৪.
এইচ এস সি পরীক্ষা খুব জলদি তেড়ে আসছিল সুপ্রিয়ার দরজায়। সুপ্রিয়া মহা ব্যস্ত এখন। কোনো মতে বই থেকে মুখ উঠানো সম্ভব না তার পক্ষে। অনেক পড়তে হবে। অনেক ভালো জি পি এ আনতে হবে। ভালো জায়গায় চান্স পেতে হবে। এসব ভাবনায় দিনভর ডুবে থাকত। এতো এতো ব্যস্ততার মধ্যে ছোট বেলার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা করা হয়ে উঠত। হ্যাঁ, আর মা কে সাথে নিয়ে আকাশ দেখা হতো না। আকাশ তো দূরের বিষয় মা কে সাথে দুটো কথা বলা ও হতো না। মা বাবা দুজনই দূর থেকে মেয়ের প্রস্তুতি দেখতেন আর মন ভরে দো আ করতেন।
তবে সুপ্রিয়ার এতো এতো ব্যস্ততার মাঝেও সে যখন এক কাপ চায়ের ব্রেক নিতো, তখন প্রায়ই তার প্রেমিক পুরুষের কথা ভাবত। অবশ্য সেই প্রেমিক পুরুষ বাস্তবে আসে নি তখন। তাইতো ভাবতে মধুর লাগত। আসলে মানুষের স্বভাব অনেক বিচিত্র। যেকোনো জিনিস যতক্ষণ পর্যন্ত কাছে না পায়, ততক্ষণ পর্যন্ত কত আয়োজনই না করে। অথচ যখন কাছে আসে তখন অভিযোগ আর অভিযোগ। আরে ভাই সুপ্রিয়া ও তো মানুষ, ও কি আর ব্যতিক্রম হবে নাকি এর থেকে?
————————————
এইচ এস সি শেষ মেষ দরজার ধাক্কা দিয়ে ঢুকে আবার জানালা দিয়ে চলে গেলো। এডমিশন পরীক্ষার সময় ও চলে আসল। বাবা মা এখন সুপ্রিয়াকে নিয়ে অনেক ব্যস্ত। কোথা পরীক্ষা দিবে,কীভাবে থাকবে, কীভাবে যাবে এসব নিয়ে যত চিন্তা। শেষ সুপ্রিয়া সুযোগ হলো জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি জমানোর। যখন প্রথম পরীক্ষা দিতে আসে,তখন মনে ধরে যায় ক্যাম্পাস। আহা! কি মনরম পরিবেশ। বাবা মা শুধু মুগ্ধ হয়ে দেখল ক্যাম্পাসটাকে। তখন হয়ত তারা মন থেকে চেয়েছিলো যে এখানেই তার ঠাই আর হয়ে ও গেলো। সাবজেক্ট ও পেল নৃবিজ্ঞান। সুপ্রিয়া তো মহা খুশি। ভর্তি হওয়ার পর থেকে ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য দিন গুণছিল। আর এদিকে ঐ যে সমালোচক আত্মীয়গুলো ফোন দিয়ে বিভিন্ন ভাবে মা বাবা কে উশকানি দিচ্ছিলো, "জায়গা ভালো না", "মেয়ে খারাপ হয়ে যাবে।", " খরচ চালানোর টাকা পাবে কোথায়?"
মা -বাবা একসময় বিরক্ত হয়ে ফোন ধরা বন্ধ করে দিলো। এখন সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হলো, 'সুপ্রিয়া একা কিভাবে থাকবে? ' আরো দুঃখ পাচ্ছিল এই ভেবে যে মেয়েটাকে অনেক দিন দেখবে না বাবা মা। চাইলে বাসা থেকে সুপ্রিয়া ক্যাম্পাসে যাতায়াত করতে পারত কিন্তু এতে কষ্ট হবে ভেবে, মা বাবা ক্যাম্পাস এর আসে পাশে ছোট বাসা ভাড়া করালো সুপ্রিয়া সহ আরো কয়েজনকে নিয়ে।