#সৎ_মা
লেখা: #মাহাবুবা_মিতু
পর্ব: ৩০সেদিন আমি নাশতা খাই আর প্রসূনের ব্যাস্ততা দেখি। হালকা আসমানী রঙের সুতার কাজ করা একটা জামা পড়া খোলা চুলের ছোট্ট প্রসূন কত্ত বড় হয়ে গেছে আজকাল৷
রান্নাঘরে বেশ কিছুক্ষণ ধরে নতুন তেলের বোতলের ছিপি খোলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। আমি ওর আর ছিপির যুদ্ধ দেখলাম কিছু সময়, তারপর চেয়ার ছেড়ে উঠে ওর পাশে দাঁড়িয়ে বললাম দেখি তো....
ও মনভোলানো একটা হাসি দিয়ে বোতলটা আমার হাতে দিয়ে দিলো। ওর হাসি দেখে মনে হচ্ছিলো তেলের বোতলের ছিপি না খুলতে পারায় ও ভীষণ লজ্জিত।
নাশতা শেষ করে বাসা থেকে বেড়িয়ে আমি ভাবতে লাগলাম প্রসূনের কথা, কতটা আগলে রেখেছে পিচ্চি এই মেয়েটা।সেই প্রথম থেকে- সারাদিন পর যখন ক্লান্ত আমি বাসায় ফিরতাম ও দড়জা ধরে দাড়িয়ে থাকতো, আমি রুমে ঢোকা মাত্র দড়জা লক না করেই আমাকে জড়িয়ে ধরতো পেছন থেকে, আমি খেয়াল করে দেখেছি তখন ওর চুলগুলো খোলা থাকতো। আমার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যেতো ওর ভালোবাসার আলিঙ্গনে। যে আলিঙ্গনে কোন মোহ কিংবা কামনা থাকতো না থাকতো নিখাদ ভালোবাসা।
আপনি যখন কাওকে ঘৃণা করবেন জীবণেও তাকে আলিঙ্গন করতে পারবেন না, আর এজন্যই হয়তো ছোটবেলায় কোথাও ঝগড়া কিংবা মারামারি করলে সব মিটমাট করে দেওয়ার পর দুজনের কোলাকুলি করিয়ে দিতো, যার শেষ হতো একজোড়া অকৃত্রিম হাসি দিয়ে।
আর মিমো আসার পর- গল্পটা একটু বদলেছে।
ও ঘুমিয়ে না থাকলে ওকে কোলে করে দুজন আসে গেইট খুলতে। সারা দুনিয়া ঘুরে রাজ্যের চিন্তার ফেরিওয়ালা আমি নিমেষেই সব চিন্তা,কষ্ট, হতাশা, দুঃখ সব বিক্রি করে ফেলি এই সুখের বিনিময়ে।
তখন মনে হয় - জীবণ আসলেই সুন্দর।এসব ভাবতেই ফোন আসে...
রিসিভ করতেই আমি থমকে যাই, পুরো দেড় মিনিট কোন কথা বলছিনা দেখে ড্রাইভার পিছনে ফিরে তাকালো বার বার, আমার চেহারা পড়ার ব্যার্থ চেষ্টা, পাছে কোন দুঃসংবাদ কিনা।
কথা বলা শেষ হলো- আচ্ছা আমি ভেবে জানাবো আপনাকে... এ কথাটা দিয়ে।