1.3K 39 0
                                    

চোখ মেলে তাকাতেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম হাসপাতালের বেডে।
শরীরে যন্ত্রণা হচ্ছে,মাথা টা ভারী হয়ে আছে।ডান হাত টা যেন অবশ হয়ে আছে।খুব দূর্বল বোধ করছি।
মাথা ঘুরে তাকিয়ে দেখি ইফতি চেয়ারে বসে মাথা নিচু করে আছে।আমি উঠে বসার চেষ্টা করলাম। একটু কষ্ট হলেও উঠে বসলাম।
তারপর ডাকলাম, ইফতি..
ইফতি মুখ তুলে তাকালো।ওর চেহারা দেখে চমকে উঠলাম। একি হাল হয়েছে চেহারার! মুখ টা শুকিয়ে গেছে,চুল গুলো এলোমেলো, দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব টেনশনে ছিলো।
উঠে এসে অনেক্ষন অপলক ভাবে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।তারপর চোখের পানি ছেড়ে দিলো।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।এই প্রথম ইফতিকে কাঁদতে দেখছি!
বললাম,এই পাগল কাঁদছিস কেন? আমার তো কিছুই হয়নি।
ইফতি চোখ মুছে বলল,খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম রে।তোর কিছু হয়ে গেলে আমি কিভাবে বাচতাম?
- আমার কিছু হয়নি তো।এইতো আমি ভালো আছি।
- হয়নি কিন্তু হতে পারতো। আমি এতটা ভয় পেয়েছিলাম যে কাল থেকে কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।পাগলের মত ঘুরছি শুধু।আমার মেজ চাচা ইলেক্ট্রিক শক খেয়ে মারা গেছে।
- হুম,এখন ভয়ের কিছু নেই।শুধু মাথায় একটু ব্যাথা পেয়েছি আর হাতে। আর কিছু হয়নি আমার ইফু।
- আমি মরে যেতাম তোর কিছু হলে।
- ইস রে,মরতে হবেনা।দ্যাখ অন্য ছেলের সাথে বিয়ে হতে গিয়েও তোর সাথে হলো।তোর কাছ থেকে আমাকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।
ইফতি আবারো চোখ মুছলো।
আমি একটু এগিয়ে আসার চেষ্টা করতেই ইফতি নিজেই এগিয়ে এসে আমার হাত ধরলো।
বললাম, খুব ভয় পেয়েছিলি সেটা বুঝতেই পারছি।
- কাল তুই মেঝেতে ছিটকে পড়ার পর আমি হতবাক হয়ে দেখছিলাম তোকে।তোর মুখটা বিকৃত হয়ে যাচ্ছিলো,কষ্টে ছটফট করছিলি তুই।বিশ্বাস কর,আমার ও ঠিক ততটাই কষ্ট হয়েছে।আমি ও তোর মতই ছটফট করছিলাম।কিন্তু যখন তুই একেবারে অচেতন হয়ে পড়লি আমি ভেবেছিলাম তুই হয়ত আমাকে ছেড়ে...
ইফতি আর কিছু বলতে পারলো না।কেঁদে ফেললো আবারো। আমি ওর চোখ মুছে দিয়ে বললাম,কাদবি না তো মেয়েদের মত।
- হুম,তুই আর কখনো ইলেক্ট্রিক লাইনে হাত দিবিনা বলে দিলাম।
- কেন? শোন,মৃত্যু যেভাবে লেখা আছে সেভাবে ই হবে।যদি কোনো এক্সিডেন্ট এ মরণ লেখা থাকে তো..
ইফতি আমার মুখে হাত দিয়ে বলল,এমন কথা বললে আমি নিজেই তোকে মেরে ফেলবো একদম।
- তোর চেহারা এমন উদভ্রান্তের মত দেখাচ্ছে কেন? বউ মরলে বুঝি এমন হবি?
- নাহ,আমার কিছু হব্বেনা।তুই মরার চল্লিশ দিনের মধ্যেই আরেকটা বিয়ে করে ফেলবো।
- তাহলে এখুনি মেয়ে ঠিক করে রাখ।
- কেন?
- এ যাত্রায় বেচে গিয়েছি কিন্তু এর পরের বার সত্যিই মরে যাবো।
ইফতি রেগে অগ্নিদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো।তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আমায়।
ঘটনার আকস্মিকতায় অবাক হয়ে গেলাম।
ইফতি আমার মাথাটা ওর বুকে চেপে ধরলো।আমার খুব ভালো লাগছে।মনে হচ্ছে ওর বুকেই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখের জায়গা।আমার পুচকে শরীরটা ওর শরীরের সাথে মিশে এক হয়ে গেলো।
.
অনেক্ষন নিরবে কেটে যাওয়ার পর ইফতি আমায় ছেড়ে দিয়ে বলল,তুই এত মিষ্টি কেন রে?
আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম,কেন?
- তোকে জড়িয়ে ধরে এত ভালো লাগে কেন?
- হা হা হা।
ইফতির কথায় খুব মজা পেয়েছি। হাসি থামাতে পারছি না।
ইফতি বাসায় ফোন দিয়ে আমার জ্ঞান ফেরার কথা জানালো।
কিছুক্ষনের মধ্যেই শ্বশুর বাড়ির সবাই এসে হাজির।
শ্বাশুরি মা খাবার রান্না করে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু ইফতি কাউকে খাইয়ে দিতে দিলো না।নিজেই আমার পাশে বসে আমাকে তুলে খাওয়াতে লাগলো।
আমি বললাম,কিরে তুই আবার তেলাপোকার স্যুপ খাওয়াবি না তো?
- হ্যা খাওয়াবো।
- তাহলে কিন্তু হসপিটালের বেডে হেগে ল্যাডাফ্যাডা করে ফেলবো।

ঠিকানাWhere stories live. Discover now