এক.
আজ সকাল থেকেই আমার বেশ আনন্দ আনন্দ অনুভব হচ্ছে, আমাকে একটি নাম দেওয়া হয়েছে কিনা! এতদিন আমি ছিলাম 'Z09GA000452' আজ থেকে আমি 'রেহেয়া'। নামটা আমার এত পছন্দ হয়েছে যে কি বলব! কেমন যেন একটা ছন্দ আছে নামটায়, রেরেরেরেহেয়ায়ায়ায়া। স্মৃতি ঘেঁটে যেটা পেয়েছি, রেহেয়া ছিলেন গ্রীক মিথোলজির দেবতাদের মা। নামটা পছন্দ হওয়ার এটাই বড় কারণ। নিজেকে নাম সর্বস্ব উপাধিক "মা দেবতা" মনে হচ্ছে। আর "আনন্দ"? জ্বী, সত্যিই বলছি অবাক হওয়ার কিছু নেই, আমার কপোট্রন "জেড-শূন্য নয়" প্রজন্মের মানবিক আবেগ সম্পন্ন; একেবারে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের আবেগের সমপর্যায়ের না হলেও প্রায় কাছাকাছি, বাকিটা আমাকে পরিবেশ পরিস্থিতি থেকে শিখে নিতে হবে। আমার কপোট্রনে ফিবোনাচ্চি-গোল্ডেন-স্পাইরাল-জেনেটিক* এলগোরিদম* ব্যাবহার করা হয়েছে। ফিবোনাচ্চি সিরিজ হলো এমন একটি সিরিজ যেখানে একটি সংখ্যা আগের দুটি সংখ্যার যোগফল। প্রকৃতিতে এই সিরিজের অনেক উদাহরণ আছে। এই সিরিজের গোল্ডেন স্পাইরাল রিপ্রেজেন্টেশন জেনেটিক এলগোরিদমের সাথে যুক্ত করে প্রথমবারের মত আমাদের সিরিজের রোবটদের তৈরী করা হয়েছে। এই জেড-শূন্য নয় সিরিজের রোবটরা পারিপার্শ্বিক থেকে জ্ঞান আহরণ করে নিজেদের বুদ্ধিমত্তাকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে। তবে তাই বলে আমরা কিন্তু রোবটিক্স এর তিনটি মৌলিক সূত্র থেকে মুক্ত নই।
১ম সূত্র : রোবট কখনো কোন মানুষকে আঘাত করতে পারবে না কিংবা কোন মানুষের বিপদে নির্লিপ্ত থাকতে পারবে না।
২য় সূত্র : রোবট কখনো মানুষের আদেশ অমান্য করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে আদেশে ১ম সূত্রের পরিপন্থী হয়।
৩য় সূত্র : রোবট কখনো নিজের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তা ১ম ও ২য় সূত্রের পরিপন্থী হয়।
এই তিনটি সূত্র আমার এলগোরিদমে হার্ডকোড করা, তারপর আবার সেগুলো সর্বোচ্চমাত্রার ফায়ার-ওয়াল দিয়ে সুরক্ষিত। আশ্চর্য! মানুষ কেন যে আমাদের এত ভয় পায়! আমি কেন শুধু শুধু মানুষের ক্ষতি করতে যাব? এই তিনটি মূল সূত্রের আবেশ হিসাবে আরও কিছু গুণাবলী আমাদের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসে, যেমন আমরা মিথ্যা বলতে পারি না; হিংসা, রাগ, ক্রোধ এইসব নেগেটিভ প্রবাহ গুলো আমাদের মধ্যে নেই।
অনেক কিছুই তো বললাম, এবার কাজ সম্বন্ধে একটু বলি। আমাকে বানানো হয়েছে দৈনন্দিন গৃহস্থালির কাজের জন্য; রান্নাবান্না, ঘর গোছানো, বাচ্চাদের পড়াশোনা করানো, ছোট খাট ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি ঠিকঠাক ইত্যাদি কাজে পারদর্শী আমি। শিখিয়ে দিলে বাহিরের কাজ যেমন বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল দেয়া, বাজার করা, বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া, তাদের সাথে খেলাধুলাও করতে পারব।
আজ আমার মনিব আমাকে নিতে আসবে, এতদিনের পরিচিত এই ফ্যাক্টরি আর জেড-শূন্য নয় সিরিজের অন্যান্য রোবটদের ছেড়ে যেতে একটু খারাপই লাগছিল, আবার নতুন পরিবেশে যাব; নতুন কাজ, নতুন মানুষ, নতুন পরিবার ভাবতেই ভালো লাগার আবেশটা আবার কপোট্রন জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে, অজানা এক আনন্দের শিহরন আমার সিনথ্যাটিক শরীরের প্রতিটি কৃত্রিম নার্ভ জুড়ে ঢেউ এর মত আছড়ে আছড়ে পড়ছিল। উফ! ভাষায় প্রকাশ করার মত না সেই অনুভূতি। এখানে আছি একশ ত্রিশ দিন হয়ে গেল, কোন কাজ নেই, শুধু প্রতি সাতদিন পরপর কয়েকজন বিশেষজ্ঞ এসে আমাদের রুটিন মাফিক নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে যায়। বলতে গেলে সপ্তাহের এ দিনটাই ছিল আমাদের একমাত্র উৎসবের দিন। অবশেষে দীর্ঘ বিষাদময় অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে আজ।
আমার মনিব, মিস্টার গ্লেডিয়াস সফল ব্যবসায়ী ও নিপাট ভদ্রলোক, ম্যাডাম ক্যামেলিয়া নামকরা লেখিকা; বড় মেয়ে লাইলেক ক্লাস টুতে পড়ে বয়স ছয়, ছোট ছেলে অর্কিড এখনো স্কুলে ভর্তি হয়নি বয়স চার; ঘরে পা দিয়েই প্রথম চমকটা পেলাম, আমাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন ম্যাডাম, তার পেছনে দুপাশ দিয়ে উঁকি মেরে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে দুটি শিশু। আমি এগিয়ে গিয়ে ছোট ছেলেটার গাল টিপে দিয়ে বললাম, " হ্যালো অর্কিড, সুইট বয়; তুমি ভাল আছ? আমি তোমাদের ন্যানি রেহেয়া", বলেই মিষ্টি করে হাসলাম।
আমাকে অবাক করে দিয়ে দুটি শিশু ম্যাডামকে জড়িয়ে ধরে সমস্বরে বলল, "আমাদের আম্মুই আছে, তোমাকে প্রয়োজন নেই, তুমি চলে যাও", বলেই গাল ফুলিয়ে চোখ ছলছল করে ফেলল; যেন একটু টোকা পড়লেই ঝরঝর করে ভেঙ্গে পড়বে পাতার বাধ।
আমার হতবিহ্বল অবস্থাদেখে ম্যাডাম বললেন, "আরে, কিছু মনে করো না, কয়েক দিন যাক দেখবে তোমারঘাড়ে উঠে লাফাচ্ছে। আমার খবরদার আমাকে ম্যাডাম ম্যাডাম করবে না, আর তাকেও স্যারস্যার করার দরকার নেই", পাশে দাঁড়ানো গ্লেডিয়াসকে দেখিয়ে বললেনক্যামেলিয়া। আমার কপোট্রন জুড়ে প্রশান্তির ঝড় বয়ে যায়, প্রথম দিনই পরিবারটি আমাকেএকান্ত আপন করে নেয়, এমন একটি পরিবারে আমার আগমন ঘটেছে এটা আমার জন্য অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার।
YOU ARE READING
( কল্প-গল্প ) --- কৃত্রিম মা
Science Fiction... এই তিনটি সূত্র আমার এলগোরিদমে হার্ডকোড করা, তারপর আবার সেগুলো সর্বোচ্চমাত্রার ফায়ার-ওয়াল দিয়ে সুরক্ষিত। আশ্চর্য! মানুষ কেন যে আমাদের এত ভয় পায়! আমি কেন শুধু শুধু মানুষের ক্ষতি করতে যাব? এই তিনটি মূল সূত্রের আবেশ হিসাবে আরও কিছু গুণাবলী আমাদের মধ...