আবার লোকটি বলতে শুরু করলো তার কাহিনী..।
"ভার্সিটিতে আমাদের শেষদিন ছিলো ওইদিন। সবাই সবার সাথে কথা বলছিলো। কুশল বিনিময় করছিলো.। এতোদিনের বন্ধুত্ব, এতোদিনের চেনাজানা মানুষজন একেক দিকে চলে যাবে..। আমি আর তিশা খুব ভালো বন্ধু হলেও কখনোই কেউ কাউকে বলিনি আমরা একে অপরকে পছন্দ করি। কখনো দরকার হয়নি সেটা। কিন্তু আজ মনে হচ্ছিলো আমাকে সব বলতেই হবে ওকে.। নাহলে কখনই বলা হবেনা আর। আরে..! আজব তো...আজ একবারের জন্যও দেখলাম না তো ওকে। কই ও....আরো কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলাম ওর কথা। কেউ বলতে পারলো না। গতকাল রাতেও তো কথা হলো ওর সাথে। তখনো বললো আসবে। কোন রঙের জামা পড়ে আসবো আমরা তাও ঠিক হলো। গেলো কই তাহলে মেয়েটা। ওর ফোনে কল দিলাম। ফোন কেউ ধরলো না। অনেক বার চেষ্টা করলাম। কেউ ধরলোনা ফোন। তারপর ফ্রেন্ডের মোটরবাইক নিয়ে ওর বাসার দিকে চলে গেলাম একদম..। অনেক বার আসা হয়েছে এদের বাসায়। সেগুন বাগিচায় বিশাল বাসা ওদের। বাসার সামনে ২৪ ঘণ্টা পাহারা থাকে। গার্ড মামার সাথে ভালই পরিচয় আমার। আমাকে দেখতেই বলল ওরা সবাই নাকি সিংগাপুর চলে গেছে সকালে। কাল ভোরের দিকে ছোট ম্যাডাম মানে তিশা খুবি অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেকদিক থেকেই নাকি ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত সে। এই জন্যই তাহলে মাঝে মধ্যে কিছুদিনের জন্য উধাও হয়ে যেতো সে...জিজ্ঞেস করলে বলতো ফ্যামিলি প্রবলেম....কখনো কিচ্ছু বলেনি এই ব্যাপারে। ডাক্তার অনেক দিন থেকেই বলছিলো অপারেশন করাতে। কিন্তু তিশার এক কথা যে ভার্সিটির ঝামেলা শেষ হোক। আর তো মাত্র কয়টা দিন....। সারাদিন ওর বাসার সামনে বসে থাকলাম। পরদিন সকালে খবর পেলাম আমার তিশা আর নেই। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ওখানেই শেষ হয়ে যায় সব..। সারাদিন পাগলের মত হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলাম। তারপর থেকে কিছু ভালো লাগেনা। কোনো কাজ করতে পারিনা...সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে আমার তিশাকে খুঁজি। ." বলতে বলতে অপ্রকৃতস্থের মত হা হা করে হেসে উঠলো সে। শরীর হীম করা হাসি....তারপর উঠে চলে গেলো টলতে টলতে। ত্রয়ী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সেদিকে......।
পাশে একটি লোক দাঁড়িয়ে হাসছিলো..ঠিক হাসি বলা যায়না..মুখ দিয়ে হাসির মত শব্দ বের করছিলো....
-"কি ব্যাপার...হাসেন কেনো??"
-"অর গল্প শুইনা হাসতাছি"
-"মানে?!! "
তারপর লোকটা যা বলল তার সারমর্ম এই যে, আসলে যে মেয়েটাকে ও ভালোবাসতো মারা যায়নি সে। রীতিমতো সেদিন সব ঠিক ছিলো। ছেলেটা ওই মেয়েকে সব বলে যে সে পছন্দ করে তাকে। কিন্তু মেয়ে তাকে প্রত্যাখ্যান করে। সে নাকি তাকে বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবেনি..। তারপর মেয়েটা এক ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট এর ছেলেকে বিয়ে করে...। তখন থেকেই এই লোক এমন হয়ে গেছে..। সবার কাছে বলে বেড়ায় যে মেয়েটা মারা গেছে..কিন্তু না..। সে বেঁচে আছে...। দিব্যি ভালোভাবেই বেঁচে আছে...। অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করার খবরটা নিতে পারেনি ওই সে....তাই তার মস্তিষ্ক কাল্পনিক কাহিনী বানিয়ে নিয়েছে যে মেয়েটা মরে গেছে....। কতই না আজব আমাদের এই মস্তিষ্ক...। একজন বিখ্যাত ঔপোন্যাসিক বলেছিলেন, প্রকৃতি রহস্য করতে পছন্দ করে। আসলেই তাই। থাকুক না প্রকৃতি তার নিজস্ব কিছু রহস্য নিয়ে.....।
ESTÁS LEYENDO
শেষ বিকেলের কয়েকটি ফুল ও অন্যান্য
Novela Juvenilবাড়ি থেকে রাগ করে বের হয়ে আসে ত্রয়ী। পরিচয় হয় চালচুলোহীন এক পাগলের সাথে। এগিয়ে চলে গল্পের কাহিনী.......