ভাগ্য কেনো এতো নিষ্ঠুর হয়? কেউ বলতে পারো?! পরিস্থিতি কেনোই বা সত্যকে দিনের মতো পরিষ্কার করে তুলে ধরে? মাঝে মাঝে রাতের অন্ধকারে ঢেকে যাওয়া মিথ্যে যে আনন্দ দিয়ে যায় সেটা কেনোই বা সাময়িক? সত্য কেনো সবসময় তেঁতো রূপ ধারণ করে? হাজারো প্রশ্ন, তবে কোনো উওর নেই।অন্ধকার রুম। ভোরের আবছা আলোয় রুমের ভেতরটা হালকা দেখা যাচ্ছে। জানালার কাছে চেয়ার পেতে বসে আছে এক রমনী। খুব সুন্দরী বা হুরপরী তাকে বলা যায়না। শ্যামবর্ণ মেয়েদের সুন্দরী বলেনা। সমাজ বলতে দেয়না। "মেয়েটা কালো, তবে মুখের গঠন ভালো" - শ্যামবর্ণ মেয়েদের জন্য খুবই পরিচিত একটা উক্তি। হাস্যকর নয় কি? কালো বলবে আবার মুখের গঠন ভালোও বলবে। তবে বলা বাহুল্য সে ভীষণ মায়াবতী। ডাগর ডাগর চোখ তার। চোখে রাজ্যের ক্লান্তি। শীর্ণ রোগা দেহ। তবে ওই দেহ নিয়ে হাটু সমান চুল সামলানো চাট্টিখানি কথা না একেবারে। বাবা মায়ের মৃত্যুর পর তাকেই তার রোগা দেহ আর অন্ধকারে আচ্ছন্ন ভাগ্যকে বয়ে বেড়াতে হয়।
দখিনা বাতাসে জানালার ধূসর রঙের পর্দাগুলো অনবরত উড়ছে। পূর্ব দিগন্তে লালিমা আভা স্পষ্ট ফুটে উঠছে। জানালার বাহিরে পাখির কিচির-মিচির শব্দ নতুন দিনের সূচনার জানান দিচ্ছে। পড়ার টেবিলের কোণায় রাখা চায়ের কাপ থেকে ধোয়া নিজ গতিতে বাতাসে মিয়িয়ে যাচ্ছে। সেদিকে তার বিন্দুমাএ ভ্রুক্ষেপ নেই। চায়ের কাপে চা ঠান্ডা হয়ে পানিতে পরিনত হচ্ছে। রমণী তার নিজস্ব ভাবনায় বন্দী। সময় গড়িয়ে ৭:৩০ প্রায়। হঠাৎ দরজায় ঠকঠক শব্দে ভাবণায় ছেদ পড়লো তার।
- "কে?"
- "এইতো আমি!" একজন বিশার্ধ্ব বয়সের তরুনী চাপানো দরজা ঠেলে রুমের ভিতর প্রবেশ করল।
- "ও লতা তুই"
- "হ্যা, একা রুমে বসে কি করছিস? নিচে চল, মিনা ম্যাডাম তোকে ডাকছেন"
লতার কথা শুনে মোহনা তার দুহাত উচু করে চুলে খোঁপা করল। ওড়না গায়ে পেচিয়ে ম্যাডামের রুমের উদ্দেশ্য রওনা হয়।- "ম্যাডাম আমাকে ডেকেছেন?" বিনম্র স্বরে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ম্যাডাম দরজার দিকে চোখ ঘুড়ালেন। হাতে তার নানা দরকারি কাগজ, টেবিলের উপরেও রঙ বেরঙের কাগজ দিয়ে ভরপুর। দরজার সামনে মোহনাকে দেখতে পেয়ে তাকে ভেতরে আসার অনুমতি দিলেন।
- "হ্যা ডেকেছিলাম, তোমার সাথে জরুরি কথা আছে। ভেতরে আসো, সিটে বসো" মোহনা ভদ্র পায়ে হেঁটে টেবিলের সামনে রাখা দুটি চেয়ারের একটিতে বসে।
- "তোমার তো ইন্টারমিডিয়েট শেষ। নিজের জীবন নিয়ে কিছু ভাবলে?" ম্যাডাম এই প্রশ্নটাই করবেন মোহনা আগে থেকেই আন্দাজ করছিলো।
- "জ্বি ম্যাডাম, আমি জমিগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকার পদে আবেদন করেছিলাম। অণিমার এক দুঃসম্পর্কের চাচা ওই স্কুলের পিয়ন। ওনার সহায়তায় আমি যোগদান করার সুযোগ পেয়েছি।"
- "আচ্ছা ঠিক আছে, আমি তোমার যাওয়ার ব্যবস্থা করছি। তুমি এখন আসতে পারো।"