"মির্জা শাহবাজ রায়হান? "
-"জ্বি। "
-"আপনার সিরিয়াল এসে পড়েছে।"
-"জ্বি আচ্ছা। "
রায়হান কেবিনে ঢুকে পড়লো। ডাক্তার সাহেব জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন।পর্দা ফাঁকা করে কিছু একটা দেখছেন। রায়হান মুচকি হাসলো।ডক্টর আমজাদ এখনো সেই রকম স্মার্ট আর ইয়াং রয়ে গেছেন।রায়হান শুদ্ধভাবে সালাম দিলো।আমজাদ সাহেব ঘুরে তাকালেন। একটু মুচকি হেসে বললেন,
-'কী খবর মির্জা?'
-'আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছেন স্যার?'
-'হ্যাঁ,আছি। ভালো কি-না জানি না। তুমি বলো,কবে এলে সুইজারল্যান্ড থেকে?'
-'ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে সকাল ৮:১০ এ।জিনিসপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি।আপনার সাথে দেখা করতে এলাম।'
-'সুইজারল্যান্ড গিয়ে তো আরও সুন্দর হয়ে গেছ দেখি।'
-'আপনি কি ব্যস্ত?'
-'না,বাহিরে একটা বাচ্চা মেয়ে কাদঁছে।তুমি একটু দেখে আসবে? আই থিংক ইউ ক্যান হ্যানডেল হার।'
-'শিওর স্যার।'
রায়হান বেরিয়ে গেল। আমজাদ সাহেব একটা সিগারেট ধরিয়ে জানালার কাছে দাঁড়ালেন।রায়হান আমজাদ সাহেবের স্টুডেন্ট। সুইজারল্যান্ড গিয়েছিলো পি.এইচ.ডি. করতে। নিউরোলজিতে পি.এইচ.ডি. করেছে। থিসিস এর বিষয়টা খুব সম্ভবত 'ডিমেনশিয়া' সম্পর্কিত কিছু একটা ছিল,এইমূহুর্তে মনে নেই। অতি সুদর্শন যুবক। অমায়িক তার ব্যবহার।
বাচ্চা মেয়েটি তার কোলে বসে আছে। বাচ্চাটা যেভাবে কাদঁছিলো তেমন কোনো ব্যথা সে পায়নি। পিচ ঢালা রাস্তায় পড়ে হাঁটু ছিঁলে ফেলেছে। কেঁদে কুটে হাসপাতাল মাথায় তুলে বসে আছে। বাচ্চাটাও বেশ সুন্দরী।বাদামি রঙের কোঁকড়া চুল।তা-ও আবার এলোমেলো। পড়নে লাল রঙের মিনি ফ্রক। ফ্রকটা বেবি-কলারের।বয়স হবে তিন।গায়ের বরণ দুধে আলতা।কেঁদে মুখ লাল হয়ে গেছে। এখন অবশ্য আর কাদঁছে না।রায়হান ওকে হ্যানডেল করতে পেরেছে। বাচ্চাটা খুব মনোযোগ দিয়ে রায়হানকে কিছু বলছে। রায়হানও মনোযোগ দিয়ে শুনছে।
সিগারেটটা শেষ হয়ে এসেছে। হাতে হালকা গরম লাগার পর আমজাদ সাহেব সেটা ফেলে দিলেন অ্যাশ ট্রেতে।তিনি চেয়ারে এসে বসলেন। রায়হান কেবিনে ঢুকলো।মুখে হাসিখুশি ভাব।আমজাদ সাহেব রায়হানকে বসতে বললেন। সে শিরদাঁড়া সোজা করে বসলো।আমজাদ সাহেব বললেন,
-'কিভাবে হ্যানডেল করলে?'
-'এমনিই গল্প করতে করতে। বাচ্চারা অতি উত্তেজিত প্রাণী। সহজেই তাদের ভুলিয়ে রাখা যায়। তাই কোনো কিছুতেই তারা বেশি কষ্ট পায়না।'
আমজাদ সাহেব মাথা নাড়লেন। মতি এসে নক্ করলো।
-'সাব,ডাকছিলেন.......'
-'মতি দুইকাপ মালাই চা নিয়ে আসো।'
-'জ্বে আইচ্ছা। '
মতি হনহন করে চলে গেল। আমজাদ সাহেব রায়হানের দিকে তাকালেন।
-'বাসায় কীভাবে যাবে? তোমার আব্বা গাড়ি পাঠাবেন? '
-'না,ঠিক করেছি লোকাল বাসে ঝুলে ঝুলে যাব।'
-'তিনি অনুমতি দিবেন?'
-'তিনি দিয়েছেন।'
-'ও আচ্ছা। ' আমজাদ সাহেব অবাক হলেন, কিন্তু প্রকাশ করলেন না।রায়হানের ফ্যামেলি একটু অদ্ভুত। একটু না,অনেকটা অদ্ভুত। কিছু ব্যাপার যেমন, রায়হানের ফ্যামেলিতে মিডেল ইস্টের দেশগুলোর কালচারের প্রভাব অনেক বেশি, গুরুতর বেশি। রায়হানের বাবা কোনো কাজ করেন না।পুরো ফ্যামেলি প্রচন্ড একগুঁয়ে। আরও অনেক কিছু। এই ব্যাপারগুলো আমজাদ সাহেবের খুব অদ্ভুত লাগে। অদ্ভুত লাগার একটা বড় কারণ রায়হান। উনার ধারণা রায়হান ওই ফ্যামেলির কেউ না।
চা এলো।দুজনই নিঃশব্দে চা খেল।আমজাদ সাহেব চা খেতে খেতে গল্প করতে ভালোবাসেন।কিন্তু এখন তিনি কোনো কথা বললেন না।একা একা কথা বলা যায় না।রায়হান খাওয়ার সময় কখনো কথা বলে না।
'স্যার আমি উঠি' বলে রায়হান উঠে দাঁড়ালো।আমজাদ সাহেব বললেন,
-'আরেকটু বসো,তোমাকে দেখে ভালো লাগছে।'
-'না স্যার,আর বসা যাবে না।অন্য কোনো দিন।বেশি দেরি হলে দাদাজান নারাজ হবেন।'
-'তাহলে যেতে হচ্ছে?'
-'জ্বী।'
-'কবে জয়েন করছো?'
-'জানি না,স্যার।আব্বার সাথে কথা বলতে হবে। হয়তো রমাদানের পর।'
-'আচ্ছা।'
-'স্যার উঠি।'
রায়হান উঠে দাঁড়ালো। সালাম দিয়ে বেরিয়ে গেল। আমজাদ সাহেব শুধু তাকিয়ে রইলেন। আরেকটা সিগারেট ধরাবেন বলে ভাবছেন। ধরালেন না।আজ হয়তো বৃষ্টি হবে। মেঘ কাঁপিয়ে বৃষ্টি হবে। ঢাকা শহর ডুবে যাবে।
VOUS LISEZ
একজন ভদ্রলোক
Fiction générale"বাধা পেয়ে পেয়ে সরে যা সকল কালো হাত রহমতে ভরে যাক তোমার আয়ুষ্কাল " -উৎসর্গ প্রিয় "আফ্রাহীম"