মেঘবালিকা (পর্ব ১)

425 8 12
                                    

পর্ব ১

জৈষ্ঠ্যমাস।  সাধারণত এই সময়টাতে কাঠফাটা রোদ দেখা যায়।  কোনো মতেই ফ্যানের নিচ থেকে সরা যায় না। পারলে তো ৩/৪ বার গোসল ও সেরে ফেলে অনেকে।  আবার অনেকে সারা দিন ই মাথায় ভেজা গামছা দিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তবে আজকের দিন টা অন্য সব দিনের মতো গরম না। রোদ আছে, তবে বাতাস ও অনেক।  ঘরের দক্ষিণ সাইডের জানালার কাছে বসে থাকা অবস্থায় সুপ্রিয়া এসব ভাবতে ভাবতেই সুপ্রিয়া হঠাৎ আকাশ পানে তাকাল।  তাকিয়ে তার মনেও হঠাৎ আকাশের মতোই ভালো লাগার মেঘ উড়তে শুরু করল।  কত দিন হলো সে আকাশ দেখে না। মেঘ দেখে না। কিন্তু করবে কি? তার জীবনে হঠাৎ করে উড়ে আসা বিষন্ন ঝড়, তার মনে ভালো করার সবকিছু কে ভুলিয়ে রেখেছে। 

এই তো আজ এক মাস হলো সাথে মা নেই।  কত কি ই ঘটে গেলে এই এক মাসে! তাইতো ৩০ টা দিন সুপ্রিয়া কাছে ৩০ বছরের সমান মনে হচ্ছিল।  হয়ত মনে ঝড় তুফান চললে, সময় ও তার গতি কমিয়ে ফেলে।  অথচ যখন মন ভালো থাকে,তখন সময় টাও ম্যারাথনে প্রথম হওয়ার জন্য দৌঁড়ানো শুরু করে।এ জন্যই তো সুখের সময় গুলোতে মনে হয় ১ ঘন্টায় এক দিন পার হয়ে যায়। তাইতো আজকে অনেক দিন পর সুপ্রিয়ার মনে আনন্দ লাগছে ঠিকই, কিন্তু সেই আনন্দকে উপভোগ করতে তার ভয় করছে।  এইতো কিছুক্ষণ পর চলেই যাবে এই সময় টা।  তারপর আবার বিষন্নতার দিন পার করতে হবে।  এই বিষন্নতার কথা ভেবে সুপ্রিয়া ইদানীং নিজেকে সুখ থেকে বঞ্চিত রাখছে। আসলে এই কাজ শুধু সুপ্রিয়া নয়৷ পৃথিবীর সকল মানুষ ই করে থাকে।  মানুষ দুঃখ কে ভয় করে ঠিকই, কিন্তু সুখ যখন দরজাতে কড়া নারে তখন ঐ সুখকে তাড়াতাড়ি হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে আঁকড়ে ধরতে ভয় পায়। এজন্যই বলা হয় মানবজীবন অনেক রহস্যময়। 

সুপ্রিয়া এসব রহস্যময় জীবন নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ছাদে চলে আসল মেঘ দেখতে।  মেঘ গুলো তাকে টানছে তো শুধু টানছে, স্মৃতির সাগরে ডুব দেওয়ার জন্য।  কিন্তু সুপ্রিয়া তো গত ১ মাস এর বেশি সময় ধরে নিজেকে স্মৃতির সাগরে ডুব দেওয়া থেকে বিরত থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।  কারণ সেখানে মধুর স্মৃতির সাথে কিছু তিতা স্মৃতির মিশ্রণ ও ঘটে গেছে।  যা মনে করলে মনে হয় যে বুকের উপর কেউ অনেক জোরে আঘাত শুরু করে দিয়েছে।  কিন্তু আজকে মেঘ গুলো তাকে এতো আদর করে টানছে।  আদর টা তো অদৃশ্য হলে কারো সাথে অনেক মিল এই আদরের।  হ্যাঁ মিল আছে তো, তার মা  যিনি এইতো এক মাস হলো তাকে ছেড়ে আল্লাহর কাছে চলে গেছে।  এখন তাকে দেখতে হলে সুপ্রিয়া রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা খোঁজা লাগে৷  ইদানীং সুপ্রিয়া রাতে তাই করে বারান্দায় বসে।  অনেকদিন পর মনে হলো যেন মা সুপ্রিয়াকে আদর করে বলছে,
-"আস আমরা স্মৃতির সাগরে ডুব দি।"
- "না, মা। তুমি তো জানোই ঐ তিক্তার কথা গুলো।"
-"তাতে কি হয়েছে?  "
-"তিক্ততার জন্য নিজের সুন্দর সহজ সরল স্মৃতি মনে করবে না?"
-"আসো আমরা ডুব দেই।"
-"আচ্ছা চলো।
.........................

মেঘবালিকা Where stories live. Discover now