বাসটা এসি বাস।কিন্তু একটি এসি বাস কেন লোকাল হবে? ব্যাপারটি ভাবতে ভাবতে রায়হান একটি সিটে বসে গেল। বাসটিতে তিনটি অদ্ভুত ব্যাপার আছে,
১.বাসটি লোকাল বাস। এখন বাজে সকাল ১০:০৫।কিন্তু যাত্রী সংখ্যা মাত্র পাঁচ।
২.বাসটিতে প্রশাসনিক ইন্টেরিয়র করা।
৩.বাসটিতে বিশ্বনন্দিত গায়ক মাইকেল জ্যাকসনের 'You are not alone' গানটি বাজছে। গানটি এমন......''Another day has gone
I'm still all alone
How could this be?
You're not here with me
You never said goodbye
Someone tell me why
Did you have to go?
And leave my world so cold
.......................................................
.......................................................''রায়হান বসলো ডানদিকের তৃতীয় সিটে।সেই সিটের পাশের সিটে কেউ বসে আছে। রায়হান মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করল,
-'ইনতেখাব চিনতে পেরেছো? '
-'কেমন আছিস তুই? '
-'আলহামদুলিল্লাহ, তুমি ?' রায়হান তার বন্ধু-বান্ধবদের তুমি করে বলে।সে কাওকে 'তুই' বলতে পারে না।
ইনতেখাব চুপ হয়ে গেল। ইনতেখাব আর রায়হান একসাথে ঢাকা কলেজ থেকে পাশ করেছিলো।বন্ধু হিসেবেও বেশ ভালো ছিল দুজন। ইনতেখাব এয়ার ফোর্সে আছে। এখন স্কোয়াড্রন লিডার,মানে মেজর এর সমসাময়িক। ইনতেখাব বলল,
-'আছি,তুই বল...কই আছিস? কি করিস?
-'পি.এইচ.ডি. করে দেশে এলাম।সুইজারল্যান্ড ছিলাম।এখন বাসায় যাব।' রায়হান ইনতেখাবের চুপ হয়ে যাওয়ার প্রতি বিস্ময়টা গোপন করল।ইনতেখাব বলতে চাইলে এমনেই বলবে।ইনতেখাব বলল,
-'কি নিয়ে পি.এইচ.ডি. করলি? তুই ডাক্তার নাকি?'
-'হুম....নিওরোলজি নিয়ে।'
-'ও আচ্ছা।'
কথাটা শুনে ইনতেখাব একটু খুশি হলো।ইনায়েতকে তাহলে রায়হানের পরিচিত কোনো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া যাবে...কথাটা ভেবে ইনতেখাব রায়হানকে বলল,
-'বিয়েটিয়ে কিছু করেছিস নাকি?'
-'না।তুমি ?'
-'তোর ভদ্রতা আর গেল না............এখনো 'তুমি' ই বলিস। হ্যাঁ করেছি।করবো না-ই বা কেন....আমি কি তোর মত কুমার মরতে চাই নাকি?পারমিশন পাওয়ার পরেই বিয়ে করেছি।'
-'কাকে ইনায়েত কে?'
-'হ্যাঁ।'
ইনায়েত ইনতেখাবের স্ত্রী।রায়হান-ইনতেখাব যখন ঢাকা কলেজে পরে, তখন ইনায়েত ভিকারুন্নেসায় পড়তো।ইনতেখাব-ইনায়েতের বিয়েটা প্রেমের বিয়ে।
রায়হান আর ইনতেখাব বেশ খানিকক্ষণ একসাথে ছিলো।ইনতেখাব সি.এম.এইচ এর কাছাকাছি এসে নেমে গেল।রায়হানকে তার একটা কার্ড দিল।ইনতেখাবকে সি.এম.এইচ এর কাছাকাছি নেমে যেতে দেখে রায়হান একটু চিন্তায় পড়ে গেল।ইনতেখাবের ব্যবহার অনেকটা উদ্ভট ছিল।রায়হান যখন শেষবার ইনতেখাবকে দেখে তখন সে এয়ার ক্যাডেট ছিলো,আর এখন সে স্কোয়াড্রন লিডার।অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে।অনেককিছু বদলে গেছে।রায়হান আমজাদ সাহেবকে নিয়ে ভাবতে লাগলো।
'তিনি কি ব্যাগটা পেয়েছেন?'
'বাচ্চাটা ব্যাগটা মতিকে দিয়েছে তো?
'মতি ব্যাগটা আমজাদ সাহেবকে দিয়েছে তো?'
'আমজাদ স্যার ব্যাগটার ভেতরের ক্যানভাসটা কি দেখেছেন?'
'ওনার প্রতিক্রিয়া কি?'
'তিনি হাসছেন নাকি কাদঁছেন?'
'তিনি কি আমরিনকে মনে করছেন?'
'আচ্ছা আমরিন কি তার পোট্রের্ট দেখেছে?'
'নাকি সে সেটা তার বাবার সাথে দেখছে?'রায়হান কথাগুলো ভাবতে থাকে।আমরিন আমজাদ সাহেবের মেয়ে। একমাত্র মেয়ে। এখন বেঁচে নেই।মেডিকেলে যখন ইন্টার্নশিপ করছিল তখন মারা যায়।ব্রেন ক্যান্সার হওয়ার কারণে। আমরিনের মারা যাওয়ার পরপরই আমজাদ সাহেব বদলাতে শুরু করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এসে পড়েন।কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে জয়েন করেন। আর্মিদের আশেপাশে থেকে থেকে শক্ত হতে শুরু করেন।অনেকটা শক্ত হয়তো হয়ে গেছেন......বা হননি...... কে জানে? মানুষ তার বিশ্বাসের উপর চলে।তাই সবার উচিত ভালো কিছু করার আগে, সে তা করতে পারবে বলে বিশ্বাস করা। তাহলে অর্ধেক কাজ হয়ে যায়।
রায়হান আর আমরিন একসাথে মেডিকেলে পড়তো।রায়হান আমরিনের একটা পোট্রের্ট আমজাদ সাহেবকে দিয়েছে।পোট্রের্টটা তার নিজের হাতে আঁকা।মানুষ মৃতকে মনে রাখে না।জীবিতকেই রাখে না.....মৃত তো দূরেই থাক।কেউ হয়তো আমরিনকে আঁকবে না।রায়হানই শুধু আমরিনকে আঁকে।আমরিনকে আঁকবে এমন শিল্পী একমাত্র রায়হান। সে আর কোনো কিছুকে অমর করতে চায় না।রায়হানের কাছে আমরিন তার অজয়,অমর,অক্ষয় এক অনুভূতি।
![](https://img.wattpad.com/cover/268402483-288-k26334.jpg)
ŞİMDİ OKUDUĞUN
একজন ভদ্রলোক
Genel Kurgu"বাধা পেয়ে পেয়ে সরে যা সকল কালো হাত রহমতে ভরে যাক তোমার আয়ুষ্কাল " -উৎসর্গ প্রিয় "আফ্রাহীম"