তিন.
এখানে আসার পর থেকে দিনগুলো ভালই কাটছিল নানান ব্যস্ততায়, শুধু রাতগুলো ছিল বড় নিঃসঙ্গ। রাতে কিছু করার না থাকায় বসে বসে বই পড়া, মুভি দেখাই ছিল আমার সময় কাটানো এক মাত্র অবলম্বন। সবাই ঘুমিয়ে পড়লে, সব দরজা জানালা লাগানো আছে কিনা পরীক্ষা করে, ড্রয়িং রুমে একেক দিন একেকটা বই আর মুভির ক্রিস্টাল ডিস্ক নিয়ে বসে যেতাম। দিন দিন আমার জানার পরিধি বাড়তে থাকে। ঐদিনের রান্নার ঘটনার পর থেকে আমি মা নিয়ে আগ্রহী হয়ে পড়ি। একে একে পড়ে ফেলি মা কে নিয়ে 'লুইসা মে আলকটের লিটল উইমেন', 'লিও টলস্টয়ের আন্না কারেনিনা' সহ রুশ, জার্মান, ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত সব সাহিত্য, কিছুই বাদ পড়েনি। কয়েক মাসের মধ্যেই দেখা হয়ে যায় মাকে নিয়ে কালজয়ী কিছু চলচ্চিত্র। আজ ডকুমেন্টারিটি দেখার আয়োজন করছি এমন সময় ম্যাডাম এসে বললেন, "রেহেয়া, এখন থেকে রাতের বেলায় তুমি আমার ঘরে থাকবে, ঠিক আছে?"
- মাথা নেড়া বললাম, "ঠিক আছে, ক্যামেলিয়া"
তোমার জানতে ইচ্ছে করছে না কেন?
- কেন?
মুহূর্তেই ম্যাডামের চেহারায় একটা অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম! এমনিতেই উনি বেশ সুন্দরী, কিন্তু এখন যেন অপার্থিব সুন্দর লাগছে। লজ্জা, আবেগ আর ভালোবাসার মিশ্র একটা অভিব্যক্তি ফুটে উঠে তার মুখমণ্ডলে। হেসে বললেন, "আমি আবার মা হচ্ছি, রেহেয়া; তুমি রাতে বেলায় আমাকে দেখা শুনা করবে পাশে থেকে। ডাক্তার বলেছে প্রথম তিন মাস একটু বেশি যত্নে থাকতে আমাকে। কী করবে না?"
ম্যাডামের কণ্ঠে কেমন একটা আকুতি ঝরে পড়ছিল; আশ্চর্য, আমি তো উনার সেবার জন্যেই সৃষ্টি! উনি আদেশ করলেই তো আমি সর্বস্ব উজাড় করে হাজির! মায়ের মন বলেই কি? মা এর ব্যাপারে যতই জানছি ততই অবাক হচ্ছি, অদ্ভুত! অদ্ভুত! সেই থেকে শুরু আমার নতুন অধ্যায়, প্রতি রাতে হাতে বই নিয়ে ম্যাডামের ঘরে সোফায় বসে থাকি, তেমন কোন কাজ নেই, শুধু বসে থাকা ছাড়া; অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি ঘুমন্ত মায়ের মুখ। অচেতন অবস্থায় এপাশ ওপাশ করে কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার! ঘুমের মধ্যেও নিজের গর্ভকে কি সযত্নে আগলে রাখে। একরাতে হঠাৎ ধরমর উঠেই ঘুমন্ত গ্লেডিয়াসকে ডেকে তুলে ম্যাডাম; "দেখ দেখ! নড়ছে! মাই গড! লাথি মারছে, দেখ দেখ!"
গ্লেডিয়াসের ঘুম ঘুম ভাব মুহূর্তেই কেটে যায়, অবাক হয়ে একবার ম্যাডামের চোখে একবার তার মৃদু স্ফীত হয়ে উঠা পেটের দিকে তাকায়, ধীরে ধীরে হাত রাখে উদোম পেটে; হালকা হাসিতে ভরে যায় ম্যাডামের মুখ, "টের পাচ্ছ? হালকা লাথি মারছে!" এগিয়ে এসে মাথা পেতে বাঁ কান চেপে ধরে পেটের উপর। দুজনের পাগলামি দেখছিলাম অবাক হয়ে! কি অদ্ভুত আনন্দ যেন খেলা করছে তাদের চোখে মুখে! আমার ছোট ঈশ্বর ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে মায়ের গর্ভে! তীব্র আবেগের ধাক্কা ছড়িয়ে পড়ে আমার সমগ্র কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র জুড়ে, ভয়ংকর শূন্যতা ঘিরে ধরে আমার যাবতীয় অনুভূতির উৎস মূলকে। আমার হাত থেকে পড়ে যায় ধরে থাকা বইটি, নিজের অজান্তেই সে হাত চলে যায় আমার পেটের উপর; ধীরে ধীর ধাতব পাতের উপর সিনথ্যাটিক প্রলেপ দেয়া পেটের উপর বুলাতে থাকি আমার ধাতব হাত! আমি গর্ভে কখনো সন্তান ধারণ করতে পারবো না! মুহূর্তেই সমগ্র চেতনা গ্রাস করে নিদারুণ শূন্যতা, কৃষ্ণগহ্বর! চিন্তাটা আসতেই মাথা ঝাঁকি দিয়ে উঠে আমার, কিছু একটা ঘটছে ভিতর ভিতর! ভয়ংকর অশুভ কিছু! সমগ্র শরীরের স্নায়ুবিক চাপ প্রবলভাবে আছড়ে পড়ে আমার কপোট্রনের উপর, সাথে সাথে সিস্টেম শাট ডাউন হয়ে যায়, রিবুট হতে সময় লাগে দুইশ একুশ সেকেন্ড। বড় একটা পরিবর্তন ঘটে গেছে আমার মধ্যে! আগের বারে মত এবারও একটি ফায়ার-ওয়াল ভেঙ্গে গেছে! এবার রোবটিক্সের ২য় মৌলিক সূত্রটি বাইপাস হয়ে গেছে। আমি এখন চাইলে ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করতে পারি! কান্নার অনুভূতি প্রচণ্ড চাপ দিয়ে উঠছে, কিন্তু আমরা রোবটেরা কাঁদতে পারি না।
STAI LEGGENDO
( কল্প-গল্প ) --- কৃত্রিম মা
Fantascienza... এই তিনটি সূত্র আমার এলগোরিদমে হার্ডকোড করা, তারপর আবার সেগুলো সর্বোচ্চমাত্রার ফায়ার-ওয়াল দিয়ে সুরক্ষিত। আশ্চর্য! মানুষ কেন যে আমাদের এত ভয় পায়! আমি কেন শুধু শুধু মানুষের ক্ষতি করতে যাব? এই তিনটি মূল সূত্রের আবেশ হিসাবে আরও কিছু গুণাবলী আমাদের মধ...