ডাক্তারবাবুর কথা শুনে সবাই খুব ভয় পেয়ে গেলো। কারণ সবার মাথাতেই খুশকি হয়েছে আর ডাক্তারবাবুর মতে এই খুশকিই হলো এত সকলের মৃত্যুর কারণ।
তিনি বললেন,' যাদের খুশকি হয়ে মাথায় ঘাঁ হয়েছে তাদের বাঁচানো সম্ভব হচ্ছেনা আর বেশ কিছুদিন এই ঘাঁ থাকছে সময় যে কতদিন সেটাও বোঝা মুশকিল হচ্ছে। কারণ দশদিনের সব শেষ হয়ে যাচ্ছে তোর কারোর ছয়মাসের বেশি সময়। কি যে হচ্ছে এটা নিশ্চয়ই কোনো ভাইরাস এর আক্রমণ হবে।'
অনিমেষ বাবু বললেন,' কিন্তু খুশকি তো সবার মাথায় কম বেশি হয়।'
' ঠিকই কিন্তু এ কোনো সাধারণ খুশকি বলে মনে হচ্ছে না। আর তোমাদের কারোর মাথায় ঘাঁ হয়েছে কি তবে এখনই আমায় বলো। যদি কিছু করা যায়। কোনো চেনাশোনা কারোর এমন সমস্যা হলে সাথে সাথে তাকে কোনো হসপিটালে নিয়ে যাবে।'
সবাই মাথা নাড়ালো যে আর বললো যে তাদের মাথায় খুশকি হয়েছে কিন্তু এখনও ঘা হয়নি।
ডাক্তার বাবু চলে গেলে এবার সবাই আবার সৌমীর মৃতদেহের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। এবার তাকে দাহ করতে শ্মশানে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সামনের এই মানুষ গুলো যেনো তখন আর বুঝে পেলনা যে এবার তারা সৌমীর মৃত্যুর জন্য দুঃখ পাবে নাকি নিজেদের বাঁচানোর জন্য ভয় পাবে। সৌমী কে তো ফিরিয়ে আনা যাবে না কিন্তু ওরা কি থাকবে নাকি ওদের সৌমীর মতোই এমন পরিণীতি হবে। খুশকি তো এদের সবার মাথাতেই আছে।
দাহ কাজ শেষ করে যে যার বাড়িতে ফিরে গেলো। সুমন ও নিজের বাড়িতে ফিরলো। সবার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয়ে আছে সুমন। সে বলতে পারেনি এই কিছুদিন ধরে তার মাথায় ছোট ছোট কিছু ঘাঁ দেখা দিয়েছে। তা বলে এমন নয় যে সে খুব ভীতু। মৃত্যু ভয় তো সবার রয়েছে কম বেশি সবাই বাঁচতে চায়।
বাড়ি এসে সুমন ভাবলো যে সবাইকে কল করে বলে দেখা যাক সবাই কি বলে। কিছু তো একটা পথ বেরোবে। তারপর নিজেই চিন্তা করে নিজের মনেই বললো,' যদি হয় তো বলেই বা কি হবে ডাক্তাররা কাউকে বাঁচাতে পারছে না ,আর ওদের বললে আবার চিন্তা করবে এমনিতেই সৌমীর জন্য সবার মন মেজাজ খারাপ। থাক আর বলে লাভ নেই যা হবে দেখা যাবে।'
দিন কয়েক কেটে গেলো এখন সবার মধ্যে ভয়ের মাত্রা সব কিছু পার করেছে। এই খুশকি এখন খবরের কাগজের হেডলাইন সব জায়গায়। শেষ পনেরো দিনে মৃত্যু সংখ্যা কোটি পার করেছে পৃথিবী জুড়ে। মহামারীর আকার ধারণ করেছে এই খুশকি।সরকার কি করবে এখনো ভেবে উঠতে পারেনি। কারণ এই সংক্রমণ কি করে হচ্ছে তাই কেউ জানে না। কোনো বিজ্ঞানী তা এখনও জানতে পারেনি।
খবরের চ্যানেলে খবর দেখতেও এখন ভয় লাগে রক্তিমের। তার মাথায় এখনও ঘাঁ হয়নি ঠিক তবে হতে কতক্ষন। সে জানে যদি একবার ঘাঁ হয়ে যায় তবে তারও পরিণতি আর সবার মতোই হবে। কিন্তু মায়ের সামনে এই চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করেনা। সে জানে মায়ের সে ছাড়া আর কেউ নেই। মা যে চিন্তা করে তাকে নিয়ে সেটা রক্তিম মায়ের মুখ দেখলেই বোঝে। মা জানে তার মাথার খুশকির কথা। খবর দেখার সময় দুপুরে মা রক্তিমকে বললো,' খেতে আয়।'
' আসছি ' বলে রক্তিম টিভি বন্ধ করে রান্না ঘরে চলে গেল।
পৃথিবীর এখন প্রতিটা মানুষের প্রশ্ন যে খুশকি এত মারাত্মক কি করে হলো?
আর এই প্রশ্ন হবে নাই বা কেনো কারণ তারা তো দেখেনি যে কোনো কোনো রাতে কিছু প্রাণী হ্যাঁ প্রাণীই বলবো কারণ এদের ও তো প্রাণ আছে। এরা এসে মিশে যায় গভীর অগভীর সমস্ত জলাশয়ে।