১ম

661 16 0
                                    

চোখের তারায়"
        [♥]

  লেখাঃ "তামজিদ হাসান"

শুভ্র, শুভ্রের মা বাবা এবং ছোট ভাই ইশতিদের বাসার ড্রইং রুমে বসে আছে। ইশতিকে দেখতে এসেছে শুভ্রের পরিবার। শুভ্র পেছনের কথাগুলো ভাবছে।

ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস তারপর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে বেশ দেরি হয়ে গেছে। একটা নির্জন রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে শুভ্র। এলাকায় নতুন। রাস্তাঘাট তেমন চেনে না। তবে সমস্যা নেই গ্রামে ঢুকতে একটাই রাস্তা। স্কুল কলেজ সবই শহরে ছিল বলে শুভ্র সব সময়ই শহুরে যান্ত্রিক জীবন থেকে পালাতে চেয়েছে। নতুন ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর ওর সহপাঠীরা শহরের দিকে থাকলেও ও বেছে নিয়েছে গ্রামের দিকটা। শীতের সন্ধ্যা, উত্তরের হিমেল হাওয়া মাঝে মাঝেই শীতল হাতের স্পর্শের অনুভূতি দিয়ে যাচ্ছে। পূর্ব দিগন্তে একটা উজ্জ্বল চাঁদ। রাস্তার দুপাশে বিস্তৃত সরিষা ক্ষেত। সরিষার হলুদ ফুলগুলোর সাথে হালকা কুয়াশার আলিঙ্গন সবমিলিয়ে চমৎকার একটা পরিবেশ। শুভ্র আনমনে হেঁটে চলেছে আর উপভোগ করছে সৃষ্টির অপরুপ সৌন্দর্য। হঠাৎ রাস্তার মধ্যে পরে থাকা একটা শক্ত কিছুর সাথে ধাক্কা লেগে পরে যায় শুভ্র। উঠে দাড়ায়। ঠিক একমুহূর্ত আগের পরিবেশের সাথে এখন বিস্তর তফাৎ । চারদিকে যেন সীমাহীন ঘোলাটে দৃশ্য। চশমাটা পরে নেয়। হুম এখন সব ঠিকঠাক। মায়ের কথা মনে পরে যায় শুভ্রের। ওর বইয়ের নেশায় ডুবে থাকাটা কোন দিনই সমর্থন করেন নি এই ভদ্র মহিলা। আর এদিকে দুবেলা খাবার না দিয়ে একখানা ভাল লেখকের বই দিয়ে বসিয়ে দিলে মানুষের যে খাদ্যের একটা মৌলিক চাহিদা আছে ও হয়তো ভুলে যাবে। একটা সময় মায়ের বই পড়া নিয়ে এতো অভিযোগ দেখে  বিরক্ত লাগতো। কিন্তু এখন সে বুঝতে পারে মায়ের এই আপত্তিটা অযৌক্তিক ছিল না। কারন এখন ভারি লেন্সের চশমা নিত্যদিনের সঙ্গী। ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে যায় শুভ্রের। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় প্রচুর মাথা ব্যথা হতো। মাথা থেকে ক্রমশো ছড়িয়ে পড়ত চোখে। মায়ের সাথে যখন চোখের ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল তখন ভেবেছিল ডাক্তার আঙ্কেল হয়তো ওকে চশমা দিবেন। মনে মনে বেশ খুশি হয়েছিল। কারন ছোট থেকেই চশমা পড়ার খুব শখ। কিন্তু মানুষের অপ্রত্যাশিত প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায়তো না শুভ্র। হয়তো কেউ জিজ্ঞেস করবে তোমার চশমায় কি পাওয়ার আছে? তবে যাক এবার হয়তো একটা বাহানা পাবে। কিন্তু শুভ্রের ভালোলাগাটা স্থায়ী হলো না । কারন ডাক্তার আঙ্কেল তাকে চশমাটা দেয় নি। খুব মন খারাপ হয়েছিল সেবার। এসব ভেবে হাসি পায় ওর। এখন তার চাওয়াটা পূর্ণ হয়েছে কিন্তু এখন চশমাটা কেবলই অভিশাপ মনে হয়। এসব ভাবতে ভাবতে হেটে চলছে।  রাস্তার পাশে একতলা বাড়িটা চোখে পড়ল। বাড়িটা থেকে পাঁচ মিনিট হাটলেই শুভ্রের গন্তব্য স্থল। বাড়িটার সামনে ছোট্ট একটা ফুল বাগান। একপাশে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ। গাছটা ঢেকে দিয়েছে উঠোনটা। উঠোনটার আরেক কোণে একটা কাঠগোলাপ গাছ সব মিলিয়ে বেশ সাজানো গোছানো। বসন্তে এই বাড়িটা কেমন দেখাবে এই নিয়ে ভাবনার শেষ নেই শুভ্রের। বাড়ির কাছাকাছি আসতেই একটা মেয়েলি কন্ঠস্বর ভেসে এল--- "একটু সাবধানে চলতে পার না। ব্যথা কি খুব পেয়েছো?" মনে হলো বাসার ছাদ কন্ঠটা ভেসে এসেছে। সেদিকে তাকালো।  ছাদে একটা মেয়ে দাড়িয়ে। মুখটা ওড়না দিয়ে ঢাকা। মেয়েটি নীরবতা ভেঙে আবার বলল, " আমি ইশতি। তোমাদের ডিপার্টমেন্টের।" শুভ্র এখনও চিনতে পারে নি কোন মেয়েটা কিন্তু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। কারন শুভ্র চিনতে পারছে না বলে হয়তো মেয়েটা বিব্রতবোধ করবে।

---শুভ্র তুমি কিন্তু অনেক ভাল কবিতা আবৃত করো। ঐদিন ডিপার্টমেন্টের অনুষ্ঠানে তোমার কবিতা আবৃতিটা দারুণ ছিল।

---ধন্যবাদ। ইশতি আমি তাহলে আসি আজকে এমনিতেই বাসায় ফিরতে দেরি হয়ে গেছে।

---- আচ্ছা এসো...।

চোখের তারায় [Completed√]Where stories live. Discover now