চড়ুই সাংসার
৪/অন্তিম পর্ব
_______
যাওয়ার সময় আব্বা নিজের বাটন ফোনটা রেখে গেছিলেন। আমি,মা আর আমার বাকি দু' ভাই-বোন সেই রাত থেকে ছোট্টো ঐ বাটন ফোন হাতে চাতকের ন্যায় অপেক্ষা করতে থাকলাম কোনো কল আসুক, কোনো খবর পাই আব্বা কেন গেল? কোথায় গেল?
ওসব ঝামেলায় লেখাপড়া মাথায় উঠে গেল। কোচিংও বাদ, এডমিশনের প্রিপারেশনও বাদ। সেজ্যোতি এসেছিল আমাকে মানাতে, আমি শুনিনি। আমার ওপর পরিবারের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন আব্বা,তিনি না ফেরা পর্যন্ত এক পা বাড়ির বাইরে দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। দেখতে দেখতে কেটে গেল দু'দিন। মা কেঁদেটেদে অস্থির। আমার পক্ষেও আর সম্ভব হচ্ছেনা এভাবে, মনে সব উল্টোপাল্টা চিন্তা ঘোরাফেরা করছে। কীভাবে পাবো আব্বার সন্ধান? কে এনে দেবে আমার আব্বার খোঁজ! অসহায় আমি কি করবো না করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। যে নম্বর থেকে কল এসেছিল, বেরুনোর সময় ঐ নম্বরটা আব্বা ডিলেট করে চলে গেছিলেন। কেমন জট পাকানো মনে হচ্ছিল সব।
আমাদের পরিবার বলতে আমরা ছয়জনই। নানার তরফ থেকে যদিওবা এক মামা আছে, কিন্তু দাদার তরফ থেকে কেউ নেই। আব্বা তাদের একমাত্র সন্তান। দাদা-দাদির মৃত্যু হয় আমাদের জন্মের আগেই। এখন এক মামা ছাড়া আর কেউ নেই সাহায্য করবার। মা বললেন তোর মামাকে ফোন দে। ও ই একমাত্র পারবে আমাদেরকে এই বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে।
মায়ের কথা শুনে দিলাম মামাকে ফোন। ফোন পেয়ে তো মামার অস্থিরতার শেষ নেই। ব্যবসার কাজে গেছেন টেকনাফ। তবে চিন্তা নেই আজ রাতের গাড়িতে রওয়ানা হবেন আমাদের এখানে আসার উদ্দেশ্যে। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো অপশন নেই। তাই অপেক্ষা করলাম আমরা। পরদিন সকালবেলা মামা আসার খানিক পর আবার উপস্থিত হলো ইনতিসার ভাই। সেজ্যোতির মুখে সব জানতে পেরে সে এসেছে। আমার কাছে আরেক তরফা শুনলো সেদিনের ঘটনা৷ তারপর ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করলো কোনো ক্লু পাওয়া যায় কি-না! কন্ট্রাক্ট লিস্ট থেকে ভাইয়ার নম্বরটা বের করে নিজের ফোন থেকে ফোন দিয়ে দেখলো ভাইয়ার থেকে কোনো ইনফরমেশন পাওয়া যায় কি না!
ভাইয়ার ফোনে রিং হলো ঠিক। কিন্তু কেউ রিসিভ করলো না৷ পরে ইনতিসার ভাই করলো কি তার এক বন্ধুকে ভাইয়ার ফোন নম্বর দিয়ে লোকেশন ট্রেস করতে বলল। সে জানালো দুপুরের মধ্যে কাজ হয়ে যাবে।
ইনতিসার ভাই আমাদের দুশ্চিন্তা করতে মানা করলো। সে খুঁজে এনে দেবে আব্বাকে।
দুপুর পর্যন্ত সে আমাদের বাড়িতে বসে রইলো। সেই ফাঁকে মামার সাথে কথাবার্তাও হলো বেশ। দুপুর ১ টা দেড়টার সময় ঢাকা থেকে একটা কল এলো। না ইনতিসার ভাইয়ের কাছে নয় আব্বার ফোনে। অপরিচিত নম্বর দেখে ইনতিসার ভাই রিসিভ করলো কলটা। রিসিভ করামাত্র ওপাশ থেকে পুরুষালী কণ্ঠে কেউ বলল,
-- আমি ঢাকা সিটি হাসপাতাল থেকে বলছি। এটা কি প্রতীক হাসানের বাড়ির নম্বর?
"হাসপাতাল" শব্দটা শুনেই আমার শরীরে কাঁপুনি শুরু হয়ে গেল। ইনতিসার ভাই উত্তর দিলেন,
-- জ্বী আমি তার ভাই।
-- একটা খারাপ সংবাদ আছে।আজ শেষরাতের দিকে গুলশান-২ এ দূর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে প্রতীক হাসান এবং তার বাবা খারাপভাবে জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আধঘন্টার মধ্যেই প্রতীক হাসানের বাবা মৃত্যুবরণ করেন আর আজ সকালে প্রতীক হাসানও...
মর্গে তাদের লাশ রাখা আছে। আপনারা এসে নিয়ে যাবেন ভাই।