লাবন্যপ্রভা
পর্ব-১
১.আমাদের পাড়ার রাজপুত্র ছিলেন তুনিড় ভাই। তুনিড় ভাই যখন রাস্তা দিয়ে হেটে যায় তখন মেয়েরা পলকহীন ভাবে চেয়ে থেকে তুনিড় ভাই কে গিলে খেত। ঝাকড়া চুল, খোঁচা দাড়ি, ফর্সা রঙ, আর গোলাপি ঠোঁট দেখে হয়তো মেয়েদের বুকে কাঁপুনি ধরে যেত। এই কাঁপুনি অন্য কারও হয় কি না জানিনা তবে আমার হতো। সে এক অন্যরকম অনুভুতি! পাড়ায় কোনো অনুষ্ঠান হলে টিপটপ হয়ে যাওয়ার কারন ছিলো তুনিড় ভাই। তুনিড় ভাই আমাকে একটু দেখবে এই আশায় সেনসিটিভ স্কিন নিয়েও আমি মেকাপ লাগাতাম। আর তুনিড় ভাই বলতো, লাবন্য এই যে এতো মেকাপ লাগিয়েছ তোমার অসহ্য লাগেনা?? আমি হতাশ হয়ে মনে মনে বলতাম, একটুখানি মেকাপ তো আপনার জন্যই লাগিয়েছি। তাও তো আপনি চেয়ে দেখলেন না।
বাসায় মা কিছু বানালে আমি সেটা ইচ্ছে করেই তুনিড় ভাইদের বাসায় নিয়ে যেতাম। একদিন শুনলাম তুনিড় ভাইয়ের মা বললেন, তুনিড় ভাইয়ের নাকি অন্যের বাসার খাবার খেতে বেশী ভালো লাগে। আগ্রহ করে তাই পায়েশ রান্না করে তুনিড় ভাইয়ের জন্য নিয়ে গেলাম। তুনিড় ভাই ছুয়েও দেখল না। বলল জানো লাবন্য দুধের কোনো খাবার দেখলেই আমার বমি পায়।
এরকম আরও কত শত পাগলামি যে করতাম তুনিড় ভাইকে মুগ্ধ করার জন্য। কখনো ফিতে দিয়ে চুলে বিনুনি করতাম, কখনো বা সস্তার শাড়ি পরে কলেজে যেতাম। তুনিড় ভাই ফিরেও তাকাতো না। শুধু দেখলে বলতো কি লাবন্য খবর ভালো তো??
আমি মনে মনে বলতাম আপনি কি সত্যিই আমার খবর জানতে চান তুনিড় ভাই! আপনি কি জানতে চান কেন আমি সিগারেট খাওয়া ছেলেদের ইদানীং পছন্দ করতে শুরু করেছি। কেন আমার উদ্ভট সাজগোজ ভালো লাগে! তুনিড় ভাইকে এসব কথা কখনও বলা হয়নি। তুনিড় ভাই জানেন ও না যে আমার কিশোরী বয়সের সব পাগলামি তার জন্যই ছিলো। তার জন্যই মাঝরাতে বেনসন সিগারেটে টান দিয়ে কাশতে কাশতে হাপিয়ে যেতাম। তার উদাসীনতার জন্য মাঝে মাঝে ছাদের রেলিঙের উপর দাঁড়িয়ে পড়তাম।আমাকে না দেখার, পছন্দ না করার কারন হঠাৎ করেই আবিষ্কার করতে পেরেছিলাম।
হঠাৎ একদিন শুনলাম তুনিড় ভাইয়ের প্রেম রুপসা আপুর সাথে। রুপসা আপু তুনিড় ভাইয়ের সাথে একই ভার্সিটিতে পড়ে। আমি মন খারাপ করলাম। আমার ১৭ বছরের কিশোরী মন টা ভেঙে গেল একমুহুর্তে। তুনিড় ভাই যেমন আমাদের পাড়ার রাজপুত্র ছিলো, আমিও তো তেমন রাজকন্যাই ছিলাম। তবুও কেন সে কালো, রোগা রুপসা আপু কে পছন্দ করল!! তুনিড় ভাই কি জানেনা যে রাজকন্যা ছাড়া রাজপুত্রের জীবনে কখনো হ্যাপি এন্ডিং হয়না!