উপন্যাস: #সৎ_মা
লেখা: #মাহাবুবা_মিতু
পর্ব: ১২সেদিন রাতে আমি বাড়ি ফিরি দেড়টায়, রাতটা পুরো নির্ঘুমই কাটে। মা এমনটা না করলেও পারতেন। আমার সাথে কথা বললেই কিন্ত ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়ে যেতো। তা না করায় কথা গুলো পঁচেছে এই কয় দিনে, আর এখন ঐ কথার গন্ধে আজ মেয়েটার আর আমার সম্মানের এই অবস্থা। পাঁচতালার আন্টিই যে বিবিসির মতো খবরটা ছড়িয়ে দিয়েছে তা আমি ভালো ভাবেই বুঝেছি । এসব মহিলাদের কাজ নেই কোন, বেচারীর জন্য কষ্ট হচ্ছিলো খুব। আহার...
একবার যদি ক্ষমা চাইতে পারতাম তাহলে হয়তো হালকা লাগতো।দুইদিন মা কোন কথা বলে না আমার সাথে, আমিও চেষ্টা করি না বলবার, মাথাটা একটু ঠান্ডা হলে ঠিকই বুঝবে আমার কথাগুলো। এরিমধ্যে শুক্রবার আমাদের এক মেয়েদের বাসায় যাওয়ার কথা, এর আগে একবার দেখেছিলাম। আরো একবার দেখতে যাবে তারা। ফাইনাল দেখা। মেয়েটাকে আমারও পছন্দ হয়েছে। সত্যি বলতে এসব দেখাদেখির ব্যাপারটা শেষ হোক আমি তাই জন্য হ্যাঁ বলে দিয়েছি।
তবে আমি বুঝতে পারছিনা আমি কোন পথে হাটছি, তখনো আমার ওর প্রতি কোন অনুভূতি কাজ করে নি, যা ছিলো তা অপরাধবোধ। কিন্তু মা যখন আগের রাতে মা বললো কালকে বিকেলে বাসায় থাকতে, ঐ মেয়েটাকে দেখতে যাওয়ার জন্য।
আমি মাকে বললাম, আপনারাই যান, আমি যাবো না।
মা তখন বেশ খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে খাটে বসে জিজ্ঞেস করলো -
: তুমি কি চাও বলোতো আমায়....!
তখন আমার টনক নড়লো, আসলেই তো আমি কি চাই....? আমি মাকে কোন উত্তর দিতে পারি নি, কারন নিজেই জানি না কি চাই....
তবে ভিরত থেকে কেমন যেন একটা পোড়া অনুভব ওর জন্য, তবে এটা অবশ্যই ভালোবাসা না। যা তা হচ্ছে মায়ের করা ভুলে মেয়েটার পাওয়া কষ্টে সমব্যাথী হওয়া, যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে ক্রমশ।সন্তান হিসেবে আমার উচিত মায়ের ভুল শোধরানো...
আবার ভাবি কিভাবে শোধরাবো.....
হাটুর সমান একটা মেয়ে....!পরদিন ঐ বাড়ি যাওয়া ক্যান্সেল হলো। আমিও রুটিন মাফিক কাজে গেলাম। এর ভিতর আর কোন ব্যাপারেই কথা হয়নি মার সাথে। কাজের ভীষণ চাপ, আমি মালামাল কিনতে গেলাম ইন্ডিয়া। তিনদিন পর বাড়ি ফিরে জানতে সীমান্ত ওর বৌকে নিয়ে আলাদা বাসা ভাড়া করে উঠেছে। শুনে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো, আমার এত ভালো মার সাথে মানিয়ে নিতে পারলো না মেয়েটা ।
বাড়ি ফিরে আমি হটাৎ অসুস্থ হয়ে গেলাম। জ্বর আর মাথাব্যথা। জ্বরবাবু প্রতিমাসে একবার হলেও দেখা করে যান। তার সাথে আমার শখ্যতা ছোটবেলা থেকেই। মা নানী বাড়ি থেকে কত শিকর-বাকর এনে হাতে বাধে, পরা পানি খাওয়ায় তাও জ্বর আসেই। হসপিটালে এত টেস্ট করিয়েও কোন কিছু ধরা পরে না। ডাক্তার বলেন খাওয়া দাওয়ার প্রতি নজর দিতে।
আমি আবার বেছে খাওয়া লোক। এটা খাইনা সেটা খাইনা। মার আমাকে নিয়ে জ্বালা। সবার জন্য যাই করুক আমার জন্য সবসময় আলাদা কিছু করেই রাখে। জানে আমি সব খেতে পারি না।
মা কেমন যেন দিশেহারা সীমান্তর চলে যাওয়ার পর। তার উপর আমার অসুস্থতা দেখে কিছুটা ভীত হয়ে গেলেন। রাতে খাবার খাওয়াতে আসার সময় বললেন
: প্রসূন কে কি তুমি পছন্দ করো...
আমি খাওয়া রেখে মার দিকে তাকিয়ে রইলাম, বললাম প্রসূন...! প্রসূনটা আবার কে..মা তীক্ষ্ণ চোখে আমার দিকে চেয়ে বললেন-
: প্রসূন কে তুমি চেনো না...!
: মা আপনি কার কথা বলছেন আমি বুঝতে পারছিনা...!
: ওয়ারীর ঐ মেয়ে...?
: আদিলের চাচাত বোন হচ্ছে প্রসূন, তুমি আসলেই নাম জানো না ওর, নাকি আমাকে বোকা বানাচ্ছো,
: মা বিশ্বাস করেন আমি ওর সাথে সব মিলিয়ে পাঁচটা কথা বলেছি কি না সন্দেহ, নামটা সত্যিই জানি না...
আর পছন্দের কথা আসলো কেন এখানে...!
: না এমনিতেই বললাম।
: মা আমি আপনাকে অনেক কথা শুনিয়েছি তার মানে এই না যে আমি ওকে পছন্দ করি, মেয়েটার সাথে আমার মা অন্যায় করেছে, আমি তার প্রতিবাদ করেছি, ব্যাস এটুকুই,
: দেখো দিগন্ত, মা হিসেবে যে আমি কতটা বার্থ্য তা আমি একবার না বার বার প্রমাণ করেছি। শেষ প্রমাণটা দিয়ে গেলো সীমান্ত চলে গিয়ে, আমার জন্য একবার তুমি তোমার সব হারিয়েছ, অপরাধবোধের পাহাড়ের তলে আমি চাপা পরা,
তাই আমার নতুন করে কিছুই বলার নাই......বলেই মা খাবার টেবিল থেকে উঠে রুমে চলে যায়....
চলবে...
(তোমরা যারা পড়তে ভালোবাসো তারা যুক্ত হতে পারো আমাদের ফেসবুক গ্রুপ Storymania-স্টোরিমেনিয়া তে)