-মা মানি ! এটুকু খেয়ে না !
-না ! খাবো না । তেতো লাগছে ।
-খেতে হবে ! কই মুখ খোলো !
আবন্তি ভাল করে চোখ মেলে দেখলো সে নিজের ঘরে নেই । সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে মনে হল কোন হাসপাতালে আছে । সামনে ওর দিকে স্যুপের বাটি নিয়ে স্যামের আম্মু ফরিদা পারভিনকে দেখা যাচ্ছে ।
-মুখ খোলো !
আবন্তি মুখ খুলল । ফরিদা পারভিন পরম যত্ন নিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলেন । পুরো স্যুপের বাটি খালি করেই তবেই তিনি উঠলেন ! আবন্তির মনে হল ও যেন স্বপ্ন দেখছে ! এমন ভাবে ওর দেখা শুনা কেউ করেছে কি না আবন্তির মনে নেই ।
এমন স্বপ্ন ও প্রায়ই দেখে । ও খুব শরীর খারাপ করে ঘরে শুয়ে আছে । ওর মা ওকে আদর কয়ে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে । জল পট্টি দিয়ে দিচ্ছে । কিন্তু তার এই জীবনে এমন ঘটনা কোন দিন ঘটে নি । আজকে ঘটছে !
আবন্তি বলল
-আমি এখানে কিভাবে এলাম ?
-এখন কোন কথা না । তোমার যে বৃষ্টিতে ভিজলে এমন জ্বর আসে সেটা জেনেও তুমি স্যামের সাথে বৃষ্টিতে ভিজেছো কেন ? আগে তুমি ঠিক হও স্যামের কপালে দুঃখ আছে ।
-ওর কোন দোষ নেই । আমিই ......
-হয়েছে । ও কেন ভিজতে দিবে ? এই খেয়াল নেই ?
কটপ রাগটা কেন জানি আবন্তির অসম্ভব ভাল লাগলো । বুকের ভেতরে কেমন জানি করতে লাগলো । ওর নিজের মা যদি এমন হত তাহলেও ওকে এভাবে বকাবকি করতো ! এমন করে শাসন করতো ?
ঘন্টা খানেক পরে স্যাম আসলো হাসপাতালে । হাতে ফুলের তোড়া ! ওর দিকে তাকিয়ে হাসলো । তারপর বলল
-ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে তুমি ! এভাবে কারো জ্বর আছে আমার জানা ছিল না ।
-আমি এখানে কিভাবে এলাম ?
-আম্মু নিয়ে এসেছে তোমাকে ! আমিও অবশ্য ছিলাম !
-কিন্তু খবর পেলেন কিভাবে ?
-তোমার সম্ভবত হুস ছিল না জ্বরের কারনে । তুমি আমাকে মেসেজ পাঠাতে গিয়ে আম্মুকে পাঠিয়ে ছিলে । আম্মুতো তখনই আমাকে নিয়ে তোমার বাসায় হাজির । দরজার কাছে গিয়ে দেখি তুমি দরজাটাও ঠিক মত লক কর নি । বৃষ্টিতে ভিজলে তোমার জ্বর আসে তবুও কেন এভাবে ভিজলে । তোমার জন্য আম্মু আমাকে এতো বকেছে জানো !!
তারপরও আরও দুইদিন আবন্তিকে হাসপাতালে থাকতে হল । ওকে যেদিন রিলিজ করে দিবে সেদিন বিকেলেও খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো । ফরিদা পারভিন রুমের ভেতরে এসে দেখে আবন্তি বারান্দায় দাড়িয়ে আছে । বৃষ্টির দিকে আছে । খানিকটা ধমকের সুরে আবন্তিকে বিছানা এসে বসতে বলল । আবন্তি আবার বেডের কাছে আসতে আসতে বলল
-আন্টি আমার আবারও বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে ।
-কি ! কি বলে এই মেয়ে !
-আবার বৃষ্টিতে ভিজলে আবার জ্বর আসবে । আবারও আপনি স্যাম আঙ্কেল আমার জন্য অস্থির হয়ে যাবে । আমাকে দেখা শুনা করবেন ! আসলে ছোট বেলা থেকে এমন ভালবাসা আদর পেয়ে আমার অভ্যেস নেই তো তাই লোভ সমালাতে পারছি না । আমার কেউ নেই তো যে আদর করবে ..।
ফরিদা পারভিন দেখলো আবন্তির চোখে পানি । তিনি মেয়েটার জন্য এমন মায়া অনুভব করলেন ! আবন্তিকে জড়িয়ে ধরে বললেন
-তুমি আজকে থেকে আমাদের বাসায় থাকবে । ঠিক আছে ! আর কেউ নেই এই কথাটা খবরদার বলবে না ! আজ থেকে আমাকে আন্টি নয় আম্মু বলে ডাকবে ! মনে থাকবে ?
YOU ARE READING
Incidents happen
Romanceব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে আবন্তি । সব সময় একা একা থেকেছে, একা একাই বড় হয়েছে । থাকে বাবার সাথে যে কি না বেশির ভাগ সময়েই থাকে বাইরে । নিজেকে কঠিন হৃদয়ের মানুষ হিসাবে উপস্থাপন করলেও মনের অনেক গভীরে ভালবাসা পাওয়ার জন্য আরও একটা মন সব সময় লুকিয়ে থাকে, বাইরে...