৭০০টাকা। আরে ঘরে পরার থ্রিপিসগুলোই তো সব হাজার দেড় হাজারের।
----ওহ! তোর মেয়েদুটো ও তো মাশাআল্লাহ সুন্দর হইছে।
----হবে না! মেয়ের বাবা তো মেয়ে বলতে অজ্ঞান। বড়ডার পিছনে মাসে এগারো হাজার, ছোডোডার পিছনে সাড়ে পাঁচহাজার পাক্কা শুধু টিচার খরচ, প্রতিদিন তো নাশতা খাইতেই দুইজনরে দুইশো টাকা দেয়। প্রতি সপ্তাহে জামা কিনে। আমার জন্যও। আমি না করলে শোনে না।
----তোরা থাকস কই?
----হ*****ল গেইট। ***নম্বর কলোনি। ভি আই পি জায়গা। কেউ ঢুকতে পারে না। তোরাও ঢুকতে পারবি না। আমি বা আমার জামাই ছাড়া কেউ ঢুকতে পারবে না। এখন একটা (কি নাম জানি বললো) বানাইতেছে, বালু পর্যন্ত দেশের বাইরে থাইকা আনতাছে। এত সুন্দর জায়গা। আমি তো এগারো তলায় থাকি। কি পরিবেশ! প্রতি রুমে এসি। একটা ওয়াশিং মেশিন কিনলাম ***টাকা।
আমি মনে মনে বললাম, সংসাররে সংসার! খালি টাকার ট্যাগওয়ালা সংসার।
মন খারাপ কইরা হাত ধইরা কইলাম,
----তুই কেমন আছস?
----আল্লাহ তোর হাতের দশাও তো খারাপ। নখ মেইনটেইন করস না.! তৃধারে, তুই তো থাকস গ্রামে, ওখানের পরিবেশে থাকলে বুঝতি। দুইদিন পরপর প্রধানমন্ত্রীর প্রোগ্রাম থাকে। নিজেরে মেইনটেইনড রাখতে হয়। ব্লিচ তো রেগুলার করি। ফাংশানে তো লাখ লাখ টাকার আয়োজন। কি খাওয়া দাওয়া। এইবার পিকনিকে তো তরকারিই হলো, ষোলো রকম। স্পোর্টস কম্পিটিশন হলো, রাবা'র বাবা তো তিনডা প্লেট পাইলো।
---তোরা থাকবি কয়দিন? আমার বাসায় একবেলা খা।
---ধুর, আমার খাওয়ার সময় কই? রাবা'র বাবা ফিরতি টিকেট দিয়া দিছে। কালকে যামুগা। বার্থডে তো আমার। সে নাকি আমার জন্য কি একটা সারপ্রাইজ রাখছে....শিওর গোল্ড কিনসে।বান্ধবী সংসারের দামসহ সুখের কথা বলে চলে গেলো। তাঁর ধারণা আমি তাঁর দামী সুখ শুনতে চাইছি। মোটেও না।
অথচ আজ আমি আসলে একবার শুনতে চাইসিলাম বান্ধবী বলুক,
---কেমন আছিসরে তৃধা? মনে আছে কাল হো না হো দেখার পর তুই আমি সারারাত গলাগলি কইরা কেমন কানসিলাম! আদিত্য আর পাংখুরির মিল দেখার পর কেমন লাফাইসিলাম। সোফা ভাইঙ্গা গেছিলো।এই বান্ধবী ছিলো আমরা প্যান্ট (পড়ুন প্যান্টি) শেয়ার করে পরা বান্ধবী। একবার তাঁর নাকের ভিতর শিমের বিচি ঢুকে গেছিলো। হসপিটালে আমি কানতে কানতে ডাক্তারের পা ধরে ফেলসিলাম। আপনার অবিশ্বাস হচ্ছে তো, করেন অবিশ্বাস। আমি জানি, বান্ধবী কত বদলায় গেছে।
বান্ধবীরা কি এমনই বদলে যায়?কই আমি তো বদলাই নাই। এখনো তো আমি মনে মনে বলি, আয়রে নীলি, আমরা পুশকুনিতে হাতুর দিবো আবার। দেখি কে ফার্স্ট হয়? যে ফার্স্ট হইবো নীল কডিটা তাঁর।
হুহ...ওহে জেনারেশন, যেই বান্ধবীর নাকের দানার জন্য তুমি ইচ্চিক দানা বিচ্চিক দানা কইয়া কানতাছো, একদিন সেই বান্ধবীর লাইগা কানবা।
শুনতাছো তুমি, কানতাছি আমি।
সুন রাহা হ্যায় না তু.. রো রাহি হু ম্যায়.....#তৃধা_আনিকা