বাঙালির উন্নয়ন দর্শন

3 1 0
                                    

কবি লিখেছেন,
"এমন দেশটি কোথাও খুঁজে
পাবে নাকো তুমি, 
সকল দেশের রানী সে যে
আমার জন্মভুমি। "

সকালে ঘুম থেকে উঠে  দেখবেন কলে পানি নাই, চা চুলায় দিলে দেখবেন গ্যাসও  নাই, দিন যত গড়াবে  দশ থেকে বারো বার লোডশেডিং প্রত্যক্ষ করবেন। শুক্র ও শনিবার পিডিবি উন্নয়নের মহাযুদ্ধ শুরু করবে, তাই ওই দুদিন সারাদিন ই বিদ্যুৎ "নাই"  হয়ে থাকবে।  রাস্তার ধারের কার্যকর, ভালো পিলারসমুহ  উঠিয়ে সিমেন্ট নির্মিত পিলার লাগানোর মহাযজ্ঞ চলছে দেখবেন।
দুদিন পর দেখা যাবে সিমেন্টের পিলারগুলো যা তা ভাবে লাগানো হয়েছে,  কোনটা উত্তরে,  ত কোনটা দক্ষিণে হেলে আছে। ঝড় আসলে কোনদিকে পড়বে, সবাই দেখছি সে হিসাব কষছে। নিজের বাড়ীর উপর না পড়লেই বাঙালী মহাখুশি মনে হলো। উন্নয়নের ষোলকলা পুরন হবে ঠিকাদার, প্রকৌশলী ও মন্ত্রীর পকেট উপচে।

কোন কোন ব্যাংক নাকি ভুয়া খেলাপী ঋণে দেউলিয়াগ্রস্থ।   ব্যাংকের টাকার নিরাপত্তা নাই। বাধ্য হয়ে সরকার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে ব্যাংক বাচাতে।

আপনার বাচ্চাদের স্কুলে কে দিয়ে আসবে? আপনি বা আপনজনকে ই দিয়ে আসতে আবার নিয়েও আসতে হবে। বেশিরভাগ স্কুলকলেজ এর যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। একা আপনার শিশু বা কিশোরী স্কুলে যাবে, এটা এদেশে কল্পনাতীত। ফলে ব্যস্ত পিতা মাতার মুল্যবান সময় নষ্ট করেই দেশ এগিয়ে চলেছে।?

রাস্তাঘাটে  নিরাপত্তা নাই। ফুটপাত নাই।  শিশুদের খেলার মাঠও  নাই। শহরাঞ্চলের শিশুরা বারান্দার বেলকনিতে ফার্মের মুরগীর মতো বড় হচ্ছে। গলির রাস্তাগুলো বস্তীর ছেলেদের দখলে,  সেখানে তারা জমিয়ে খেলছে। তাদের সাথে ভদ্রলোকের বাচ্চাদের মেলামেশায় এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরী করা আছে।

এদেশে এখন টাকা ছাড়া চাকরী নাই। চাকরীর জন্য যুবক যুবতী বই কিনে পড়ছে,  কোচিং ও করছে। সরকারি চাকরীতে  পরীক্ষার ফী ও শ খানেক সত্যায়িত কাগজ জমা দিয়ে যে কষ্টকর পরীক্ষা দিচ্ছে,  তা সম্পুর্ন নাটক। আগেই নির্ধারিত হয়ে গেছে কারা চাকরী পাবে। ফলাফল দেখেই বোধদয় হয়, যখন কম মেধাবীর প্রার্থী চাকরী নামক সোনার হরিণটা পেয়ে যায়।  প্রাইভেট চাকরীতে ও বেতন নাই, অনেক প্রাইভেট চাকরীর নিয়োগপত্র ও নেই। যেদিন বলবে বিদায় হও, সেদিন ই বিদায় হবেন আর না হলে দেখবেন কোম্পানি অনেকের বেতন ও বিনিয়োগ মেরে দিয়ে নিজেরা বিদায় নিয়েছে ।
নতুন কর্মসংস্থানও প্রায় শুন্য।

কবি যখন এই কবিতা লেখেন, তখন ছিলো অবিভক্ত বাংলা।  শুধু বর্তমান বাংলাদেশ নিয়ে এমন কবিতা লেখার দুঃসাহস হিরো আলম বা নির্মলেন্দু গুন ছাড়া কেউই করবে না।

বাঙালির অভিলাষ ও নামের মাহাত্ম্য Where stories live. Discover now