অনিক তার নতুন ফুটবলটা দিয়ে ছাদে খেলছে। সঙ্গে সাগর। ফুটবলটা যদিও অনিকের জন্মদিনের উপহার। তার জন্য মামা এনেছে। কিন্তু খেলা শুরু করার আগেই সাগর "আমার ফুটবল" "আমার ফুটবল" চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করল। অনিকের ইচ্ছে হলো সাগরকে তুলে একটা আছাড় মারে। কিন্তু তাদের বাসার ছাদ একতলা। এখান থেকে পরলে সাগরের তো কিছু হবে না, উল্টো তাকেই রাজ্জের সব বকুনি খেতে হবে। অনেক কষ্টে সাগরকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে সে খেলা শুরু করল। ঠিক দশ মিনিট পরেই মা ডাকাডাকি শুরু করল। নিচে গিয়ে সে শুনল তার বাবাকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বদলি করা হয়েছে। তাদের চার ঘণ্টার মধ্যে বেরুতে হবে। কথাটা শুনতেই সাগরের চোখে পানি চলে এলো। তার স্কুল আর বন্ধুবান্ধবদের জন্য হঠাৎ কেমন যেন মায়া হতে লাগল। সাগর মাকে বলল,
"আজ না গেলে হয় না?"
"নাহ তোর বাবার পরশুদিনই অফিসে জয়েন করতে হবে"
"তাহলে একটু আগে বলা উচিত ছিল"
"আমি কি সবজান্তা নাকি, আর তুই কোন লাটসাহেবের বেটা তোকে আমার এক সপ্তাহ আগে বলতে হবে?"
সাগর জানে তার মায়ের সাথে কোনকিছু নিয়ে ঘ্যানরঘ্যানর করা অনর্থক। তাই সে আর কথা বাড়াল না, চুপচাপ বলল "ঠিক আছে" ।
সাগর ভাবল চার ঘণ্টা অনেক সময়। আঁধা ঘণ্টায় গোসল, বিশ মিনিটে খাওয়া আর দেড় ঘণ্টায় ব্যাগ গোছানো। সব মিলিয়ে বাকি থাকল প্রায় এক দেড় ঘণ্টা। সে ভাবছে একবার সবার সাথে দেখা করে আসবে। তাই সে দরজার দিকে ছুটে গেল। কিন্তু বের হওয়ার আগেই মা চেঁচিয়ে উঠল-
"এই অনিক, কথায় যাচ্ছিছ?"
"ইয়ে মানে-না-মানে বাগানে?"
"কেন"
"এমনি গাছগুলো একটু দেখে আসি।"
"মনে আছে যে আমরা চলে যাচ্ছি? গাছ তো আর সাথে করে নিতে পারবি না। তাই শুধু শুধু সময় নষ্ট না করে ঘরে গিয়ে রেডি হ।"
অনিক জানে এরকম অবস্থায় কী করতে হয়, সে জানে এখন তাকে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। তাই সে নিজের ঘরে গিয়ে, জানালার ধারে দাড়িয়ে, আকাশের দিকে তাকিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে লাগল। হঠাৎ করে সে নিচের দিকে তাকাল। আর প্রায় আলোর গতিতে তার মাথায় একটা চিন্তা খেলে গেল। সে ভাবছে জানালা দিয়ে লাফিয়ে বাইরে বের হবে। সে আনুমানিকভাবে উচ্চতা মেপে নিল। সে লাফ দিতে যাচ্ছে এমন সময়, হঠাৎ নেহাপু ঘরে এসে ঢুকল। নেহা তার বড় বোনের নাম। নেহা একটু আঁতেল ধরণের। ঢাকা মেডিকেলে পড়ে। সে সাধারণত হলেই থাকে। ছুটিতে বাড়ি এসেছে। প্রত্যেকবার আসার সময় মোটা মোটা বই নিয়ে আসে। সেগুলো সাইন্স ফি্কশন, কিংবা উপন্যাস হলে একটা কথা ছিল, কিন্তু সেগুলা আসলে ফিজিওলজি, অ্যানাটমি বিষয়ের। নেহাপুর জন্যে সে বাইরে লাফ দিতে পারল না। রাগে-দুঃখে সে বাইরে যাওয়ার চিন্তাটা মাথা থেকে বের করে দিল। তারপর সে তার আম্মুর নাম্বার লিখার ডায়েরিটা দেখল। কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করে সে দেখল তার বন্ধুদের মধ্যে প্রিয় প্রায় সবার নামই ডায়েরিতে আছে। তাই সে আর বেশি চিন্তা ভাবনা করল না। চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য তৈরি হওয়া শুরু করল।
VOCÊ ESTÁ LENDO
অনিকালি
Aventuraঅনিকালি কিশোরদের জন্য একটি গোয়েন্দা সিরিজ। এটা আমার প্রথম প্রয়াস। তাই ক্ষমাসূলভ দৃষ্টিতে দেখবেন। অনিক তেরো বছরের এক ক্ষুদে গোয়েন্দা। আর অনিকের সাথেই অগ্রসর হয় একের পর এক অভিযানগুলো।