আমার সংসার

568 27 7
                                    

আমি কালো, মাথায় চুলের উপস্থিতি একদমই নেই। সকলের নজরে পড়ার মতো আমার না আছে কোনো গুণ। গোবেচারা চেহারার এই আমি অঙ্গনা.. স্কুলে থাকা অবস্থায় এক স্যার রসিকতা করে বলতো অঙ্গনা অর্থ সুন্দরী। আর তোর নামই কিনা অঙ্গনা! তোর এই নাম কে রেখেছেরে? সে কি টিনের চশমা পড়ে তোকে দেখেছিল? সেকথা শুনে ক্ল্যাসের সবাই হাসতো, আমিও হাসতাম। খুব হাসতাম, হেসে কুটিকুটি হতাম। হাসির চাপে কখনো কখনো চোখটা ভিজে উঠতো। স্কার্ফের কোণা উঠিয়ে দ্রুত চোখ মুছে আবারও হাসির খেলায় নেমে পড়তাম। আমার এই কান্ড দেখে অনেকেই আমায় পাগল বলতো। তবে কে কানে নেয় সেসব? একমাত্র হাসিই তো আমার জীবনের একমাত্র সম্বল যাকে সময় অসময়ে সবসময় কাছে পাই আমি..

স্কুল পাশ করে কলেজে উঠলাম। আমাদের পাঁচ ভাইবোনের পড়াশোনার খরচ চালাতে বাবা হিমশিম খেতে লাগলো। বাবা ঠিক করলেন বড় আপাকে আর পড়াবেন না। মধ্যবিত্তদের এই এক সমস্যা! তারা চাইলেও অভাবের তাড়নায় বেশি কিছু করে উঠতে পারে না। এরই মাঝে হঠাৎ বড় আপার বিয়ের প্রস্তাব এল। বড় আপা আমার মতো কালো নয়। তার গায়ের রং সাদা। তার এই সাদা গায়ের রঙের জন্য তাকে কখনো স্কুলে রসিকতার স্বীকার হতে হয়নি। না হতে হয়েছে আপনজনদের কাছে বোঝা.. আমাদের জীবনটা অদ্ভুত! মাঝেমাঝে ইচ্ছে হয় সকলের নজরের বাইরে যেতে। কালো সাদার দেয়াল টপকে ওপারে গিয়ে দেখতে সকল নিয়ম ভাঙ্গার গল্প।

একসময় বড় আপার বিয়ের পর্ব চুকে গেল, আমার ইন্টার শেষ হয়ে এল। আমি ছাত্রী ভালো ছিলাম না। কোনোমতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও পাশ নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলাম। বাবা এক সকালে আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন আমার আর পড়াশোনার ইচ্ছে আছে কিনা। আমি হ্যাঁ না কিছু বললাম না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলাম বাবার উদ্বিগ্ন মুখের দিকে। ধীরেধীরে সময় গড়িয়ে গেল। রেজাল্ট বেরুলো। থার্ড ক্লাস পেয়ে পাস করলাম। তবে বাবার মুখে চিন্তার ছাপ কমলো না। বরং দিনকে দিন তা বাড়তে লাগলো। আমি বিষয়টি বুঝলাম না তবে কিছু বললামও না।

অনার্সে ভর্তি করানোর পরিবর্তে বাবা আমার বিয়ে নিয়ে ভাবলেন। আমার মতামত চাইলো না। তবে কালো মেয়েদের কী এতসহজেই বিয়ে হয়! হয় না.. আমারও হচ্ছিল না। বাবা ঘটক ধরে একের পর এক বিয়ের প্রস্তাব আনলেও আমার চেহারা দেখে ভ্রু কুঁচকে তারা বিদায় হতো। তবে তা নিয়ে আমি চিন্তিত ছিলাম না। বিয়ে নিয়ে, সংসার নিয়ে আমি কখনো ভাবিনি। কারণ আমার ভেতরের প্রতিটি শিরা উপশিরাই জানতো আমার মতো কুশ্রী চেহারার মেয়ের কপালে এসব নেই...

Vous avez atteint le dernier des chapitres publiés.

⏰ Dernière mise à jour : May 31, 2020 ⏰

Ajoutez cette histoire à votre Bibliothèque pour être informé des nouveaux chapitres !

 আমার সংসারOù les histoires vivent. Découvrez maintenant