মাহিদ, হ্যন্ডসাম যুবক। বছর খানেক হলো গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে। পড়ালেখা করেছে ইন্জিনিয়ারিং এ, সিভিল ইন্জিনিয়ার। গ্রাজুয়েশনের পর কয়েক মাস ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পে চাকরিও করেছে। অনেকটা কৌতুহল থেকেই ওর ওই চাকরিতে যাওয়া। দেশের ইতিহাসের প্রথম মেট্রোরেলে নিজেকে সম্পৃক্ত করার ইচ্ছা থেকে ওর মেট্রোরেল প্রকল্পে কাজ করা।
ইন্জিনিয়ারিং পড়ার সময় মাহিদের একবার একটা বাংলাদেশী দলের সাথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল মালয়েশিয়ার যোগাযোগ অবকাঠামো পরিদর্শন। মালয়েশিয়ায় মাহিদের মেট্রোরেল দেখা ও চড়ার সুযোগ হয়েছিল। মেট্রোরেলের আরামদায়ক ভ্রমণ আর সুন্দর পরিচালন ব্যবস্থাপনা দেখে মাহিদ মুগ্ধ হয়েছিল। তখন থেকেই ওর মেট্রোরেলের প্রতি আগ্রহ।
তবে ওর বাবা মা চাইনি ও প্রকল্পে বেশী দিন কাজ করুক। নিছক ছেলের ইচ্ছা পুরণের জন্য তখন বাধা দেয়নি। প্রকল্পের চাকরি ছেড়ে মাহিদ ভার্সিটিতে মাস্টার্স (এমএস) এ ভর্তি হয়েছে। তবে ক্লাসের লেখা পড়াই খুব একটা মনোযোগ নেই। দেশের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জিআরই কোর্সে ইংলিশ কাউন্সিলে ভর্তি হয়েছে। তিথির মত মাহিদেরও শনিবার ক্লাস। তিথির IELTS কোর্স শেষের দিকে, আর মাহিদ দুই সপ্তাহ আগে শুরু করেছে।
সিকিউরিটি চেক হয়ে তিথি কাউন্সিল প্রাঙ্গনে প্রবেশ করল। ওর বনধুরা আগেই চলে এসেছে। কয়েক মাস ধরে কাউন্সিলে ক্লাস করার সুবাদে এটা ওদের কাছে ভার্সিটি ক্যাম্পাসের মতোই মনে হয়। আজ ওদের ক্লাস নেই তবুও মেলাই ঘুরতে আর আড্ডা দিতেই আজ ওরা এসেছে।
তবে, মাহিদের আজ ক্লাস আছে। ও জানতো না যে আজ এখানে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ভিতরে ডুকে বুঝল। শিক্ষক ক্লাস শেষে সবাইকে মেলা আর সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখার পরামর্শ দিলেন।
মাহিদের বাবা আজ ঢাকার বাইরে আছে। মা বাসাই একা। রাত করে বাসাই ফেরা ঠিক হবে না। তাই ক্লাসের বিরতিতে মাহিদ মেলায় একটু ঠু মারল। বিভিন্ন ধরণরে পিঠা, হস্ত শিল্প দ্রব্য, কাপড়, শো-পিচসহ বিভিন্ন আইটেমের স্টল বসেছে। দাম একটু বেশী। তবে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা বেশীর ভাগই সমাজের উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর।
মেলা প্রাঙ্গণের একপাশে তিথি আর তার বনধুরা দাঁড়িয়ে কি যেন করছে। প্রথমে মাহিদ তিথিকে খেয়াল করিনি। মেলা ঘুরে দেখা শেষে যখন বের হয়ে আসছে তখন মাহিদের নজরে পড়ল। কিছুক্ষণ ওর চোখ তিথির দিকে স্থির হয়ে গেল। কি অপরূপ সুন্দরী, দেখা মনে হয় খুব চেনা, কোথায় যেন দেখেছি?
কিছুক্ষণ পর তিথি'র নজর মাহিদের দিকে পড়ল। দুজনের চোখে চোখ পড়ে গেল। মাহিদ বেশ লম্বা, উজ্জ্বল গায়ের রং, স্লিম, মাথা ভর্তি চুল, পরনে সাদা সার্ট আর হালকা রংয়ের গ্যাবারডিন প্যান্ট, পায়ে হালকা ধুসর রংয়ের কেডস। বেশ স্মার্ট দেখাচ্ছে মাহিদকে।
মাহিদের দৃষ্টির স্থবিরতা ভাঙলো। মেলার স্থান ত্যাগ করে ও বের হয়ে গেল
আজ সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিথি উপস্থাপনা করবে। সেজন্য ও পারফর্মারদের মতোই সেজেছে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা শেষ করে তিথি গাড়িতে উঠলো। ঢাকা শহরের অসহনীয় জ্যাম ঠেলে বাসায় ফিরতে রাত সাড়ে দশটা বেজে গেল। তিথির মা ততক্ষণে চেম্বার ছেড়ে বাসায় ফিরেছে।
তিথির মা মিসেস সাবিহা পেশায় ডাক্তার। দশ বছর বয়সী ছোট ভায়টা তখনও জেগে আছে। ওর নাম সিহাম, মা ও বোনকে পেয়ে সে এখন পৃথিবীর অন্যতম সুখী মানুষ। তবে, তিথির পরিবারের গল্পটা কিন্তু এতটা সুখকর নয়। সিহামের জন্মের আগেই তিথির বাবা মিজান সাহেবের মৃত্যু হয়।
(চলমান)
YOU ARE READING
অ-পূর্ণ?
General Fictionপৃথিবীতে প্রতিটি মানুষেরই কোন না কোন অপূর্ণতা থেকে যায়। জীবনের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির বৃত্তে অপূর্ণতাকে মেনে নেয়া না নেয়ার জটিল সমীকরণের কিছুটা তুলে ধরার প্রয়াস থেকেই এ লেখা।