খুব সুন্দর করে জাল বুনে মাকড়সাটি তার শিকারের অপেক্ষা করছিল। হঠাৎ জাল নড়ে উঠায় উদ্বেলিত হয়ে দেখল একটি মৌমাছি এসে তার জালে পেচিয়ে ছিন্ন করে ফেলেছে। মেজাজ বিগড়ে গেল প্রচণ্ডভাবে।
মৌমাছিকে গিয়ে বলল, "কোন কাজের কাজ তো কিছুই করনা, অন্যের কাজে বাগড়া দেয়ার স্বভাব তোমাদের গেলনা"
মৌমাছিঃ দুখিত, তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য। কাজের উদ্দেশ্যেই আমি বেরিয়েছি। তোমার পাতলা জাল দেখতে পাইনি।
তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল মাকড়সা।
মাকড়সাঃ কি? পাতলা জাল? সৃজনশীলতাকে কোন মূল্য দিতে জাননা তোমরা। আমি নিজের খাবার নিজে যোগাড় করি, শিকার ধরি এই জাল দিয়ে। আর তোমরা অন্যের কাছ থেকে খাবার চুরি করে আন।
মৌমাছিঃ তোমার সাথে আমার পার্থক্য এখানেই। তুমি ঘর বানাও অন্যকে আটকানোর জন্য, অন্যের ক্ষতি করার জন্য। তোমার সমস্ত মেধা, সমস্ত সৃজনশীলতা তুমি অন্যের ক্ষতি করার জন্য ব্যয় কর। কিন্তু দিনশেষে কোন বিপদের সময় তুমি নিজের ঘরে আশ্রয় নিতে পারনা। আর আমরা ফুলের থেকে মধু সংগ্রহ করি। কিন্তু ফুলের কোন ক্ষতি করিনা। বরং ফুলের পরাগায়ণ ঘটাই। সুতরাং, আমরা ফুল থেকে মধু নেই এটা যেমন সত্য তেমনি ফুলের উপকারও করি।
মাকড়সাঃ ঐসব মান্ধাতা আমলের সস্তা কথাবার্তা বাদ দাও। অন্যের উপকার? হুহ! নিজে বাঁচলে বাপের নাম।
মৌমাছিঃ এজন্যই তোমাদের সমাজটা আত্মকেন্দ্রিক সমাজ। তোমরা আত্মকেন্দ্রিকতার ঊর্ধে উঠে সমাজ নির্মাণ করতে পারনি। সমাজ মানে শুধু একা বেঁচে থাকা নয়, সবাইকে নিয়েই বেঁচে থাকা। অন্যকে বাঁচতে না দিলে তুমিও বাঁচতে পারবেনা। আমাদেরকে দেখ, আমরা আমাদের অসুস্থ সহযোগীর দেখাশোনা পর্যন্ত করি।
(মৌমাছির চাকের ভেতর হাসপাতাল আছে, যেখানে অসুস্থ মৌমাছিদেরকে মধু চিকিৎসা দেয়া হয়, কিন্তু কারও রোগ যদি সংক্রামক হয় এবং চিকিৎসার অযোগ্য হয়ে পড়ে, তবে তাকে চাকের বাইরে ফেলে দেয়া হয়, যাতে এই সংক্রমণ অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে না পড়ে)
YOU ARE READING
মৌমাছি ও মাকড়সা
Short Storyএ গল্পটিতে মৌমাছি ও মাকড়সার কথোপকথন দ্বারা পুঁজিবাদী সমাজ ও ইসলামিক সমাজের একটি তূলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।