কৌশিক গোসল করে বের হয়ে রেস্ট নেয়। এর মাঝেই মাহির ছোট ভাই শাহেদ স্কুল থেকে এসে এসে পরে। বাসায় এসে কৌশিকের আগমনের কথা শুনে খুশি হয়ে যায়। হবেই তো! কৌশিকের বড়সড় রকমের ভক্ত সে।
মায়ের মানা করার পরও সে কৌশিকের রুমে নক করে। কৌশিক শুয়েছিলো। দরজায় নক শুনে উঠে বসে বলে, "জ্বী আসুন।"
ছোট্ট শাহেদ আনন্দের সাথে রুমে ঢোকে, "কৌশিক ভাইয়া!"ছোট্ট শাহেদকে দেখে কৌশিকের ঠৌঁটে হাসি ফুটে উঠে।
কৌশিক : কী খবর?
শাহেদ : ভালো,ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?
কৌশিক : আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। স্কুল থেকে মাত্র আসলে?
শাহেদ : জ্বী।রান্নাঘর থেকে শাহেদের মায়ের গলা শোনা গেলো। তিনি শাহেদকে জলদি ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে নিতে বলছেন।
কৌশিক : (হালকা হেসে) শাহেদ, ভাইয়া তুমি আগে ফ্রেস হয়ে এসো। তারপর নাহয় আমরা গল্প করবো।
শাহেদ : জ্বী, আচ্ছা।…………………
কৌশিক আর শাহেদ গল্পে ব্যাস্ত। শাহেদ কৌশিককে পেয়ে যেনো দিন-দুনিয়া সবই ভুলে গেছে! একদম কৌশিকের অন্ধ-ভক্ত!
খুবই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। কিন্তু এই শান্তিতে ছেঁদ পড়লো কার যেনো চিৎকারের শব্দে। কৌশিক শাহেদ দুজনই চুপচাপ কান খাঁড়া করে বোঝার চেষ্টা করলো ব্যাপারটা। চিৎকারের শব্দের পর দৌড়ানোর শব্দ, আর পরএর কার যেনো বমির শব্দ শোনা যায়। দৌড় আর বমির আওয়াজ শুনেই শাহেদের আর বুঝতে বাকী থাকে না ব্যাপারটা।
এদিকে কৌশিককে কিছুটা বিচলিত দেখে শাহেদ বলে, "ওহ্! বুঝেছি। তেমন কিছু না! "
ওর কথায় কৌশিক অবাক হয়ে জানতে চায়, "মানে?"
শাহেদ উত্তর দেয়, "ওটা আমার আপু.... মনে
হয় টিকটিকি দেখেছে।"
কৌশিক : টিকটিকি?
শাহেদ : হ্যাঁ। আপু টিকটিকি একদম পছন্দ করে
না। বোধয়, ভয় পায়।
কৌশিক : তা বুঝলাম কিন্তু...
শাহেদ : আপু টিকটিকি ঘৃণা করে। আপুর
জঘণ্য লাগে এই প্রাণীটাকে। দেখলেই
নাকি বমি পায়।কৌশিক ভাবে এই মেয়ে একদিনে ওকে আর কত্তো অবাক করবে! আসলেই আজব একটা মেয়ে!
…………………
দুপুরের দিকে মোশারফ জামান সাহেব বাসায় ফেরেন। বাসায় ফিরে অতিথিকে দেখে একইসাথে অবাক ও খুশি হন। নিজের ছাত্রকে জীবনে সফল দেখে আজ তিনি গর্বিত।
লাঞ্চে সবাই একসাথে খেতে বসে। খেতে খেতে মোশারফ জামান সাহেব ও কৌশিক টুকটাক কথা বার্তা বলেন। মাহি চুপচাপ নিজের খাবার খাচ্ছে। মাহির মা হঠাৎ মাহির বাবাকে প্রশ্ন করেন,
"আজকের শাক ভাজিটা মজা হয়েছে না?"
মাহির বাবা : (খেতে খেতে) হুম।
মাহির মা : (হাসি মুখে মাহির দিকে তাকিয়ে ) কারণ আজকের শাক ভাজিটা মাহি করেছে।উত্তরে মাহির বাবা নিরবে খেতে থাকেন। আর তা দেখে মাহির মা নিঃশব্দে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। সিচুয়েশানটা কেমন যেনো অকওয়ার্ড হয়ে গেলো।
এমন সময় ছোট্ট শাহেদ হঠাৎ কৌশিকে বলে উঠে,
"কৌশিক ভাইয়া, আপনি কিভাবে এতো লম্বা হয়েছেন? আমাকেও বলেন না! আমিও আপনার মতো বড় হয়ে আর্মি অফিসার হবো।"
শাহেদের কথা শুনে মাহি বাদে সবাই হালকা হাসে। ছোটদের মনভরা স্বপ্ন। ওরা বড় হয়ে কতই না কিছু হতে চায়!
কৌশিক : ঠিকমতো খাওয়া, ঘুম, খেলাধুলা
মেইনটেইন করবে। তাহলেই
ইনশা_আল্লাহ আমার মতো লম্বা হবে।সবাই আবার খাওয়া দাওয়ায় মনোযোগ দেয়। এরমাঝেই শাহেদ মাহির দিকে চেয়ে আশ্বস্তসূচকভাবে মাথা নাড়ে। উত্তরে মাহি শুকনো মুখে হালকা একটু হাসে। ওদের দুজনের ইশারায় কথোপকথন সবার অগোচরে হলেও, কৌশিক আড়চোখে পুরো ব্যাপারটাই লক্ষ্য করে। মাহি মেয়েটাকে দেখে কেনো যেনো ওর এই মুহূর্তে মায়া হচ্ছে।
কিছুক্ষণ পরই মাহি খাওয়া শেষে প্লেট নিয়ে উঠে যায় রান্নাঘরে। মাহি চলে গেলে, মাহির বাবা ওর মাকে জিজ্ঞেস করে, "কী ব্যাপার? ওর খাওয়া এতো তাড়াতড়ি শেষ কেনো?"
মাহির মা : পেট ভরে গেছে হয়তো...প্লেট আর হাত ধুয়ে মাহি চলে যায় নিজের রুমে। মাহির মা ওর চলে যাওয়া দিকে একবার চেয়ে, হতাশাসূচক ভাবে মাথা নেড়ে আবার খাবারে মনোযোগ দেন। খাওয়া শেষে সবাই সবার রুমে চলে যান।