স্যাম অফিসের সামনেই দাড়িয়ে আছে । ওর ফ্ল্যাটটা ওর অফিসের ঠিক কাছেই । এখানে যাওয়ার জন্য গাড়ির দরকার হয় না । কিন্তু ও গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে আছে । ওর বাবার সাথে ওকে যেতে হবে ওদের বাসায় । বাবা বলছিলো কি যেন একটা কাজ আছে । ঠিক তখনই স্যাম আবন্তিকে দেখতে পেল। হাটতে হাটতে ওর সামনে এসে দাড়ালো । আর ঠিক সেই সময়েই ওর বাবাকে নিয়ে গাড়িটা এসে থামলো ওর পাশেই ।
কোন দিকে যাবে ?
আবন্তির দিকে নাকি গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে বসবে । কিন্তু কিছু করার আগেই ওর বাবা নিজেই দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে এল । ওর বাবাও আবন্তিকে দেখতে পেয়েছে । আবন্তির দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল
-আরে তুমি এখানে ?
-গুড আফটারনুন আঙ্কেল ! এই তো !
-কোথায় যাবে ?
-বাসার দিকে যাবো । স্যামকে চাবি দিতে এসেছি !
স্যাম দেখলো ওর বাবা ওর দিকে তাকালো । ওর বাবা বলল
-ওকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসো না কেন ? তোমার মায়ের সাথে ওর প্রতিদিন দেখা হয় । তুমিও দেখা কর । তা কেবল আমি বাদ যাবো ?
স্যাম কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না । তারপর আবন্তির দিকে তাকিয়ে বলল
-তা মামনি আজকেই চল আমাদের বাসায় !
-আঙ্কেল আজকে একটা জরুরী কাজ চলে এসেছে । কালকে আসি ! কালকে ছুটির দিন আছে সবার সাথে দেখা হবে !
-প্রোমিজ তো ?
-একদম ! কালকে !
-ওকে ! ডান ।
তারপর স্যামের দিকে তাকিয়ে বলল
-শুনো, তাহলে তোমার আর আসা লাগবে না আমার সাথে । তুমি আবন্তিকে ওর বাসায় পৌছে দিয়ে আসো !
তারপর আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি নিয়ে হুস করে চলে গেল ।
চাবি টা তখনও আবন্তির হাতেই । আবন্তি ওর কাছে এসে বলল
-চল ?
-দাড়াও । গাড়ি আসুক !
-না গাড়িতে করে যাবো না
-তাহলে কিসে করে যাবা ?
-রিক্সায় করে ! যে ছেলে সারা জীবন গাড়ি ছাড়া চলে নি তাকে নিয়ে রিক্সায় চড়তে কেমন লাগে সেটা দেখতে চাই ।
-দেখো এখন আকাশের অবস্থা ভাল না । দেখেছো তো । যখন তখন বৃষ্টি নামবে !
-আরে এখানেই তো আসল মজা ! বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে বৃদ্ধিতে ভিজতে মজাই আলাদা ।
কথাটা বলে আবন্তি এতো জোরে হাসতে লাগলো যে আশে পাশে মানুষজন পর্যন্ত ওদের দিকে ফিরে তাকাতে শুরু করলো । বুঝতে কষ্ট হল না ওরা এখানেই জব করে । বসের ছেলের সামনে একটা মেয়ে দাড়িয়ে এবং সে অদ্ভুদ ভাবে হাসছে এটা দেখে তারা খানিকটা অবাক না হয়ে পারলো না । শেষে স্যাম আবন্তিকে নিয়ে রিক্সাতেই উঠে বসলো । অদ্ভুদ লাগলেও ওর খারাপ লাগছিলো না !
তবে স্যাম বুঝতে পারছিলো যে মেয়েটার ভেতরে কি যেন একটা পরিবর্তন এসেছে । মেয়েটা কথা বলছে খুব বেশি ! এতো কথা তো মেয়েটা বলতো না । এমন করছে কেন ?
আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হল যে আজকে বৃষ্টি আসবেই । এখন তার আগে আগে বাসায় পৌছাতে পারলে হয় !
আবন্তি কি করছে সেটার কোন ব্যাখ্যা ওর নিজের কাছেও নেই । ও কেবল এসেছিল চাবিটা দেওয়ার জন্য । তারপর ওর ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু স্যামের বাবার সাথে দেখা হয়ে যাওয়াটা কেমন সব পরিবর্তন করে দিল । ওভাবে স্যাম কে নিয়ে রিক্সায় ওঠাটা ওর কোন ইচ্ছে ছিল না । তার উপর আকাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যখন তখন বৃষ্টি নামবে । আবন্তির আবার বৃষ্টির পানি একদম সহ্য হয় না । গায়ে পড়লেই জ্বর চলে আসে । এই জন্য ও বৃষ্টির পানিকে খুব এড়িয়ে চলে । কিন্তু আজকে ওর এসব কোন চিন্তার ভেতরেই আসছে না ।
স্যামের দিকে তাকিয়ে একটার পর একটা কথা বলেই চলেছে । স্যামের দিকে তাকিয়ে প্রথমে মনে হচ্ছিলো ছেলেটা সম্ভবত একটু অবাক হচ্ছে তবে কিছু সময়ে সেটাও দুর হয়ে গেল গেল । আবন্তির মনে হল ও সারা জীবন মানুষের মিশতে পারে নি ওর পারিবারিক কারনে স্যাম নিজেও খানিকটা সেরকম । মানুষের সাথে ঠিক মত মিশতে পারে না । ও মা ই বলেছিলো ।
সত্যি সত্যিই বৃষ্টি নেমে গেল । কিছু সময়ের ভেতরেই দুজনই ভিজে একদম একাকার হয়ে গেল । কিছু সময় যাওয়ার পরই আবন্তি বুঝতে পারলো ওর শরীরে কাঁপন শুরু হয়েছে কিন্তু সেটা ও আমলেই নিল না । পুরোটা সময় বৃষ্টিতে ভিজতেই লাগলো । কেন জানি ওর অসম্ভব ভাল লাগছিলো । কোন ব্যাখ্যা নেই তবুও । পাশে এমন একজন আছে এই জন্য ভাল লাগছে ?
কিন্তু সে তো আসল কেউ না । কদিন পরে এই সব কিছু কেমন কোথায় চলে যাবে তখন ?
যখন আবন্তির সামনে নামলো তখনই রীতিমত ওর জ্বর চলে এসেছে । স্যাম ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি ঠিক আছো ?
-হ্যা !
-কাঁপছো মনে হচ্ছে !
-একটু ঠান্ডা লাগছে । শরীর মুছলে ঠিক হয়ে যাবে !
কেন জানি আবন্তির খুব ইচ্ছে এই কথা বলতে যে আমার এখনই আকশ পাতাল জ্বর আসবে । তুমি একটু থাকবে আমার পাশে । কিন্তু বলল না । আজকে যেটুকু হয়েছে সেটাই অনেক । অনেক বেশি ! খানিকটা টলতে টলতেই আবন্তি লিফটের দিকে পা বাড়ালো ।
أنت تقرأ
Incidents happen
عاطفيةব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে আবন্তি । সব সময় একা একা থেকেছে, একা একাই বড় হয়েছে । থাকে বাবার সাথে যে কি না বেশির ভাগ সময়েই থাকে বাইরে । নিজেকে কঠিন হৃদয়ের মানুষ হিসাবে উপস্থাপন করলেও মনের অনেক গভীরে ভালবাসা পাওয়ার জন্য আরও একটা মন সব সময় লুকিয়ে থাকে, বাইরে...